ক্ষমতাসীন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি পদে এত মধু

বাঙ্গালী কন্ঠ ডেস্কঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদ বড় না যুবলীগের সভাপতি পদ? আর সম্মানের দিক থেকে কোনটি বেশি সম্মানের? ২৩ নভেম্বর যুবলীগের জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ঘোষণা দিয়েছেন, তাকে যুবলীগের সভাপতি করা হলে ভিসির চাকরি ছেড়ে দেবেন। সঙ্গত কারণে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি’ বনাম ‘যুবলীগের সভাপতি’ পদ দু’টির কোনটির দাম-মর্যাদা-সম্মান এবং লাভজনক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বর্তমানে দেশের সবচেয়ে আলোচিত সংগঠনের নাম যুবলীগ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন যুবলীগের সিনিয়র কয়েকজন নেতা ক্যাসিনো এবং চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ইত্যাদি কারণে গ্রেফতার হওয়ার পর আলোচনায় আসে সংগঠনটির নাম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংগঠনটির মধ্য সারির নেতাদের গ্রেফতারের সময় তাদের বাসা ও অফিস থেকে যে পরিমাণ অর্থ ও স্বর্ণ এবং অন্যান্য দ্রব্য উদ্ধার করেন তাতে সংগঠনটির খবর দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশি মিডিয়ায় শিরোনাম হয়েছে। সংগঠনটির কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আবার সংগঠনটির সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী ও সহ-সভাপতি নূরুন্নবী সাওন এমপির ওপর বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা এবং তাদের ব্যাংক হিসেবে তদন্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আগামীকাল (রোববার) সংগঠনটির নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন। অথচ সংগঠনটির সভাপতি ও সহ-সভাপতিকে গণভবনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যুবলীগ নিয়ে গণভবনে বৈঠক ডেকেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে যুবলীগের নের্তৃত্বের বয়সসীমা নিয়ে আলেচনা হতে পারে। সংগঠনটির কয়েকজন নেতা ইতোমধ্যেই যুবলীগের বর্তমান সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছেন।

ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন যুবলীগের যখন এই অবস্থা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদ থেকে সংগঠনটির সভাপতি পদের দায়িত্ব গ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘যুবলীগের সভাপতি পদ পেলে ভিসি পদ ছাড়তে রাজি আছি।’
অধ্যাপক মীজানুর রহমান যুবলীগের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি জানিয়েছেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার পর তিনি যুবলীগের কোনো বৈঠকে যাননি। এক বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোকে তিনি এই আকাক্সক্ষার কথা তুলে ধরেন।
গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় ওই টকশো প্রচারিত হয়। শুক্রবার তিনি নিজের ফেসবুকে ওই টকশোর ভিডিও শেয়ার করেন।

ওই টকশোতে যুবলীগ নিয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘আমাকে যদি বলা হয়, আপনি যুবলীগের দায়িত্ব নিতে পারবেন কি না? তবে আমি সঙ্গে সঙ্গে উপাচার্যের চাকরি চেড়ে দেবো এবং যুবলীগের দায়িত্ব নেব। ভিসি আরো বলেন, আমি ভিসি হওয়ার পর আর কোনো (যুবলীগের) মিটিংয়ে যাই না। তবে যদি আমাকে এখনো বলা হয় যুবলীগের দায়িত্ব নিতে তাহলে অমি নেব। আমাকে যদি বলা হয় আপনি যুবলীগের দায়িত্ব নিতে পারবেন কি না? তবে আমি সঙ্গে সঙ্গে ভিসি পদ বা চাকরি ছেড়ে দিয়ে যুবলীগের দায়িত্ব নেব। কারণ, এটা এত ভালোবাসার এক সংগঠন, আমি ভিসির পদ ছেড়ে দিতে রাজি আছি।

উল্লেখ্য, অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদে চাকরি করতেন। অতঃপর তিনি দলীয় বিবেচনায় ২০১৩ সালের ২০ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি হিসেবে যোগ দেন। অধ্যাপক মীজানুর রহমানের যুবলীগের সভাপতি হতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদ থেড়ে দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্নজন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদ বেশি সম্মানের নাকি যুবলীগের সভাপতি পদ? কেউ জানতে চেয়েছেন, যুবলীগের সভাপতি পদে কী মধু রয়েছে যে, ড. মীজান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির মতো মর্যাদাপূর্ণ পদ ছেড়ে দিয়ে যুবলীগের সভাপতি হতে চাচ্ছেন?

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর