মুহাররমের যে সব আমলে এক বছরের গোনাহ মাফ হয়

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ হিজরি বছরের প্রথম মাস হল মুহাররম। মুহাররম সম্মানিত চারটি মাসের অন্যতম। এই মাসকে আল্লাহ তায়ালা ‘শাহরুল্লাহ’ বা আল্লাহর মাস বলে বিশেষ সম্মান দান করেছেন।

সব মাসই তো আল্লাহ তায়ালার মাস। কিন্তু তারপরও এই মাস আল্লাহ তায়ালা নিজের দিকে সম্পৃক্ত করে এই মাসের বিশেষ ফজিলতের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। হাদিস শরিফে এই মাসের অনেক ফজিলত উল্লেখ করা হয়েছে। মুহাররম মাসে নফল রোজাসহ বিভিন্ন আমলের কথা হাদিসে পাওয়া যায়।

প্রথম আমল: এই মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা। হাদিস শরিফে মুহাররম মাসের রোজাকে রমজানের পর সবচেয়ে উত্তম রোজা আখ্যায়িত করা হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, রমজানের পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হল আল্লাহর মাসের রোজা, যে মাসকে তোমরা মুহাররম নামে চেন। আর ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হল রাতের নামাজ। (সহিহ মুসলিম, হাদীস ১১৬৩)

মুহাররম মাস পুরোটাই নফল রোজা রাখার মাস। এই মাসে যার যে দিন ইচ্ছা নফল রোজা রাখতে পারেন। তবে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার ও চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। সেই হিসেবে এই মাসের এই দিনগুলোতে রোজা রেখে যেতে পারে।

দ্বিতীয় আমল: এই মাসে বেশি বেশি তাওবা করা। কারণ এই মাসটি তাওবা কবুলের ইতিহাস জড়িত একটি মাস। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জিজ্ঞেস করল,আল্লাহর রাসূল! রমজানের পর আপনি আমাকে কোন্ মাসে রোজা রাখার নির্দেশ দেন?

উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-তুমি যদি রমজানের পর আরও কোনো মাসে রোজা রাখতে চাও তাহলে মুহাররমে রোজা রাখ। কেননা সেটি আল্লাহর মাস। সেই মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা অনেকের তাওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও সেদিন আরও মানুষের তাওবা কবুল করবেন। (জামে তিরমিজি, হাদীস ৭৫১)

এই হাদিসে যেই দিনের দিকে ইশারা করা হয়েছে খুব সম্ভব সেটি আশুরার দিন। তবে বান্দার উচিত বছরের সব দিনেই তাওবা ইসতিগফারের প্রতি গুরুত্ব দেয়া। বিশেষ করে এই মাসের প্রতিটি দিনেই তাওবা ইসতিগফারের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া। আর আশুরার দিন অনেক বেশি ইসতিগফার করবে।

তৃতীয় আমল: এই মাসের ১০ তারিখে রোজা রাখা। মুহাররমের দশ তারিখকে আশুরা বলা হয়। আশুরার দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা মুকাররমায় ছিলেন তখনও আশুরার দিন রোজা রাখতেন। এরপর যখন মদিনা মুনাওয়ারায় গেলেন তখন নিজেও রোজা রাখতেন অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন।

তাছাড়া রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে এই রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হয়ে যাওয়ায় আশুরার রোজা নফল হয়ে গেল। তবে সাধারণ নফল রোজার চেয়ে এর গুরুত্ব বেশি। হজরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আশুরার রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- আল্লাহর কাছে আমার আশা, তিনি এই রোজার মাধ্যমে বিগত এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দিবেন। (সহিহ মুসলিম, হাদীস ১১৬২, জামে তিরমিজি, হাদীস ৭৫২)

আশুরার দশ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখ বা ১১ তারিখ যোগ করে রোজা রাখতে পারলে আরও বেশি ভালো হয়। কেননা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,আমি আগামী বছর জীবিত থাকলে দশ তারিখের রোজার সঙ্গে একদিন বাড়িয়ে রোজা রাখব।

এই দিন রোজা রাখার ব্যাপারে বুখারি শরিফের ১৮৬৫ নং হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় এলেন তখন দেখলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখে। তখন তিনি বললেন: কেন তোমরা রোজা রাখ? তারা বলল: এটি উত্তম দিন। এদিনে আল্লাহ বনি ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর হাত থেকে মুক্ত করেছেন; তাই মুসা আলাইহিস সালাম এ দিনে রোজা রাখতেন।

তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমাদের চেয়ে আমি মুসার অধিক নিকটবর্তী। ফলে তিনি এ দিন রোজা রাখলেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।’

কিন্তু আমাদের অনেক ভাই আশুরার সঙ্গে কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনাকে একাকার করে ফেলে। তাদের ধারণা কারবালার ময়দানে মুহাররমের ১০ তারিখে হজরত হুসাইন (রা.) শাহাদাতবরণ করার কারণেই এই রোজা রাখার বিধান এসেছে। আসলে আশুরার রোজার সঙ্গে কারবালার কোনো সম্পর্ক নেই। কেননা কারবালার ইতিহাস ঘটেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইনতিকালের প্রায় ৫০ বছর পর ৬১ হিজরীর ১০ মুহাররমে।

হজরত হুসাইন (রা.)-এর মর্মান্তিক শাহাদাত নিঃসন্দেহে তার উঁচু মাকাম ও উচ্চমর্যাদার বিষয়। আমাদের জন্য অত্যন্ত এক হৃদয়বিদারক ট্রাজেডি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, আশুরা শুধু কারবালার সঙ্গেই সম্পৃক্ত।

লেখক: সহকারী মুফতি, জামিয়া রহমানিয়া সওতুল হেরা, টঙ্গী, গাজীপুর।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর