বাঙালী কন্ঠঃ মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য অসংখ্য নিয়ামত দিয়ে রেখেছেন। যার হিসাব খুঁজে বের করা দুষ্কর। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ সেই নিয়ামতগুলোর নাশোকরিই করে ফেলে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতগুলোর অপব্যবহার করা হয়। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এমন দুটি নিয়ামত আছে, যে নিয়ামতের বিষয়ে মানুষ ধোঁকার মধ্যে থাকে। তা হচ্ছে, সুস্থতা আর অবসর।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪১২)
সাধারণত এই মহা মূল্যবান দুটি নিয়ামত একসঙ্গে পাওয়া যায় না। অনেক মানুষ সুস্থ, কিন্তু তার অবসর নেই। আবার অনেকে অবসর, কিন্তু তিনি সুস্থ নন। কিন্তু কারো ভাগ্যে যদি উভয় নিয়ামতই একসঙ্গে মিলে যায় তবে এর প্রকৃত মূল্যায়ন খুব কম মানুষই করে থাকে; বরং অযথা কাজকর্মে এ দুই নিয়ামত নষ্ট হয়ে যায়।
আল্লামা আফেন্দি (রহ.) সুন্দর বলেছেন, ‘প্রত্যেক আদমসন্তানের কোনো না কোনো কাম্যবস্তু থাকে। আমার কাম্যবস্তু হলো সুস্থতা ও অবসর। যাতে আমি ইসলামী জ্ঞানের এমন এক পর্যায়ে পৌঁছতে পারি, যা জান্নাতে পৌঁছার জন্য যথেষ্ট হয়। আর এ বিষয়েই তো জ্ঞানীদের প্রতিযোগিতা করা উচিত। ধোঁকার দুনিয়ায় আমাদের জন্য প্রয়োজন পরিমাণ রিজিকই যথেষ্ট। চূড়ান্ত সফলতা তো চিরস্থায়ী নিয়ামতের মাঝে, যেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করা যায় এবং সুমিষ্ট পানীয় পান করা যায়।’
কিন্তু আমরা কেউ এই মহা মূলবান নিয়ামতদ্বয় একসঙ্গে পেয়ে গেলেও তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত কাজে ব্যয় করি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়।
টিভি দেখে
অনেকে নিজেদের অবসর সময়গুলোকে টিভি দেখে কাটাতে পছন্দ করে। তারা সারাক্ষণ বিভিন্ন মিউজিক চ্যানেল কিংবা মুভি দেখে সময় কাটাতে ভালোবাসে। এতে করে আল্লাহর প্রদত্ত নিয়ামতে নাশোকরি হয়, অন্যদিকে নিজের সময় নষ্ট হয়, শারীরিক ক্ষতি হয়। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, এটি মানুষের ধ্বংসের কারণ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার ওপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমণীদের গান বাজতে থাকবে।’ আল্লাহ তাআলা তাদের জমিনে ধসিয়ে দেবেন এবং তাদের কিছু লোককে বানর ও শূকরে রূপান্তরিত করবেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০২০)
গিবত ও পরনিন্দা
অনেকে আবার অবসর সময়ে প্রচুর পরিমাণে পরনিন্দার মধ্যে ডুবে থাকি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, আজকাল মসজিদের মতো পবিত্র জায়গায় বসেও মানুষ অন্যের গিবতে লিপ্ত হয়ে যায়। যা জঘন্য অপরাধ। অথচ গিবত (পরনিন্দা) ও অপরের দোষচর্চা নিকৃষ্টতম অভ্যাস। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘পেছনে ও সামনে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ-ধ্বংস।’ (সুরা হুমাজাহ, আয়াত : ০১)
স্মার্টফোন
বর্তমানে স্মার্টফোন মানুষের অবসরের সঙ্গী। সুযোগ পেলেই মানুষের চোখ আটকে যায় স্মার্টফোনে। মনের অজান্তেই মানুষ কিছুক্ষণ পর পর স্মার্টফোন চেক করে। এই আকর্ষণের আগুনকে আরো প্রজ্বলিত করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাপগুলো। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়াচ্ছে যে আমরা যারা স্মার্টফোন নির্ভর হয়ে পড়েছি, তারা স্মার্টফোন ছাড়া হয়তো কয়েক দিন থাকতে পারব না। এ যেন এক ডিজিটাল মাদক। স্মার্টফোনের মাধ্যমে কোনো হারাম জিনিস দেখলে বা শুনলে যে তা মারাত্মক গুনাহ, তা আমরা সবাই জানি।
কিন্তু স্মার্টফোনে হারাম কিছু না দেখলেও এর দ্বারা প্রচুর সময় নষ্ট হয়। অথচ কিয়ামতের দিন মানুষকে প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব দিতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, কিয়ামতের দিন আদম সন্তানকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এক কদমও স্ব স্থান থেকে নড়তে দেওয়া হবে না। ১. তার জীবনকাল কিভাবে অতিবাহিত করেছে, ২. যৌবনের সময়টা কিভাবে ব্যয় করেছে, ৩. ধন-সম্পদ কিভাবে উপার্জন করেছে, ৪. তা কিভাবে ব্যয় করেছে, ৫. সে দ্বিনের যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে সেই অনুযায়ী আমল করেছে কি না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৬)
তাই প্রয়োজনের তাগিদে স্মার্টফোন ব্যবহার করলেও এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন, যেন তা আমাদের উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর সম্মুখীন না করতে পারে।
সুসময় আল্লাহর অনেক বড় নিয়ামত। আমাদের সবার উচিত তার যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করা। সার্বক্ষণিক আল্লাহকে স্মরণ করা। আল্লাহর দেওয়া সময় ও সুস্থতাকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে ব্যয় করা। তবেই তো আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত সোনালি মুহূর্তে রূপান্তরিত হবে।