হাওরে বাঁধ ভেঙে বন্যা গাফিলতির অভিযোগ খতিয়ে দেখুন

কিশোরগঞ্জ সুনামগঞ্জ, ও নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের বিপুল পরিমাণ ধানের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে এই তিন জেলার কৃষকের স্বপ্ন। ফসল হারিয়ে হাহাকার করা ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই তাদের সামনে। ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে এক দিনে সুনামগঞ্জের পাঁচ হাজার হেক্টর এবং তিন দিনে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের ১৮ হাজার হেক্টর জমির ধান চলে গেছে পানির নিচে। ধান কাঁচা থাকায় সেগুলো কাটা যাচ্ছে না। ফলে এ বছর ঘরে ফসল উঠবে না। একফসলি বা বোরো ধাননির্ভর এলাকা হওয়ায় সামনের দিনগুলো কী করে কাটবে—এই ভেবে তিন জেলার কৃষকরা দিশাহারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তাদের। হাওর এলাকার যে বাঁধ মেরামতের কাজ গত ফেব্রুয়ারিতেই শেষ হওয়ার কথা, সে কাজ শুরুই হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। তাই অসময়ের পানির ঢল থেকে ফসল রক্ষা করা যায়নি। এখন বাঁধ রক্ষায় কৃষকরাই এগিয়ে এসে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছে।

বাংলাদেশের কৃষককে চিরকালই ফসল রক্ষার জন্য বৈরী প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। হাওরাঞ্চলের কৃষকের লড়াইটা যেন আরো কঠিন। দেশের মোট আয়তনের ছয় ভাগের এক ভাগ হাওরাঞ্চল বোরো ধান উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত এলাকা। প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে উঁচু ভূমির আগেই এসব এলাকা বন্যায় তলিয়ে যায়। বছরে অন্তত দুইবার এ অঞ্চলের মানুষকে ছোট-বড় বন্যার মোকাবেলা করতে হয়। অথচ সময়মতো শুধু হাওরাঞ্চলের ফসল ঘরে তোলা গেলে দেশের সিংহভাগ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে ফেলা সম্ভব। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার কারণে তা সম্ভব হয় না। এবারও যেমন সময়মতো বাঁধ রক্ষার কাজটি শুরু ও শেষ করা গেলে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার পাঁচ হাজার হেক্টর জমির ধান রক্ষা করা সম্ভব হতো। অন্য হাওরগুলোও ঝুঁকিতে থাকত না। কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের প্রায় আট হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে পানির উচ্চতা। নেত্রকোনার হাওর এলাকার অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। একই জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়ও দেখা দিয়েছে পাহাড়ি ঢল ও আগাম বন্যা।

হাওরাঞ্চলের মানুষ ও অর্থনীতিকে উপেক্ষা করা যাবে না। আর সে কারণে স্থায়ী বাঁধের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন প্রয়োজন। কিন্তু এবারের মৌসুমে কৃষকের যে ক্ষতি হলো, তার কারণও খতিয়ে দেখতে হবে। কারো অবহেলায় হাওরে পানি ঢুকে থাকলে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর