সরিষা ফুলে দিগন্ত জুড়ে হলুদের মেলা

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ধানের দেশে এবার হলুদের মেলা। যেদিকে তাকাই সেদিকেই  হলুদ আর হলুদ। দিগন্ত  জুড়ে যেন  হলুদ ফুলের সমারোহ। শীতের মৌসুমে সরিষা চাষ বেশি হয় দিনাজপুরে।  স্বল্প সময়ের মধ্যেই এই সরিষা ঘরে আসে বলেই চাষিরা সরিষা চাষে বেশি আগ্রহী। তেমন সার  বা পানির সেচ না লাগায় স্বল্প পুঁজিতেই বেশি লাভজনক হওয়ায় এ বছর দিনাজপুরে সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে।বর্তমানে সরিষা ক্ষেতের দৃষ্টিনন্দন এমন অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই গ্রাম বাংলায় ছুটে আসেন। সরিষা ক্ষেতও যেন একটি বিনোদন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।

আমন ধান কাটার পর জমি চাষ করে এই সরিষার চাষ করা হয়। আবার সরিষা কাটার পর সেই জমিতেই ইরি-বোরো আবাদ করা হবে।  এখন সষিরার হলুদ ফুলে ফুলে ভরে গেছে। দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলাতেই এই সরিষার আবাদ করা হয়। দিনাজপুর জেলায় এ বছর ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ১২ হাজার সাতশ ২৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে।

কৃষিভিত্তিক দিনাজপুরে সারা বছরই নানা ধরনের ফসল উৎপন্ন হয়। এবার জেলায় সরিষা চাষে বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক। কম খরচ আর লাভ বেশির আশায় এবার সরিষা আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন কৃষক। গত কয়েক বছরে এই এলাকার চাষিরা মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন। তাই এবারও সরিষা চাষ বেশি হচ্ছে।

দিনাজপুর বীরগঞ্জের নিজপাড়ার গ্রামের সরিষা চাষি আব্দুল খালেক সরকার বলেন, এ বছর তিন একর জমিতে সরিষার চাষ করেছি। আমন এবং বোরো চাষের মধ্যবর্তী সময়ে সরিষা চাষ করলে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। পরের ফসলের জন্য খুব বেশি চাষ করতে হয় না। জৈব সারও দিতে হয় না। অন্যদিকে মাত্র দুটি চাষ দিয়েই সরিষা চাষ করা যায়। সরিষা আবাদে কোনো প্রকার সেচ লাগে না। সার ও কীটনাশকও প্রয়োগ করতে হয় না। ফলে কম খরচে বেশি লাভ পাওয়া যায়। কম সময়ে সরিষার ফসল ঘরে তোলা যায় বলে একটি জমিতে তিনবার আবাদ করা যায়। আর এসব কারণেই দিন দিন সরিষার আবাদ বাড়ছে।

একই গ্রামের আফসার মাহমুদ  জানায়, সরিষা শাক হিসেবেও বেশ সুস্বাদু। এক একর জমিতে সরিষা আবাদ করতে খরচ হয় মাত্র ১৫ হাজার টাকা। প্রতি একরে ১৫ মণ সরিষা উৎপাদন করেন তারা। বাজারে দুই হাজার টাকা মণ দরে সরিষা বিক্রি হয়। ফলে খরচের দ্বিগুণ লাভ হয় চাষিদের। এ বছর আবহাওয়া অত্যন্ত ভাল থাকায় ফলনও ভালো হবে বলে আশা করছেন চাষিরা।

দিনাজপুর সদরের দক্ষিণ কোতোয়ালির আকবর আলী  জানান, গতবার এক বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছিলাম। এবার তিন বিঘা জমিতে আবাদ করেছি। এ ফসলটা বোরো এবং আমন চাষের জন্য উপকারী। এছাড়া বাড়তি আয়ও হচ্ছে। তৃতীয় ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করে বাড়তি আয় করতে পারছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ফলন বৃদ্ধি পাবে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক মো. তৌহিদুল ইকবাল জানান, কৃষি বিভাগ থেকে এ বছর সরিষা চাষিদের উদ্বুদ্ধ করার কারণে জেলায় সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে । জেলায়  বারি ১৪, বারি ১৫ জাতের সরিষা বেশি আবাদ হয়েছে। শীতে সরিষার তেমন ক্ষতি হয় না। এছাড়াও সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি চাষ করলে ১৫ থেকে ২০ ভাগ ফলন বেড়ে যাবে।

এদিকে দিনাজপুরে সরিষা চাষের সঙ্গে মৌমাছিরও চাষ করা হচ্ছে। এতে করে সরিষার উৎপাদনও বেশি হচ্ছে এবং কৃষকরা অধিক লাভবান হচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর