রামগঞ্জে জনতা ব্যাংকের ডাকাতি সাজানো নাটক

লক্ষ্মীপুরের জনতা ব্যাংক রামগঞ্জ শাখায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে শনিবার ব্যাংক কর্মকর্তারা পুলিশকে জানান। ব্যাংক ম্যানেজার এমরান হোসেন পুলিশকে জানান, শনিবার আনুমানিক ভোর রাত তিনটার দিকে সংঘবদ্ধ ডাকাতাদল কৌশলে ব্যাংকের কলাপসিবল গেইটের তালা ভেঙে নৈশ প্রহরী মোবারক হোসেনকে (৬৫) মারধর এবং নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে ব্যাংকের ভোল্টে রাখা ২০ লাখ ৪৭ হাজার টাকা লুটে করে নিয়ে যায়। এসময় ডাকাতরা ব্যাংকের সিসিটিভির ক্যামেরাও ভেঙে নিয়ে যায় বলে জানান তিনি।

তিনি আরো জানান, বৃহস্পতিবার ব্যাংকিং কার্যক্রম শেষ করে ব্যাংকের ভোল্টে ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৯ শত ১৯ টাকা রেখে সরকারি ছুটিতে চলে যায় কর্মকর্তারা। সংবাদ পেয়ে শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপার আসম মাহাতাব উদ্দিনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ।

রোববার সকাল ১১টায় ঘটনা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য এ প্রতিনিধি রামগঞ্জ শহরস্থ জনতা ব্যাংকে গেলে ব্যাংক ম্যানেজার এমরান হোসেন দ্রুত ব্যাংক থেকে সটকে পড়েন। এরপর ম্যানেজারের মোবাইল ফোনে (০১৯১১২৬….) প্রায় এক ঘণ্টা ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার মোবাইলে রিং হলেও ফোন রিসিভ করেননি।

পরে এ ঘটনা সম্পর্কে তথ্যের জন্য রামগঞ্জ থানায় গেলে সেখানে ওসির কক্ষে লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশের (রায়পুর-রামগঞ্জ) সার্কেলের এএসপি পংকজ কুমার দেবনাথ ও ওসি মো. তোতা মিয়ার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। এসময় তাদের সামনে জনতা ব্যাংকের বৃহত্তর নোয়াখালীর এরিয়া ম্যানেজার মোখলেছুর রহমান, কুমিল্লা বিভাগীয় কর্মকর্তা মোস্তফা কামালকে বসে থাকতে দেখা যায়। ম্যানেজার পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি ওই ব্যাংক কর্মকর্তাদের জানালে তারা জানান, প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলা নিষেধ রয়েছে।

পরে এএসপি সার্কেল পংকজ দেবনাথের অনুরোধে এরিয়া ম্যানেজার মোখলেছুর রহমান ম্যানেজার এমরান হোসেনকে থানায় আসতে বললে তিনি থানায় আসেন। ভোল্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে ম্যানেজার এমরান হোসেন জানান, ভোল্টটি তিন স্তর বিশিষ্ট। এটি খুলতে তিনটি চাবি ব্যবহার করতে হয়। এর একটি চাবি থাকে তার কাছে, অন্য দু’টির একটি ব্যাংকের সেকেন্ড অফিসার দিলীপ কুমার ও একটি ক্যাশ অফিসার ইসমাইল হোসেনের কাছে থাকে। তাদের তিন জনের কারোই কোনো চাবি হারানো কিংবা খোয়া যায়নি। ভোল্ট কিভাবে খোলা হল প্রশ্ন করলে তিনি কোন সদোত্তর দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে অন্য দুই কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের ভোল্ট রাস্তায় ফেলে রাখলেও কারো পক্ষে এটা খোলা সম্ভব নয়। তারা জানান, ব্যাংকের হেড অফিস থেকে একটি তদন্ত টিম আসছে, তাদের তদন্তে ঘটনার প্রকৃত রহস্য জানা যেতে পারে।

এএসপি সার্কেল পংকজ কুমার দেবনাথ বলেন, এ বিষয়ে ব্যাংকের ম্যানেজার বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আমরা তদন্ত করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবো।

তিনি আরো বলেন, বিষয়টি রহস্যজনক এবং আপাতত দৃষ্টিতে সাজানো বলে মনে হচ্ছে। কারণ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ভোল্টের সামনে একটি স্ক্রু-ড্রাইভার পড়ে থাকতে দেখিয়ে সেটা দিয়ে ভোল্ট খোলা হয়েছে বলে দাবি করেন। যা হাস্যকর ও অবিশ্বাস্য। কারণ তিন স্তর (থ্রি-হুইল) বিশিষ্ট এ ধরনের ভোল্ট স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে খোলার বিষয়টি কোন যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর