প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ: দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকুক

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর ভরসা রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি আপনাদের একজন হয়ে থাকতে চাই।’

তার এ আহ্বানের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে যে, মানুষের সেবার মধ্য দিয়ে সবার মনে স্থান করে নিতে এবং সবাইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান শেখ হাসিনা। এটি অবশ্যই ভালো শাসকের অন্যতম গুণ। আমরা মনে করি, উন্নয়ন প্রক্রিয়া চলমান রাখতে এবং দেশকে এগিয়ে নিতে তার ওপর আস্থা রাখা যায়।

২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বছর শেষ করা একজন প্রধানমন্ত্রীর বিনয়ী মনোভাব যেমন প্রশংসাযোগ্য, তেমনি টানা প্রবৃদ্ধির উচ্চ গতি ধরে রাখা, মাথাপিছু আয় ক্রমবর্ধমান রাখা এবং নিম্নমধ্যম আয়ের কাতারে দেশকে নিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে এরই মধ্যে তিনি নিজের গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন।

এমন একটা সময় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপনের ভাষণ দিয়েছেন, যখন মাত্র দু’দিন পর শুক্রবার শুরু হচ্ছে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ উদযাপনের ক্ষণ গণনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটি প্রথাসর্বস্ব কোনো অনুষ্ঠান না হয়ে জাতিকে নতুন জীবনীশক্তি সঞ্চারণে অনুপ্রাণিত করা এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জাতিকে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করে তোলার মাহেন্দ্রক্ষণ হবে।

আমরা আশাবাদী, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীর সামনে দাঁড়িয়ে জাতিকে নতুন স্বপ্নে উদ্বুদ্ধ করা যাবে এবং ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি ও বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণ করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার ব্যতিক্রমী দিক হল তিনি অহেতুক আশার ফানুস না উড়িয়ে নিজেদের সক্ষমতাকে সামনে নিয়ে পরিকল্পনা করেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রশংসিত দিক হচ্ছে, সীমাবদ্ধতার মধ্যেও দেশকে এগিয়ে নেয়ার যোগ্যতা ও সক্ষমতা তার রয়েছে। যেমন- বিশ্বব্যাংক অর্থ না দেয়ার পরও নিজেদের সামর্থ্যকে কাজে লাগিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বপ্ন পূরণের পথে রয়েছেন তিনি।

এ ছাড়া নিজের সীমাবদ্ধতা অকপটে স্বীকার করে নেয়াও কম সাহসের বিষয় নয়। ভুলত্রুটি শুধরে সামনে এগিয়ে যাওয়া, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখা ও দেড় কোটি কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণের কথা প্রধানমন্ত্রী ভাষণে তুলে ধরেছেন।

তার বক্তব্যের পর ঝিমিয়ে পড়া দুর্নীতিবিরোধী অভিযান আরও চাঙ্গা হবে বলে আমরা আশাবাদী। দেড় কোটি কর্মসংস্থান তৈরির যে লক্ষ্যের কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তা আমাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

তবে এজন্য সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ, দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেয়া ও বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের কর রেয়াতসহ হয়রানিমুক্ত বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় বেসরকারি খাত আগাবে না এবং কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যমাত্রাও বাস্তবায়ন করা যাবে না।

যে কোনো অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে দীর্ঘমেয়াদি নীতি ও তা বাস্তবায়নে যথেষ্ট সময়ের দরকার। আশার বিষয়, বর্তমান সরকার সে সুযোগ পেয়েছে এবং অর্থনীতির ইতিবাচক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে তার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে।

এখন দরকার বৈষম্য কমিয়ে আনা, অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ করা এবং আইনের শাসনে জোর দেয়া। ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং দলমত নির্বিশেষে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ওপর মানুষের ভরসা আরও জোরদার হবে বলে আশা করা যায়।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর