কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সম্ভাবনাই উজ্জ্বল

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ দু’দিন পরই (শুক্রবার) ক্ষমতাসীন দলের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল। আর এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়েই আসছে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগের আগামী নেতৃত্ব। দলটির সভাপতি পদে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই থাকছেন। তবে দল-মত নির্বিশেষে সবার কৌতূহল- কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের পরবর্র্তী সাধারণ সম্পাদক?

ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন, নাকি নতুন কেউ?- এ প্রশ্নের উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে শনিবার দলটির ২য় কাউন্সিল অধিবেশন পর্যন্ত। তবে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে যাচ্ছেন বলে যুগান্তরকে আভাস দিয়েছেন দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ সোমবার যুগান্তরকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন পাঁচবার।

অন্যান্য কাউন্সিল ঘেঁটে দেখা যাবে সবাই দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও দুই মেয়াদে ছিলেন। তাছাড়া বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ভালো কাজ করছেন। তিনি আরেকটি মেয়াদ থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। তিনি এখন পুরোদমে সুস্থ। কাউন্সিলে এ পদে নতুন কাউকে দেখব বলে মনে হয় না।

প্রায় অভিন্ন সুরে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান। তিনি বলেন, যেসব কারণে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসার কথা তেমন কিছু ঘটেনি। একটা সময় বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অসুস্থ থাকলেও তিনি এখন সুস্থ। কাজও করছেন স্বাভাবিকভাবে। এ পদে পরিবর্তন হওয়ার মতো কিছু দেখছি না।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাড়া এই মুহূর্তে সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তবে পুরো বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা যুগান্তরকে বলেন, এবারের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অপরিবর্তিতই থাকছে। সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক নেতার নাম উঠে এলেও রীতি অনুযায়ী কাউন্সিল অধিবেশনে কেউ প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন না। তারা আরও বলেন, সাধারণত তৃণমূলের নানা অভিযোগের কারণেই সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তনে গুরুত্ব দেন দলের হাইকমান্ড। বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযোগ নেই। তিনি সারা দেশে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। দলীয় কাজে তার প্রতি অনেকটাই সন্তুষ্ট আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। সে হিসেবে ধরেই নেয়া যায়, ওবায়দুল কাদেরই ফের সাধারণ সম্পাদক থাকছেন।

এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি যুগান্তরকে বলেন, আমি দ্বিতীয়বার পার্টির সাধারণ সম্পাদক থাকব কিনা, তা নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন, আমি নিজে প্রার্থী হব না। নেত্রী দায়িত্ব দিলে অমত করব না। তিনি চাইলে আবার দায়িত্ব দেবেন, না চাইলে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেবেন। ওনার (শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্ত আমরা সবাই মেনে চলব।

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা ওবায়দুল কাদের এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। গত ৩ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। পরদিন ৪ মার্চ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। ২০ মার্চ সেখানকার মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তার বাইপাস সার্জারি হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর ১৫ মে সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। এরপর থেকেই পুরোদমে দলে ও সরকারে কাজ করছেন ওবায়দুল কাদের।

দলীয় সূত্র মতে, কাউন্সিল উপলক্ষে ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আওয়ামী লীগ। বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে কাউন্সিলস্থল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি করা হয়েছে সম্মেলন মঞ্চ। মঞ্চ সাজসজ্জা উপকমিটির নেতারা নিয়মিত সম্মেলনস্থল পরিদর্শন করছেন। আগামী বছর থেকে মুজিববর্ষ ঘোষণা করায় এবার সম্মেলনে রাজধানী ঢাকাকে অপরূপ সাজে সাজানো না হলেও বর্ণিল সাজে তৈরি করা হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাদের ভাষ্যমতে, দলের প্রেসিডিয়াম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদকীয় পদে চমক আসতে পারে। অন্য পদগুলোতে কারা আসছেন তা নিয়েও চলছে আলোচনা। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবাই চান শুদ্ধি অভিযানের ভেতর দিয়ে হতে যাওয়া কাউন্সিলে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন। বিশেষ করে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দেশে ফেরার পর যারা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন তারা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আসুক- এ রকম চাওয়া নেতাকর্মীদের।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, এদিকে পদ পেতে বিভিন্ন মাধ্যমে লবিং করছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে প্রভাবশালী নেতাদের কাছেও ছুটছেন অনেকে। কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসা, অফিস, বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও হাজির হচ্ছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা।

আরও জানা গেছে, ‘নতুন মুখ, নতুন নেতৃত্বের’ যে প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড করছে, এর প্রতিফলন ঘটবে এবারের কাউন্সিলে। এ লক্ষ্যে দলের নবীন-প্রবীণ নেতাদের আমলনামায় চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।

প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন এনেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি পরিবর্তন আনা হয়েছে দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে। এর আগে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েন ৫০ জন এমপি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের ৪৩ জনের মধ্যে ৪১ জনই বাদ পড়েন। শুধু তা-ই নয়, নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভার ৪৮ সদস্যের মধ্যে নতুন মুখ ৩২ জন। উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীর ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

এছাড়া ক্যাসিনো অভিযান সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের যেসব নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের অব্যাহতিসহ আইনের আওতায় এনেছেন, যা সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের আসন্ন কাউন্সিলেও এর প্রভাব পড়বে।

সরকার ও দলে তারুণ্যনির্ভরতার সফলতার কথা জানিয়ে একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য যুগান্তরকে বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং দলকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে মেধাবী, উদ্যমী, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও পরিশ্রমী এক ঝাঁক তরুণকে এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দিতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সে হিসেবে ২০ ও ২১ ডিসেম্বর কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে দলে ব্যাপক রদবদল আসবে। এতে বাদ পড়বেন বর্তমান কমিটির অনেক ‘প্রভাবশালী ও হেভিওয়েট’ নেতা। এ সংখ্যা দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মোট সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর