নিজের ইসলাম গ্রহণের গল্প জানালেন সাবেক পপ তারকা ও বিখ্যাত ইউটিউবার জে কিম

জনপ্রিয় ইউটিউবার ও সাবেক পপ তারকা জে কিম ইসলাম গ্রহণের পর সম্প্রতি নিজেই জানালেন তার আলোর পথে আসার গল্প। নিজের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল এবং ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও দিয়ে ইসলাম গ্রহণের কথা নিশ্চিত করেন। তার অ্যাকাউন্টে প্রচারিত ভিডিওতে তাকে সিউলের একটি মসজিদের মিম্বরের সামনে কালেমা শাহাদাত পাঠ করতে দেখা যায়। ওই ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘অনেকেই জানতে চান আমি মুসলিম হয়েছি কি না। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, আমি আল্লাহতে বিশ্বাস করি এবং মুহাম্মদ (সা.) কে আল্লাহর প্রেরিত রাসুল হিসেবে মানি। আজ আমি বলতে চাই, আমি কেন আল্লাহতে বিশ্বাস করি।’
‘আমি মূলত ক্যাথলিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করি। সে সুবাদে আমার নাম ছিল ডেভিড। ইসলামের একজন নবীর নামও রয়েছে দাউদ। কিন্তু আমি ক্যাথলিক জীবন একদমই পছন্দ করতাম না। আমার কাছে মনে হতো ধর্ম আসলে আমার জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু নয়। তবে আমি যখন উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ি, তখন আমি আর্থ সায়েন্স পড়ছিলাম। পৃথিবী কীভাবে তৈরি হলো, বায়ু কীভাবে তৈরি হলো, আকাশ কীভাবে তৈরি হলো, সাগর কীভাবে তৈরি হলো ইত্যাদি সম্পর্কে জানছিলাম। তখন আমি অবাক হতাম যে, কেন এসব তৈরি করা হয়েছে? কে এসব তৈরি করেছে? এসবের উৎস কী আসলে? কিন্তু আমাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসবের উত্তর শেখানো হতো না। আমি মনে করতাম যে, নিশ্চয়ই কোনো কারণে কেউ এসব সৃষ্টি করেছে, যাকে কেউ সৃষ্টি করেনি। আমি ধরেই নিয়েছিলাম, কোনো মহাশক্তি আছে যে এসব নিয়ন্ত্রণ করে। আপনারা জানেন, বিজ্ঞান সবকিছুর ব্যাখ্যা দিতে পারে না। তাই কিছু না কিছুতে বিশ্বাস করতে হয়। ফলে আমিও বিশ্বাস করতাম; কিন্তু ক্যাথলিকদের মতো করে নয়। কারণ, আমি এটা মানতে পারতাম না যে, একজন মানুষ কখনও ঈশ্বর হতে পারে। সেই সঙ্গে এটাও আমার কাছে অস্বাভাবিক লাগত, আদমের কারণে জন্ম থেকেই একজন মানুষ পাপী হতে পারে। এর কিছুকাল পরে কিছু মুসলিমের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ফলে আমার অনেক ধারণা বদলে যায়। মিডিয়ার কারণে ইসলামের প্রতি আমার খুব বাজে ধারণা ছিল। কিন্তু তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ফলে তাদের জীবনব্যবস্থা, আচার-ব্যবহার সব কিছু আমাকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করে। আমরা সবাই এসব জানি; কিন্তু মানি না। তবে মুসলমানরা মানে। পরে আমি জানতে পারলাম, তারা আল্লাহতে বিশ্বাস করে। এ জন্য আমি আল্লাহ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। কোথা থেকে এলাম আমি? কেন এলাম? এসব প্রশ্নের উত্তরই আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। তিনি শিখিয়েছেন এ সংক্ষিপ্ত জীবনে আমাদের কী করা উচিত। ক্যাথলিসিজমের অনেক কিছু আমার জন্য বোঝা কঠিন ছিল। কিন্তু কোরআনে সবকিছু ছিল পরিষ্কার। আল্লাহ একমাত্র স্রষ্টা। যদি আমি কোনো ভুল করি তার জন্য আমি একাই দায়ী। এরকম সুন্দর সুন্দর ধারণা।
কোরআনে জীবন পরিচালনার সবই উল্লেখ আছে। আর মুহাম্মদ (সা.) সেগুলো অনুশীলন করে দেখিয়েছেন। তিনি শিখিয়েছেন কীভাবে জীবন পরিচালনা করতে হয়, কীভাবে পরকালের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। যদি আমরা তার নির্দেশনা মেনে জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করি তাহলে তিনি আমাদের মহাপুরস্কার দেবেন। যারা আল্লাহতে বিশ্বাস করে তারা সত্যিই সুখী মানুষ। তারা প্রাণবন্তভাবে জীবনযাপন করে।
হ্যাঁ, এ জন্যই আমি আল্লাহতে বিশ্বাস করি। অনেকেই আমার এ সিদ্ধান্তে প্রশংসা করেছেন। কেউ কেউ বাজে মন্তব্যও করেছেন, আমি যেন ইসলাম সম্পর্কে কিছু না বলি। হ্যাঁ আপনি আমাকে অপবাদ দিতেই পারেন। কারণ, সম্পূর্ণ নির্ভুল নই। আমি অন্যায় করি। জীবনে অনেক পাপ করেছি আমি। আর আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। তিনি আমাকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। আমি পাপের জন্য অনুশোচনা করে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে চাই। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ আমাকে সমর্থন করার জন্য।’
ইসলামি সংস্কৃতি সম্পর্কে ইতিবাচক তথ্য প্রচারের ফলে কিমের অসংখ্য নেটিজেন ভক্ত রয়েছে। এরই মধ্যে তার ইউটিউব সাবসক্রাইবার সংখ্যাও পাঁচ লক্ষাধিক। ইসলাম গ্রহণের আগেই ইসলাম নিয়ে বেশ কিছু ভিডিও করতে দেখা গেছে তাকে। ‘ঈদ ইন কোরিয়া’, ‘ইজ মিউজিক হারাম’ ইত্যাদি শিরোনামে তার চ্যানেলে কিছু ভিডিও রয়েছে যেগুলো তিনি ইসলাম গ্রহণ করার আগেই তৈরি করেছিলেন।
জে কিম একজন কোরিয়ান গায়ক এবং গীতিকার হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। বিখ্যাত ইউটিউবার মানিয়ার বক্তব্য অনুযায়ী, কিম কোনো অ্যালবাম প্রকাশ না করলেও ‘মিডিয়া ব্রিজ এন্টারটেইনমেন্ট’ এর আন্ডারে দুটি এপি (এক্সটেন্ডেড প্লে) করেছিলেন। এটি করার ফলেই তিনি হয়ে যান প্রথম কোরিয়ান পপ তারকা, যিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন।
জে কিমের এ সিদ্ধান্তে ভক্তকুল প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তার ইসলাম গ্রহণের ভিডিওটি এরই মধ্যে দুই মিলিয়নের বেশিবার দেখা হয়েছে। অসংখ্য মানুষ তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে এ উপলক্ষে। কিমের ইসলাম গ্রহণ করার ফলে শুধু কোরিয়াতেই নয়, বরং বিশ্বব্যাপী মুসলিমরা অনুপ্রাণিত।
নিজের ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে জে কিম তার প্রথম ভিডিওতে বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম! আমি আসলে ধীরে ধীরে ইসলামের প্রতি আগ্রহী হয়েছি। আমার জীবনের অনেক কিছু বদলে গেছে। যদিও আমি এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নই, তবে আমি একজন ভালো মুসলিম হওয়ার চেষ্টা করব। জীবনে অনেক পাপ করেছি। আমি আমার পাপের জন্য অনুশোচনা করে আল্লাহর সামনে দাড়াতে চাই।’
কিম আরও বলেন, ‘যদিও আমি জন্মসূত্রে মুসলিম নই। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহ আমার সঙ্গে সবসময় ছিলেন, আছেন। আমি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যে, তিনি আমাকে এটা বোঝার তৌফিক দান করেছেন এবং আমাকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসুল।’
জে কিমের প্রকৃত নাম কিম জে হ্যান। তবে জে কিম নামেই তিনি অধিক পরিচিত ছিলেন। আর ইসলাম গ্রহণ করার ফলে এখন তার নাম দাউদ কিম।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর