থাকছে জেল জরিমানার বিধানডাক বিভাগ আইনে পরিবর্তন আসছে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ  বাংলাদেশের ডাক বিভাগের ডাক আইনে পরিবর্তন আনছে সরকার। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ডাক পরিবহন, মেইলিং অপারেট এবং কুরিয়ার সার্ভিস পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি আইন প্রণয়ন করছে সরকার। ১৮৯৮ সাল থেকে নিয়ে এবারই প্রথম আইনটি পরিপূর্ণভাবে যুগোযোগী করা হচ্ছে। যদিও ২০১০ সালে আইনটির কিছু কিছু ধারা সংশোধন করা হয়েছিল। সংশোধিত ডাক আইনে রেমিট্যান্স ট্রান্সফার সেবা, ব্যাংকিং সেবা, ডাক জীবন বীমা সেবা দেবে ডাক বিভাগ।

বর্তমানে শুধু ডাক সঞ্চয় ব্যাংক ও জাতীয় স্বঞ্চয়পত্র সেবা প্রদান করছে ডাক বিভাগ। নতুন করে ডাক সঞ্চয় ব্যাংকের নাম রাখা হবে পোস্ট ব্যাংক। সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির শিক্ষা সামগ্রী ডাক অধিদপ্তর বিনামূল্যে গ্রহণ ও বিতরণ করবে। তবে একটি নীতিমালা তৈরি করে তা করা হবে। যেখানে সেখানে ডাক বহনকারী যানবাহন থামানো যাবে না। নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী, শুল্ক গোয়েন্দা অথবা সরকারের এখতিয়ার সম্পন্ন ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ডাক বহনকারী যানবাহন তল্লাশি করা যাবে। আইনের বিধান ভাঙলে থাকছে কঠোর শাস্তির বিধান।

দুর্যোগের সময় বিনামূল্যে ত্রাণ সামগ্রী বহন করবে ডাক বিভাগ। ডাকদ্রব্য বীমার আওতায় আনা হবে। ডাক দ্রব্য হারানো গেলে প্রেরককে বীমার টাকার সমপরিমাণ অর্থ ফেরত দেবে সরকার। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার (ইএমটিএস) এককভাবে ডাক বিভাগ অথবা সরকারি, বেসরকারি দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে পরিচলনা করবে।

ডাকযোগে কোনো ধরনের বিস্ফোরক পদার্থ, বিপজ্জনক, নোংরা, বিষাক্ত বা ক্ষতিকর কোনো বস্তু এবং জীবন্ত প্রাণী পাঠানো যাবে না। অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ মুদ্রণ, স্থিরচিত্র, ভিডিও চিত্র, সিডি, ডিভিডি, ফটোগ্রাফ, খোদাইকৃত দ্রব্য ডাকযোগে পাঠানো যাবে না। ডাকদ্রব্যের উপরের আবরণের ওপর রাষ্ট্রবিরোধী, হুমকি বা আক্রমণাতক কোনো শব্দ, চিহ্ন বা নকশা ব্যবহার করা যাবে না। সাম্প্রদায়িক উসকানি, শ্রেণিবৈষম্য, ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত হানে অনুরূপ, ব্যক্তি, সমাজ ও প্রতিষ্ঠানের জন্য অবমাননাকর এবং রাজনৈতিক বিদ্বেষপ্রসূত বক্তব্যসম্বলিত লেখা, অডিও, ভিডিও, হাতের লেখা ডাকযোগে প্রেরণ করা যাবে না।

অতি সহজে বিনষ্ট হয় বা অরক্ষিত কোনো দ্রব্য ডাকযোগে প্রেরণ করা যাবে না। আইনটি দি পোস্ট অফিস অ্যাক্ট ২০১৯ নামে অভিহিত হবে। আইনটির খসড়া থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। খসড়া আইনের ৩০ ধারায় বলা হয়েছে, মুদ্রণ ও প্রকাশনা আইন ১৯৭৩ এর বিধানে অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের সংবাদপত্র ডাকযোগে পাঠানো যাবে না। প্রেরক এবং প্রাপক কাউকে এক বছরের মধ্যে না পাওয়া গেলে মনি অর্ডারের অর্থ সরকারের কাছে দাবি করা যাবে না। ডাক জীবনবীমা চালু করবে ডাক বিভাগ। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অধীনে ডাক অধিদপ্তরের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য মৌলিক যোগাযোগের একমাত্র কর্তৃত্বপ্রাপ্ত ডাক সেবা প্রদানকারী সরকারি সংস্থা হবে ডাক বিভাগ। যা দেশে ইউনিভার্সাল ডাক সেবা প্রদানকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ পোস্ট হিসেবে পরিচিত হবে। এই আইন জারি হলে সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে লাইসেন্স প্রদান এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ গঠন করবে। তিন সদস্যবিশিষ্ট ওই কমিটির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেবে সরকার। বর্তমান মেইলিং অপারেটর বা কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবসা পরিচালনাকারীদের জন্য লাইসেন্সিং কতৃপক্ষ গঠন করা হবে। একটি জাতীয় কুরিয়ার সার্ভিস নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। লাইসেন্স ছাড়া কেউ কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না। লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ছাড়া কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ির গতিরোধ করা যাবে না। তবে রাষ্ট্র ও সরকারের নিরাপত্তার স্বার্থে গন্তব্যে পৌঁছার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে গতিরোধ করতে পারবে। কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যক্তিকেও লাইসেন্স দেওয়া যাবে।

আইনের দশম অধ্যায়ে ডাক সেবা প্রদানকারীদের বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। ডাক বিতরণকারী ব্যক্তির কাছে রক্ষিত নিবন্ধন বইয়ে কোনো মিথ্যা তথ্য লিখলে অর্থাৎ ডাক বিতরণ না করে করেছেন এ ধরনের মিথ্যা তথ্য লিখলে তার ছয় বছরের কারাদ- এবং সর্বোচ্চ পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। ডাক দ্রব্য চুরি, অসদুপায়ে আত্মসাৎ, গোপন, নষ্ট করলে এবং ফেলে দিলে ওই ডাক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কমপক্ষে সাত বছরের কারাদ- এবং সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা হবে। ডাকঘরে কর্মরত কোনো নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কর্মক্ষেত্রে নিগ্রহ, কটূক্তি, উস্কানিমূলক অঙ্গভঙ্গি, অশ্লীল উক্তি করা যাবে না। করলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ সেক্সুয়াল হেরেজমেন্টাল ইলিমিনেশন অ্যান্ড প্রিভেন্ট পলিসির (বিএলএএসটি) অধীনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনটির ৯ ধারার বিধান ভঙ্গ করে কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ঘটনার জন্য সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। ডাকটিকিটি বিক্রির ক্ষেত্রে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্য দাবি করলে ৬ মাসের কারাদ- এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে।

২০ এবং ২১ ধারার বিধান লঙ্ঘন করে ক্ষতিকর নিষিদ্ধ পণ্য এবং অশ্লীল দ্রব্য ডাকযোগে প্রেরণ করলে সর্বোচ্চ এক বছরের জেল এবং সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। কোনো ব্যক্তি ডাকঘরের চিঠির বক্স, ডাক ঘরের কাউন্টার, মেইল প্রসেসিং সেন্টার, ডাক বাছাই কেন্দ্র, সার্ভাররুম, কল সেন্টার স্ট্যাম্প গোডাউন এবং ডাক ট্রেজারি নোংরা করলে, ক্ষতিকর পদার্থ নিক্ষেপ করলে তার সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদ- এবং সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। ডাক অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী একক বা দলগতভাবে অধিদপ্তরের উন্নয়নমূলক কাজে বাধা প্রদান করলে, দরপত্রে বাধা দিলে, তথ্য ফাঁস করলে, হুমকি দিলে এবং চাঁদা দাবি করলে তার বা তাদের কমপক্ষে ১০ বছর জেল এবং ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর