পেঁয়াজের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।আজ বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন সরকারদলীয় জ্যেষ্ঠ সাংসদ মোহাম্মদ নাসিম।তিনি বলেন, পেঁয়াজের ঝাঁজ বেশি হয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে এটা নিয়ে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। মানুষের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া হলে সেটা খারাপ হবে। পেঁয়াজের দাম প্রায় ২০০ টাকা হয়ে গেছে। পেঁয়াজের দাম কেন বাড়ছে এ বিষয়টি আমার কাছে বোধগম্য নয়। এতে আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী যখন বলেন ১০০ টাকার নিচে দাম নামবে না, তাহলে ব্যবসায়ীরা তো সুযোগ পেয়ে যায়। বলা হচ্ছে বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। তাহলে কেন দাম বাড়ছে। সংসদে অর্থমন্ত্রী আছেন। বাণিজ্যমন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রীকে বলব, পেঁয়াজের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।এরপর সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর অনেক কর্তব্য রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে পেঁয়াজের দাম একটু হয়তো বেড়েছে। দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হচ্ছে, আজকে পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা। আমরা কোনও দিনই এটা ভাবিনি।তিনি বলেন, দেশে পেঁয়াজের কী চাহিদা, তা আগেই মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। দরকার কত, আছে কত, যেটা ঘাটতি, তা তুরস্ক, মিসরসহ অন্য দেশ থেকে আগেই সংগ্রহ করা হয়।তোফায়েল অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, যারা পেঁয়াজ আমদানি করেন, তাদের শুল্কমুক্ত সুবিধা দিন। অনন্ত কিছুদিনের জন্য আমদানি শুল্ক শূন্য করে দিন। এ ধরনের ঘোষণা দেওয়া হলে দেখা যাবে, এর প্রভাব বাজারে পড়ছে।জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হক বলেন, গত পরশু বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৮০ টাকা। ওই দিন এই সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষে শিল্পমন্ত্রী দেয়া বক্তব্যে পেঁয়াজের মূল্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে বললেন। এটা বলার পরদিন দাম হয়ে গেল ১৫০ টাকা। আর আজকে হলো ২০০ টাকা। পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে ষড়যন্ত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখারও দাবি জানান মুজিবুল হক।তিনি বলেন, বাজারে পেঁয়াজ নেই এমন কিন্তু নয়। বাজারে প্রচুর পেঁয়াজ আছে। কিন্তু দাম বাড়ছে। এটা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীকে বলব, আপনারা বের করেন এটা ষড়যন্ত্র কি না? মানুষ পেঁয়াজ কিনতে পারে না কেবল এটা নয়, সরকারের বিরাট একটা বদনাম হচ্ছে। কিছু খারাপ কাজের জন্য অনেক ভালো কাজ ম্লান হয়ে যায়।অনেক ফেনসিডিল ব্যবসায়ী রাস্তাঘাটে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মরে যায়। পেঁয়াজের মূল্য যারা বাড়াচ্ছে তাদের একটা বন্দুকযুদ্ধে মরে যাক। তাহলে এটা একটা উদাহরণ হবে।সরকার দলীয় সাংসদ আ স ম ফিরোজ বলেন, বাজারে পেঁয়াজ আছে। এর দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু গতকাল দাম ছিল ১৫০ টাকা আর আজ ২০০ টাকা। পেঁয়াজের এই মূল্যবৃদ্ধি সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন পেঁয়াজ নিয়ে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া উচিত।