নর-নারীর মন বিয়েতে সমর্পণ

বাঙ্গালী কন্ঠ ডেস্কঃ ওয়া মিন আয়াতিহি। বিবাহ আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম একটি বিষয়। আন খালাকা লাকুম মিন আন ফুসিকুম। আল্লাহ বানিয়েছেন তোমাদের জন্য। লিতাসকুনা ইলাইহা। স্ত্রীদের মধ্যে আছে প্রশান্তি- ওয়া জা’আলা বাইনাকুম মাওয়াদ্দাতান ওয়া রাহমাতান। এবং তাদের মধ্যে ঢেলে দিয়েছি প্রেম এবং দয়া।

বিবাহ কী? আল-কোরআনের ভাষায় ‘ইন্না ফি জালিকা লাআয়াতিন লি ক্বাওমি ইয়াতাফাক্কারুন। আর বিবাহের মধ্যে আছে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন’।

কী নিদর্শন আছে এখানে?বিবাহ নবীজির সুন্নাহ সে হিসেবে এটি ইবাদত। এতে চরিত্রের হেফাজতের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি আসে ফলে ইমান মজবুত হয়। পৃথিবীর সব সমাজ এবং ধর্মেই এ বিবাহ প্রথা স্বীকৃত এবং উৎসাহিত। ইসলাম একে পরিপূর্ণ রূপ দিয়ে সামাজিক ইবাদতে রূপান্তরিত করেছে। যার সংসার নেই তার সামাজিক মূল্যায়ন নেই বললেই চলে। ইসলাম মানবিকতার স্বাভাবিক ধর্ম, তাই এখানে বৈরাগ্যবাদ নেই। লা রুহবানিয়াতা ফিল ইসলাম। অনেক ধর্মে সাধুরা ব্রহ্মাচার বা অবিবাহিত জীবনযাপন করেন। অনেক মনীষীও তাদের চিন্তার স্বাধীনতার জন্য বিবাহ না করে চিরকুমার থাকেন কিন্তু তাদের পরিণাম সুখকর হয়েছে বলে খুব একটা শোনা যায় না। তারা মানসিক প্রশান্তি পেতে ব্রোথেলে যায়। সাধুরা তাদের আশ্রমে সেবাদাসী রাখেন। অনেকে আবার পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন ফলে সামাজিক ও পারিবারিক অস্থিরতা দেখা দেয়। এ জন্য ইসলাম বিবাহকে সুন্নাহ কখনও ওয়াজিব বা ফরজ হিসেবে গণ্য করেছে। নবীজি বলেন, আন্নিকাহু সুন্নাতি- বিবাহ আমার সুন্নত। ফা মান রাগিবা আন সুন্নাতি- যে মুখ ফিরিয়ে নিল, ফা লাইছা মিন্নি- সে আমার দলভুক্ত নয়।

বিবাহ হল বিশেষ আবহ। এ বিশেষ আবহ কিছু প্রাণীর মধ্যে জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় আর কিছু প্রাণীর মধ্যে বিশেষ সময় বা কালে শুরু হয়। বকরি-ভেড়া-গরু-মহিষ একটি বিশেষ সময়ে ভ্যা ভ্যা বা হাম্বা হাম্বা করে ডাকে। ময়ূর পেখম মেলে নাচতে থাকে। কবুতর বাকবাকুম বাকবাকুব বলে সঙ্গীকে আকৃষ্ট করে। মানুষও একটি বয়সে মনের মানুষের তালাশে মনে মনে ‘আহ্ আহ্’ করতে থাকে। তখন সে স্বপ্রণোদিত বা সামাজিক রীতি মেনে কাউকে বেছে নিয়ে আহ্মুক্ত হয়ে ‘বেআহ্’ বা বিশেষ আবহে চলে আসে। যাকে আমরা বিবাহ বলি।

এ ব্যাখ্যাটি আমার শায়খ ও মুরব্বি করাচির হজরত শাহ হাকীম আখতারের কাছে শোনা। তখন আমি সবেমাত্র বিয়ে করেছি। তিনি ঢালকানগর খানকায় প্রতি বছর আসতেন। বিষয়টি আমার নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝেছি।

আমার সমবয়সী অনেকেই বিশের কোটায় পা দিয়ে দিল্লিকা লাড্ডু খেয়ে ফেলে পস্তে গেছে, কিন্তু আমার ত্রিশের কোটায় পড়তে হয়েছে এর মধ্যে কত নিশি একা কাটিয়েছি। অনেকে হাতছানি উপেক্ষা করে মাবুদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে।

মানব সমাজের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান হল বিবাহব্যবস্থা। যুগে যুগে প্রতিষ্ঠানটির আদি রূপ থেকে বর্তমান কাঠামোয় এসে দাঁড়িয়েছে। বিবাহ প্রথাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে প্রধানত ধর্ম। বিয়ে সংক্রান্ত সব নিয়মকানুন বিধিবদ্ধ হয়েছে ধর্মীয় অনুশাসনে। প্রাচীনকাল থেকে বাংলায় ধর্মীয় শাস্ত্রের বিধানই ছিল সামাজিক আইন, ধর্মীয় আইনের দ্বারাই শাসিত হতো সমাজ-সংসার। ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় আইনের পাশাপাশি লোকজ সংস্কৃতিও বৈবাহিক জীবনকে প্রভাবিত করেছে নানাভাবে।

নারী-পুরুষের পবিত্রতা ও সতীত্ব রক্ষার বাস্তবসম্মত হাতিয়ার হল বিবাহ ব্যবস্থা। এটি একটি শুভ অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় ইবাদত, যা পালনের মধ্য দিয়ে নারী-পুরুষের ভবিষ্যৎ জীবনের সূচনা হয়। এর মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর ওপর গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয়। দায়িত্ব-কর্তব্য এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পরস্পরকে সুবিবেচনার অধিকারী করে।

বিবাহের উদ্দেশ্য কী? মূল উদ্দেশ্য হল মানসিক প্রশান্তি। কোরআনের ভাষায় লি তাসকুনু ইলাইহা। যেন তোমরা প্রাশান্তি পেতে পার। দুনিয়ায় শান্তি বা সুখের কোনো দোকান নেই। যেসব ব্রোথেলগুলোয় সুখ বা শান্তির খোঁজে মানুষ যায় সেখানে তা না পেয়ে শরীরে অসুখ নিয়ে আসে। আমি মনে করি, বিয়ে প্রথা মানুষের আত্মিক প্রশান্তির জন্য টিকে থাকবে।

এর প্রমাণ সাম্প্রতিক সময়ে এক সেলিব্রেটির সাবেক স্ত্রীর নতুন করে বিয়ের পিঁড়িতে বসা। এ বিয়ের কারণে কারও কারও হিংসা হচ্ছে। পৃথিবীতে যত ধর্ম-মত-সভ্যতা আছে সবার কাছে বিয়ের অপরিহার্যতা আছে।

হিন্দু সমাজে ছেলেমেয়েদের বিশেষ করে মেয়েদের, বাল্যকালে বয়ঃসন্ধির আগেই বিবাহ দেয়াকে ধর্মীয় কর্তব্য বলে মনে করা হয়।

ইসলামে সামর্থ্যবান ব্যক্তিকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও বিবাহ না করা ইসলমে নিষিদ্ধ। কোরআনে বিয়ে এবং স্ত্রী গ্রহণের ব্যবস্থাকে নবী-রাসূলের প্রতি আল্লাহতায়ালার এক বিশেষ দান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সামাজিক-পারিবারিক জীবন সুন্দর করুন।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর