গ্রেফতার আতঙ্কে কাউন্সিলররা

একের পর এক বেড়িয়ে আসছে ঢাকা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কাউন্সিলদের অপকর্ম। ক্যাসিনো, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অপকর্মের কারণে আলোচনায় এসেছেন প্রায় বিশ জন কাউন্সিলর। তারা এখন গ্রেফতার আতঙ্গে রয়েছেন। গত শনিবার রাতে গ্রেফতার হয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটির ৩৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব; এর আগে গ্রেফতার হয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটির ৩২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান।
এছাড়া গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন, ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আনিসুর রহমান, ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আশ্রাফুজ্জামান, ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী একেএম মমিনুল হক সাঈদ, ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ রতন, ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. তরিকুল ইসলাম সজীব, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হাসান (পিল্লু) ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কাউন্সিলররা হলেন, সাত নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবাশ্বের হোসেন চৌধুরী, ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ওরফে ইরান। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে কালো তালিকায় আরো যুক্ত হয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক, ঢাকা উত্তর সিটির ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খান, ৪৪ ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম শফিক, ৪৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈম।
অবৈধভাবে সম্পকের পাহাড় গড়ে তুলেছেন এই কাউন্সিলররা। তাদের সম্পদের হিসেব ও নানা অপকর্মের বিস্তারিত তথ্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন গোয়েন্দারা। গ্রেফতারের তালিকাতেও নাম রয়েছে তাদের। যেকোন সময় গ্রেফতার হতে পারেন এসব কাউন্সিলররা। তাই আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কাউন্সিলর হাসিবুর রহমানের মানিকের বিরুদ্ধে দখলবাজি, চাঁদাবাজি, ফুটপাত দখলসহ অসংখ্য অভিযোগ পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। অবৈধ সম্পদের কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। এছাড়া উত্তরা ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে রাজউকের ও ব্যাক্তি মালিকানাধীন প্লটে মার্কেট বানানো, দখলবাজি, ফুটপাত ও পরিবহন চাঁদাবাজিসহ জুড়া ও ক্যাসিনো কারবার থেকে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতার গত দশ বছরে শুন্য থেকে এ কাউন্সিলর এখন হাজার কোটি টাকা মালিক। উত্তরার তিনটি ক্যাসিনো কারবারের সাথে আফসার উদ্দিনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। এগুলো হল, উত্তরা ৯ নং সেক্টরের ভিবা চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট এর উপরের তলার ক্যাসিনো, হাউজ বিল্ডিং গাজীপুর ক্লাব ক্যাসিনো ও ১ নং সেক্টরের পূবালী ব্যাংকে উপরে পরিচালিত ক্যাসিনো।
এছাড়া স্থানীয় এমপি আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য সাহারা খাতুনের ভাগ্নে ও পিএস মজিবর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে পুরো উত্তরার সকল বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ করেন আফসার। আফসারের বিপুল সম্পদের মধ্যে রয়েছে, আব্দুল্লাহপুরে খন্দকার সিএনজি স্টেশনটি ১০ কোটি টাকায় ক্রয়, উত্তরায় ১০ কাটার উপরের ১২তলা খান টাওয়ার আশুলিয়ায় একই সাথে প্রায় ৫০ বিঘা জমি, আশুলিয়া ও রপ্তানী রোডে একটি পেট্রোল পাম্প। কিছুদিন আগে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম উত্তরার একটি ফুটপাতের সামনে গাড়ি থেকে নেমে হকারদের জিজ্ঞেস করেন কার আশ্রয়ে তারা ফুটপাতে দোকান বসিয়েছেন। তারা সবাই উত্তর দেন কাউন্সিলর আফসার উদ্দিন খানের নাম। সে সময় আফতার খান মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গেই ছিলেন।
এছাড়া গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটির বর্ধিত ওয়ার্ড ৪৪ নাম্বারের কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম শফিক। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানা যায়, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালানের অন্যতম একজন শফি। উত্তরাতে তাকে গোল্ডেন শফি নামে সবার কাছে পরিচিত। তিনি উত্তরখান থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তিনি ১১ নং সেক্টরে বিলাস বহুল ও অভিজাত জমজম টাওয়ারের মালিক। শফিকসহ পাঁচজন মালিকানায় মিলে এই মার্কেট করেছেন যাদের সবার বিরুদ্ধেই স্বর্ণ চোরাচালানে যুক্ত থাকার অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রয়েছে। এছাড়া সুইচগেইট মোড়ের পাশেই সাফা টাওয়ার আরেকটি বহুতল ভবন নির্মাণ শুরুর পথে। ১১ নং সেক্টরে কাচা বাজার, বাংলাদেশ মেডিকেল এর অপরদিকে কাপড়ের মার্কেট, উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরে একাধিক নামে বেনামে মার্কেট, প্লট ও ফ্ল্যাটের মালিক শফিক।
ঢাকা উত্তর সিটিা ৪৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈমের বিরুদ্ধেও মসজিদ কমপ্লেক্স, ফুটপাত, রাস্তা, সাইনবোর্ড, খাসজমি ও সাধারণ মানুষের জমি দখলসহ রয়েছে বিস্তর অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। রাজধানীর বিমানবন্দর, কাওলা, শিয়ালডাঙ্গা ও গাওয়াইরসহ আশপাশের এলাকায় দখল ও চাঁদাবাজির জন্য রয়েছে নাঈমের নিজস্ব বাহিনী রয়েছে। কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশকোনাস্থ হাজী ক্যাম্পে গেলে এসএসএফ’র হাতে অস্ত্রসহ আটক হয়েছিলেন নাঈম।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের গ্রিন সিগনাল পেলেই এসকল কাউন্সিলরদের আইনের আওয়তায় নিয়ে আসা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর