হীরার খোঁজে আফ্রিকায় চোখ রাশিয়ার

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক বহুদিনের। ঐতিহ্যগতভাবে এই বাণিজ্য প্রধানত অস্ত্র বিক্রি ও খাদ্যশস্য রফতানিকে কেন্দ্র করেই। কিন্তু আফ্রিকা নিয়ে নতুন করে ভাবছে মস্কো।

প্রথাগত বাণিজ্য থেকে বের হয়ে এবার মহাদেশটির তেল-গ্যাস থেকে শুরু করে হীরা-সোনা, পরমাণু বিদ্যুৎ ও শিক্ষা- সব খাতেই নজর দিচ্ছে।

ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমা দেশগুলো আফ্রিকান অর্থনীতিতে অনেক আগে থেকেই জড়িয়ে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে চীন এই মহাদেশের বৃহত্ত ম ব্যবসায়িক খেলোয়াড় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই মাঠে রাশিয়ার প্রবেশ একটু দেরিতেই হচ্ছে।

এএফপি জানিয়েছে, যা দেরি হওয়ার হয়েছে আর বিলম্ব করতে চান না রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কৃষ্ণসাগর পাড়ের সোচিতে আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবারই আফ্রিকান নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন তিনি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মস্কো আফ্রিকার ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে তার প্রসার বাড়ানোর লক্ষ্যে রয়েছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর এই প্রথম আফ্রিকার সঙ্গে এতবড় সম্মেলন করতে যাচ্ছে রাশিয়া। আসলে পাঁচ বছরের পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে পড়ায় রাশিয়া নতুন ব্যবসায়িক অংশীদার খুঁজে পেতে উদগ্রীব।

ফরাসি ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক আরনাওদ কালিকা বলেন, রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ যা চায়নি তা হল এই বাজারটি তাদের ছাড়াই চলুক। এটি তাদের জন্য অগ্রহণযোগ্য। বর্তমানে আফ্রিকায় রাশিয়ার বাণিজ্যের আকার খুব বেশি বড় নয়।

২০১৮ সালে আফ্রিকার সঙ্গে রাশিয়ার ২০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। যা ফ্রান্সের চেয়ে অর্ধেক এবং চীনের ১০ ভাগের ১ ভাগ। তবে আফ্রিকার সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্য বাড়ছে। গত তিন বছরে আফ্রিকায় রাশিয়ার রফতানি দ্বিগুণ হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি রফতানি হয়েছে শস্য ও অস্ত্র। বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অস্ত্র রফতানিকারক দেশটির ১৫ শতাংশই যাচ্ছে আফ্রিকায়।

রাশিয়ান সংস্থাগুলো ঘানা ও নাইজেরিয়ায় তেল উত্তোলনের কাজে যুক্ত। এ ছাড়া অ্যাঙ্গোলায় হীরা এবং পুরো আফ্রিকায় নিকেল উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত রাশিয়া। আফ্রিকায় রাশিয়ার বাণিজ্যের ৮০ শতাংশই হয় উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে। অস্ত্র, তেল ও গ্যাস খাতে রাশিয়ার দক্ষতা চীনের দক্ষতার চেয়ে বেশি।

গ্যাজপ্রম, রোসনেপ্ট ও লুকোলির মতো বড় বড় রাষ্ট্রীয় জ্বালানি কোম্পানির কার্যক্রম প্রসারিত হচ্ছে। আধুনিক রাশিয়া গড়ে তোলার স্বপ্নে ২০০৬ সালে প্রথম আফ্রিকার দিকে নজর দেন পুতিন। সোভিয়েত যুগের ঋণ পরিশোধের বিনিময়ে একটি অস্ত্র চুক্তি করেন আলজেরিয়ার সঙ্গে।

বর্তমানে আফ্রিকাতে রাশিয়ার অস্ত্র বিক্রির ৮০ শতাংশই হয় আলজেরিয়াতে। একই কাজ লিবিয়ার সঙ্গেও করেন পুতিন। ২০০৮ সালে ঋণের মওকুফের বিনিময়ে দেশটির সঙ্গে রেল চুক্তি করেন তিনি। অবশ্য ২০১১ সালে তা স্থগিত হয়।

কিন্তু ঘানা, নাইজেরিয়া, ক্যামেরন ও মিসরে কার্যক্রম চলছে। বেশ কয়েকটি তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে লুকোলি। মিসরের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক বেশ ইতিবাচক।

২০১৩ সালে মিসরে প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ক্ষমতায় আসার পর সোভিয়েত যুগে রাশিয়ার কৌশলগত অংশীদারিত্ব পুনরুদ্ধার করেন।

কায়রো ও মস্কো অস্ত্র বিক্রি এবং পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বেশ কয়েকটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। মিসর ছাড়াও পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য মস্কো প্রাথমিকভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে নাইজেরিয়া, কেনিয়া, ঘানা, জাম্বিয়া ও উগান্ডার সঙ্গে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর