ইভিএম নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিতর্ক রয়েছে। ভোটদানের ক্ষেত্রে শতভাগ স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তা না থাকায় অনেক দেশ ইভিএম পরিত্যাগ করেছে।

বিশেষ করে গত ১৫ বছরে পৃথিবীর যতগুলো দেশ ইভিএম গ্রহণ করেছে, তার চেয়ে বেশি দেশ ইভিএম বাতিল করেছে। বাতিল করেছে এমন দেশের তালিকায় আছে জার্মানি, স্পেন, ইতালি, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, বেলজিয়াম, নরওয়ে, ভেনেজুয়েলা, ইউক্রেন, মালয়েশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেকগুলো রাজ্য। সম্প্রতি ভারতেও বিরোধী দলগুলো ইভিএমের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছে। বর্তমানে পুরোপুুরি ইভিএম চালু আছে শুধুমাত্র ভারত, ব্রাজিল, ফিলিপাইন এবং এস্তোনিয়ায়।

বিভিন্ন নিবন্ধ ও তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা গেছে, ভোটব্যবস্থাপনাকে সহজতর করার লক্ষ্য থেকেই সর্বপ্রথম ১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম পদ্ধতি চালু হয়। ইভিএম পদ্ধতির সময়কাল প্রায় ৬০ বছর অতিক্রান্ত হলেও বিশ্বের কোনো দেশেই পুরোপুরি মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি এটি। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৪টি দেশ ইভিএম ব্যবহার বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে ১৪টি দেশ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। ১১টি দেশে আংশিক ব্যবহার হচ্ছে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ৫টি দেশে। ভারতের ইকোনমিক টাইমস পত্রিকার অনুসন্ধানী রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের ২০০টি দেশের মধ্যে মাত্র যে ৪টি দেশে ইভিএম ব্যবহার করা হয়, সে সব দেশেও এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা আছে।

উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে ইভিএমের গ্রহণযোগ্য ব্যবহার ঘটেনি। শতকরা ৯০ ভাগ দেশে ইভিএম পদ্ধতি নেই। যে কয়েকটি দেশ এটি চালু করেছিল তারাও এখন এটি নিষিদ্ধ করেছে। আয়ারল্যান্ডও ২০০২-২০০৪ সালে ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিতর্কের মুখে দুটি কমিশন গঠন করে। কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইভিএম যন্ত্র বিশ্বাসযোগ্য নয়। প্রযুক্তিগত রক্ষাকবচ অপ্রতুল। ২০০৬ সালে আয়ারল্যান্ড পরিত্যাগ করে। জার্মানির ফেডারেল কোর্ট ইভিএমকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা দেয়।

২০০৯ সালে ফিনল্যান্ডের সুপ্রিমকোর্ট ৩টি মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনের ফলাফল অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা করে। ২০০৭ সালে নেদারল্যান্ডস ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করেছে কারচুপির কারণে নয়, বরং এই মেশিন টেম্পারিং করা যাবে না—এ ধরনের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না বলে। ড. অ্যালেক্স হালডারমেন আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে ইভিএমের ওপর গবেষণা করে প্রমাণ পেয়েছেন, আমেরিকায় ইভিএম টেম্পারপ্রুফ নয়। ফলে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যেও ইভিএম ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।

বাংলাদেশের ইভিএম : রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি উপেক্ষা করে ২০১০ সালের ১৭ জুন অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে বিগত এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন শামসুল হুদা কমিশনের চালু করা ম্যানুয়াল ইভিএম বাতিল করে নিজেরাই ফিঙ্গারপ্রিন্টযুক্ত ইভিএম তৈরি করে।

দেশেও ইভিএম নিয়ে বিতর্ক :ব্যালটের চেয়ে ইভিএমের খরচ একটু বেশি হলেও নির্বাচনি অনিয়ম দূর করা সম্ভব বলে ইসি মনে করলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বিদ্যমান নির্বাচনি ব্যবস্থাপনায় ইভিএমও অরক্ষিত। বিগত সময়ে ভোটের রাতে কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সিল মারার ঘটনা ঘটলেও এখন দিনে কেন্দ্র দখল করে ইভিএমে জাল ভোট দেওয়া সম্ভব। ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিটে ভোটারের ফিঙ্গার ম্যাচিংয়ের পর ব্যালট ইউনিটে অন্য যে কেউ ভোট দিতে পারেন। দুটি ইউনিটে বিভক্ত ইভিএম, ব্যালট ও কন্ট্রোল ইউনিট। ব্যালট ইউনিটে প্রার্থীদের নাম ও মার্কা সংবলিত ছবি এবং সুইচ থাকবে। কন্ট্রোল ইউনিটে চারটি অংশ থাকতে পারে—প্রসেসর, স্মৃতি, ডিসপ্লে ও ব্যাটারি। ফিঙ্গারপ্রিন্টের পর ভোটার তার পছন্দের মার্কাসংশ্লিষ্ট সুইচে চাপ দেবেন এবং কন্ট্রোল ইউনিট প্রার্থী অনুযায়ী ভোট প্রসেস করে ভোটের হিসাব রাখবে। ভোট শেষে প্রার্থীদের এজেন্টদের উপস্থিতিতে কন্ট্রোল ইউনিট থেকে ভোটের ফলাফল জানা যাবে।

ইভিএমের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ ইত্তেফাককে বলেন, উন্নত দেশগুলো কেন ইভিএম পরিত্যাগ করেছে তা আগে অনুধাবন করতে হবে। ইভিএমে ভোটদানের পর ভোটার কিন্তু সন্তুষ্ট হতে পারেন না।

ইভিএম নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ইভিএমে ভোট কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। ভোটের অনিয়ম দূর করার জন্যই ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। আগামীতে সব নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর