মহানগর দক্ষিণের কমিটি দিতে যাচ্ছে চমকপূর্ণ

বাঙ্গালী কণ্ঠ ডেস্কঃ সাংগঠনিক গুরুত্ব বিবেচনায় দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখা ঢাকা মহানগরের নেতৃত্ব বাছাইয়ে গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে চমকপূর্ণ কমিটি দিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

এক্ষেত্রে প্রবীণের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলন ঘটছে টগবগে তারুণ‌্যের। সম্মেলনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে বিভিন্নভাবে নিজেদের প্রচার শুরু করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পদপ্রত্যাশীরা।

দলীয় সূত্র বলছে- সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যে ধরনের দূরদর্শিতা দেখিয়েছে, দলীয় হাইকমান্ড এর ধারাবাহিকতা থাকছে মহানগর দক্ষিণেও। অর্থাৎ ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

ছাত্রলীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এমন ব্যক্তিত্বই মহানগরের দায়িত্ব পাচ্ছেন। মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে ‘ঢাকাইয়া’ ট্যাগ থাকলে এগিয়ে থাকার যে রেওয়াজ প্রচলিত ছিল, সেটিও ভাঙতে যাচ্ছে এবার। এক্ষেত্রে ঢাকাইয়া বা ঢাকার বাইরে নয়, যোগ্য নেতৃত্বকেই বেছে নিতে চাইছে আওয়ামী লীগ।

শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেলে দ্বিতীয় অধিবেশনে ঢাকার দুই মহানগরের নতুন নেতার নাম ঘোষণা করা হবে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, মহানগরের নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ফিল্টারিংয়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত। নেতা কতটা কর্মী বান্ধব, সাংগঠনিক, স্বচ্ছ ইমেজের, ত্যাগী এসব বিবেচনায় সুনিবিড়ভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের কয়েকটি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনে চলমান শুদ্ধি অভিযানের বড় প্রভাব দেখা গেছে। কমিটিতে স্থান পেয়েছেন পরিচ্ছন্ন রাজনীতির ধারকরা। সেই সূত্রে এবার মহানগরেও ত্যাগী, পরীক্ষিত, ক্লিন ইমেজের নেতারা পদ পাবেন বলে আশাবাদী হয়ে উঠছেন।

মহানগরের পদ পাওয়ার জন্য প্রভাবশালী অথচ বিতর্কিত এমন নেতারা ছিটকে পড়েছেন নেতৃত্বের দৌড় থেকে। দলীয় সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। এতে দীর্ঘদিন কোণঠাসা ও বঞ্চনার শিকার নেতারা এবার আশার আলো দেখছেন।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল আবুল হাসনাতকে সভাপতি ও শাহে আলম মুরাদকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর দক্ষিণ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে দীর্ঘদিন ঢাকা মহানগরের শীর্ষ দুই পদের দায়িত্বে ছিলেন প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ (সভাপতি) এবং মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম (সাধারণ সম্পাদক)। তারা নেতৃত্বে ছিলেন প্রায় ২৯ বছর। এই সময়ে ওই পদে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করা যায়নি। যে কারণে সুযোগের অপেক্ষা ছিলেন অনেক যোগ্য নেতৃত্বও।

দীর্ঘ মেয়াদে পদ আটকে থাকার কারণে মহানগরে নতুন নেতার বিকাশ ঘটেনি। মহানগরের শীর্ষ নেতৃত্বের মতো বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড শাখায়ও দীর্ঘদিন চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। নেতাদের পদ আঁকড়ে থাকার মানসিকতায় সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ আর বিভেদ। এবার মহানগর উত্তর-দক্ষিণের চমক জাগানিয়া কমিটি দিয়ে মহানগরকে ঢেলে সাজাতে চাইছে আওয়ামী লীগ।

দলীয় সূত্র বলছে, আগামী জানুয়ারিতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিকল্পনামাফিক কমিটি করবে আওয়ামী লীগ। সিটি করপোরেশনের জন্য প্রার্থী রেখে মহানগরে প্রবীণ-নবীনের মেলবন্ধনে স্বচ্ছ ভাবমূ  র্তির কাউকে দায়িত্বে আনবেন শেখ হাসিনা।

মহানগরের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য তিনি এরই মধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে ‘যোগ্য প্রার্থী’দের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়েছেন। তিনিই শেষ সিদ্ধান্ত দেবেন। সেক্ষেত্রে রাজনীতিতে সভাপতি পদে দীর্ঘদিনের রাজনীতির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একজনকে বেছে নেয়া হতে পারে। আর সাধারণ সম্পাদক পদে ঢাকা মহানগরের কোনো থানার শীর্ষ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে উঠিয়ে এনে দায়িত্ব মহানগরের দায়িত্ব দিতে পারেন, যে বয়সে তরুণ এবং ছাত্রলীগের ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে। এর আগের কমিটিতেও এইভাবে নেতৃত্ব এসেছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে ও পদ ধরে রাখতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন নেতারা। আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। তিনি ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বড় অবদান রাখা এই নেতা ‘৬৯ -এর গণঅভ্যুত্থানকালীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন জিএস হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে লাইম লাইটে উঠে আসেন। আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট নজিবউল্লাহ হিরু। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন এবং যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ঢাকা বার এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

আলোচনায় রয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। ঢাকা দক্ষিণে নেতাকর্মীদের মাঝে তার বেশ জনপ্রিয়তা আছে। আলোচনায় আছেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির, আবু আহমেদ মন্নাফি, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দিলিপ রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়েত উল্লাহ স্বপন, মহানগর দক্ষিণের কার্যনির্বাহী সদস্য আলহাজ্ব মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী আবু সাঈদ।

এক-এগারোতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে যখন নিম্ন আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন আদালতের সামনে তার মুক্তি চেয়ে মিছিল বের করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন সাঈদ। আলোচনায় আছেন মহানগর দক্ষিণের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ওমর বিন আব্দাল আজিজ তামিম, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. নজরুল ইসলাম।

তবে মহানগর দক্ষিণের বর্তমান সভাপতি আবুল হাসনাত আবারো একই পদে এবং সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ পদোন্নতি না পেলেও মহানগরের একই পদে থাকার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

নেতৃত্বের প্রত্যাশার কথা জানাতে গিয়ে অ্যাডভোকেট নজিবউল্লাহ হিরু রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সময়ে দাবি অনুযায়ী জননেত্রী শেখ হাসিনা ভালো মানুষদের সামনে নিয়ে আসছেন। তাদের ওপর দায়িত্ব অর্পন করছেন। সহযোগী সংগঠনগুলোতে বিষয়টি দেশবাসী দেখেছে। রাজনীতিতে এর গুণগত ইতিবাচক প্রভাব তৈরি হচ্ছে। এতে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। ভবিষ্যতেও ক্লিন ইমেজের নেতারা নেতৃত্ব আসবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’

নজরুল ইসলাম বাবু রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এবার নেতৃত্ব বাছাইয়ের সম্মেলনগুলো কিন্তু গতানুগতিক ধারায় হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে একটা চমক জাগানিয়া পরিবর্তন এবং তারুণ‌্য নির্ভর পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিরা নেতৃত্বে আসছেন। এজন্য আমি আশাবাদী। নেত্রী অবশ্যই যোগ্য ও ত্যাগী নেতৃত্ব আনবেন এবার মহানগরের সম্মেলনে।’

গাজী আবু সাঈদ বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন যেখানে দায়িত্ব দিয়েছেন, বুক চিতিয়ে দলের জন্য কাজ করেছি। এক-এগারোতে পুরান ঢাকায় আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছি। নেত্রী ছাড়া আমি কিছু বুঝি না। এখন সুত্রাপুর থানার দায়ি‌ত্ব দি‌য়ে‌ছেন নেত্রী। সেই দায়িত্ব নেত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী পালন করছি। ‌তি‌নি যেখানেই দায়িত্ব দে‌বেন জীবন বাজি রেখে সেই দায়িত্ব পালন করব।’

নেতৃত্ব বাচাইয়ের প্রক্রিয়া জানাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পরিচ্ছন্ন নেতাদের যে জয়জয়কার শুরু হয়েছে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। নেতৃত্ব অভিজ্ঞতার যেমন প্রয়োজন রয়েছে তেমনি তারুণ‌্য দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যারা কোনো ধরনের বিতর্কিত নয়, যাদের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে, দলের জন্য ত্যাগ শিকার করেছেন তারাই মহানগর আওয়ামী লীগে নেতৃত্বে আসবে।’

 

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর