বাঙ্গালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ৩০ বছর ধরে ভিক্ষা করছেন ইয়াকুব আলী। তার দুই ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে পলাশ জনতা জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। আর ছোট ছেলে আবদুল কাদের রিকশা চালায়।
তারা তার বাবা-মাকে দেখভাল করে না। জীবন বাঁচাতে মানুষের কাছে হাতপাতা ছাড়া কোনো মাধ্যম নেই ইয়াকুবের।
ভাঙ্গা ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। তার বাড়ি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের নারগানা গ্রামে। চলার মতো কিছু করে দিলে তিনি ভিক্ষা করবেন না।
নারগানা গ্রামের আরেক ভিক্ষুক মো. ছাদেক আলী। তার এক ছেলে। ছেলেটা মানসিক বিকারগ্রস্ত। ছেলেকে বিয়ে করানোর পর নাতিকে রেখে বউ চলে যায়।
জরাজীর্ণ ঘরে স্ত্রী-নাতি ও ছেলেকে নিয়ে সে বসবাস করছে। তার তিন গন্ডা জমির ওপর একটি ঘর ও একটি গরু কিনে দিলে সে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিবে।
একই গ্রামের আরেক ভিক্ষুক মো. মস্তফা। বয়স তার ৮০ বছর। তার দুই ছেলে। বড় ছেলে রিকশা চালায়। বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে। সেই ছেলে তাদের কোনো খোঁজ-খবর রাখে না।
ছোট ছেলে মোতাহার হোসেন গাছ থেকে পড়ে পঙ্গু হয়ে গেছে। কিছু অর্থ দিয়ে ওই ছোট ছেলেকে একটি চা-পানের দোকান করে দিলে তার সংসারের কোনো অভাব থাকবে না। তিনি করবেন না আর ভিক্ষা।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে ভিক্ষুকমুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক তার কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রায় ২০ জন নারী-পুরুষ ভিক্ষুকের ইন্টারভিউ নেন।
কেন তারা ভিক্ষা করেন, কি করলে তারা ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিবেন, ভিক্ষুকদের নানা সমস্যার কথা খুব মনোযোগ সহকারে শুনেন ইউএনও মো. শিবলী সাদিক।
জামালপুর গ্রামের গোলমহন তার চার ছেলে থাকার পরও তিনি ভিক্ষা করে যাচ্ছেন। তিন ছেলে তাদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। মায়ের কোনো দেখভাল তারা করে না।
ছোট ছেলে শেখ সাদী একটু ব্যতিক্রম। বাউলবেশী সাদী ঢোল বাজিয়ে যা আয় করেন, তা দিয়ে স্ত্রী ও মাকে নিয়ে চলেন। ছেলের বউ পারভীন আক্তার গোলমহনকে দেখভাল করেন। তাই তাকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করলে তিনি আর ভিক্ষা করবে না।
জামালপুর ইউনিয়নের জামালপুর ও নারগানা গ্রামের আমেনা বেগমের (৫০) ছেলেকে একটি চায়ের দোকান, সামসুন নাহারের ছেলেকে একটি রিকশা, খোশেদা খাতুনের একমাত্র ছেলে খোরশেদ আলমকে কোনো কাজের ব্যবস্থা, ফাতেমা বেগমের ছেলেকে রিকশার কিনে দিলে তারা অভিশপ্ত ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিবে বলে ইউএনওর নিকট তারা ইন্টারভিউ দেয়ার সময় এ প্রতিশ্রুতি দেন।
এ ছাড়া একই ইউনিয়নের ভিক্ষুক আকলিমা, নূরজাহান বেগম, হালিমা বেগম ও শাহিদা বেগম তারা ভিক্ষা করতে চান না। অভাবের সংসার, ছেলেরা ভরণ-পোষণ করে না বলেই তারা ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েছে।
বয়সের ভারে তারা আজ ক্লান্ত। তাদের সংসার চলার মতো ছেলেদের বা তাদের কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। তাদের পুনর্বাসন করে দিলে মানুষের কাছে আর হাত পাতবে না তারা।
বৃহস্পতিবার উপজেলার নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ইউএনও মো. শিবলী সাদিকের উপস্থিতিতে ভিক্ষুকদের ইন্টারভিউ নেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. শাহাদৎ হোসেন, উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আবু নাদির, একটি বাড়ি একটি খামার উপজেলা অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও সমকালের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি আহাম্মদ আলী।
কালীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শিবলী সাদিক বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার লক্ষ্যে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করার জন্য তাদের সমস্যা ও সমাধানকল্পের জন্য ইন্টারভিউ নেয়া হচ্ছে। ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করতে সরকার সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবেন।
তিনি বলেন, উপজেলায় কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়েছে, তারা আন্তরিক এ বিষয়ে। সাহায্য-সহযোগিতা আশ্বাস দিয়েছেন। তাই ভিক্ষুকদের ডেকে এনে তাদের সমস্যার কথা শুনচ্ছি এবং সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে। তাদের আসা-যাওয়ার যাতায়াত ভাড়াও আমরা দিয়ে দিচ্ছি।