বিশ্বকাপ ব্যর্থতার বলয়ে আটকে বাংলাদেশের ফুটবল

বাঙালী কন্ঠ ডেস্কঃ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের কয়েকটি ম্যাচে ভালোই খেলেছিলেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। কিন্তু ফের হারের বৃত্তেই আটকে গেছেন জামাল ভূঁইয়ারা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ব্যর্থতার একটি বলয়ের মধ্যেই যেন ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ। বারবার দেশের ফুটবলের হতশ্রী চেহারা ফুটে উঠছে। কিন্তু নির্বাক বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কর্মকর্তারা।

মৃতপ্রায় ফুটবলকে টেনে তোলার কোনো চেষ্টা নেই তাদের মধ্যে। ফুটবলের এমন রুগ্নদশায় আজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দর্শকরা। তাই তো বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের সেমিফাইনালের টিকিট বিক্রি হয় না। ৫০ টাকার গ্যালারির টিকিট বিকোয় না ১০ টাকাতেও। কতটা করুণদশা এদেশের আমজনতার প্রিয় খেলা ফুটবলের।

বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিফাইনালে বুরুন্ডির কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। এ নিয়ে টানা তিনটি আসরে সেমিফাইনালের গেরো খুলতে ব্যর্থ হল লাল-সবুজের ফুটবলাররা। বাংলাদেশের ৩-০ গোলের অসহায় আত্মসমর্পণে ব্যথিত হয়েছেন দেশের কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বাফুফের বর্তমান কমিটির কর্মকর্তাদের সমালোচনায় সরব হয়েছেন তারা।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কোচ কামাল বাবু বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের ১৬ কোটি মানুষের। আমরা আজও একজন স্ট্রাইকার জন্ম দিতে পারিনি। সেমিফাইনালে আমাদের ক্লাব লেভেলে উইং ব্যাকে খেলা খেলোয়াড়রা স্ট্রাইকার হিসেবে পুরো ম্যাচ খেলে। পৃথিবীর কোথাও জাতীয় দলে অন্য পজিশনের খেলোয়াড়রা দল বেঁধে পজিশন বদলে খেলে কিনা, আমার জানা নেই।

তবুও আমাদের কর্তা ব্যক্তিরা বলেন, এই দেশে পাঁচজন বিদেশি খেলানোর সিদ্ধান্ত সঠিক। যে দলগুলো থেকে খেলোয়াড় নিয়ে জাতীয় দল গঠন করা হয়, সেই দলগুলোর স্ট্রাইকার পজিশনে বিদেশিদের খেলানো হয়। কারণ ক্লাব অফিশিয়ালরা কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে ভালো ফলের জন্য। আশা করি বাফুফের অফিশিয়ালদের টনক নড়বে এবার। আসলেই পাঁচজন বিদেশি খেলানোর সিদ্ধান্ত ভুল; অন্তত এই দেশে। কারণ আমাদের ফুটবল এখনও তলানিতেই আছে।

এখন যারা আমাদের স্ট্রাইকার, তারা যত বাজেই খেলুক না কেন তাদের সুযোগ দিতে হবে। হতে পারে তারাই একদিন সুযোগ পেতে পেতে আমাদেও দেশের নাম উজ্জ্বল করবে। ক্লাব লেভেলে হয়তো ধরে বেঁধে বিদেশি এনে সাময়িক ফল পাওয়া যাবে। কিন্তু জাতীয় দলকে সমৃদ্ধ করতে হলে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে আমাদেও ছেলেদেও বেশি বেশি খেলার সুযোগ দিতে হবে। আমি এখনও স্বপ্ন দেখি একদিন আমাদেও ছেলেরাই পৃথিবীর বুকে আমাদের লাল-সবুজের পতাকাকে সঠিকভাবে উড়িয়ে আমাদের গর্ব করার সুযোগ করে দেবে।

আর অনুরোধ করছি বাফুফের অফিশিয়ালদের, পঞ্চম শ্রেণির মেহমান কোচ দিয়ে জাতীয় দল চালাবেন না। কারণ ওই অযোগ্য লোকটি যখন আমাদের জাতীয় পতাকা সংবলিত জার্সিটি পরেন, তখন আমাদের বুকে রক্তক্ষরণ হয়। কারণ পৃথিবীর অনেক বড় বড় কোচ এই দেশের জাতীয় দলকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। তারা হয়তো আজকের কোচদের নাম শুনে লজ্জা পাবেন। ভুলে গেলে চলবে না, আমরা যে যত বড় পদবিধারীই হই না কেন, প্রকৃতি এবং ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।’

আকাশ ফ্লগ নামের এক ব্লগার লেখেন, ম্যাচ হারার কারণে এক অযোগ্য ব্যক্তির অসৎ উদ্দেশ্য পুরোপুরি ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। ফাইনালে যেতে পারলেই পুরস্কার- এমন ঘোষণা করেও ফাইনালে না খেলার অন্যতম নেপথ্য কারণ সালাউদ্দিনের কপটতা। ফিফার উইন্ডো নয়- এমন সময়ে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। কারণ তিনি জানেন, এ সময় কোনো দেশই তার মূল একাদশ পাঠাতে পারবে না।

এই সুযোগে কোনোমতে ফাইনাল খেলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ধরনা দিয়ে ফের সভাপতির পদ বাগানোই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য! আপনার (কাজী সালাউদ্দিন) উদ্দেশ্য অসৎ হলে প্রকৃতিও যে আপনার বিরুদ্ধে যাবে, তার অন্যতম উদাহরণ হল বুরুন্ডির বিপক্ষে ম্যাচ। এই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের দুই নিয়মিত সেন্টারব্যাক জ্বর ও কার্ড সমস্যায় খেলতেই পারলেন না। আরেক ব্যাকআপ সেন্টারব্যাকও জ্বরের কারণে নেই দলে। ফলে এক রাইটব্যাক সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলেছেন, যার ফলাফল তো দেখতেই পাচ্ছেন।

মজার বিষয় হল, এক সেন্টারব্যাক স্কোয়াডে থেকেও খেলতে পারেনি সালাউদ্দিনের অত্যন্ত প্রিয় এক ব্যক্তির কারণেই! ভাগ্য আজ হয়তো বাংলাদেশের পক্ষেই থাকত, যদি এই টুর্নামেন্ট আয়োজনে কপটতা না থাকত। অযোগ্যদের ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ারে পরিণত না হতো। তাই আজকের এই হারে অনেকে ব্যথিত হলেও আমি ব্যথিত হইনি। সালাউদ্দিনের কপটতার পরাজয় হয়েছে বলে আমি খুশিই হয়েছি।

ওমর ফারুক সেলিম নামের একজন লেখেন, জেমি ডে ম্যাচ হারার জন্য ঘরোয়া লিগকে দায়ী করেন। কিন্তু আমরা তো আপনার মধ্যেই সমস্যা দেখতে পাই। যখন ঘরোয়া লিগ চলে, তখন তো আপনি নিজ দেশে ছুটি কাটান। আপনি কীভাবে দেখবেন কে লিগে ভালো করল? আর দল গঠন নিয়ে কিছু বলব না। জেমি আপনার উচিত প্রথম ঘরোয়া লিগ দেখা, তারপর মন্তব্য করা।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর