গার্মেন্টস আরো চার হাজার কোটি টাকার সহায়তা চায়

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ চলতি অর্থবছরে রপ্তানিতে নগদ সহায়তা বাড়ানোর পাশাপাশি আয়করও কমানো হয়েছে। এবার নতুন করে রপ্তানি পণ্যে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের ওপর বিনিময় হারে ডলার প্রতি পাঁচ টাকা করে চেয়েছে পোশাক শিল্প মালিকরা। আর্থিক মূল্যে এ সহায়তার পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার। সম্প্রতি এমন অনুরোধ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে চিঠি পাঠিয়েছে গার্মেন্টস শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। গত ১৫ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকেও পাঠানো হয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক স্বাক্ষরিত ঐ চিঠিতে গার্মেন্টস রপ্তানি কমে যাওয়া ও প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে সক্ষমতা কমে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিকারকরা রপ্তানির বিপরীতে বিভিন্ন হারে নগদ সহায়তা পেয়ে আসছেন। চলতি বছর নতুন করে সব ধরনের রপ্তানিতে এক শতাংশ বিশেষ নগদ সহায়তা দেওয়া শুরু করেছে সরকার। নগদ সহায়তার ওপর উেস করও অর্ধেক কমিয়ে ১০ শতাংশের স্থলে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। অন্যদিকে রপ্তানিতে উেস কর এক শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ (০.২৫ শতাংশ) কার্যকর করা হয়েছে। এর ফলে গার্মেন্টস খাত থেকেই সরকারের সম্ভাব্য রাজস্ব ছাড় হবে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। রপ্তানিসহ বিভিন্ন খাতে ছাড় ও অব্যাহতি দেওয়ায় সরকারের রাজস্বও টান পড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এনবিআরের রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। এর চাপে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ বেড়ে গেছে।

দীর্ঘদিন ধরে একই খাতকে প্রণোদনা দিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে। এমনকি সরকারি তরফেও এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর ইআরএফ মিলনায়তনে এক আলোচনায় ইস্যুটি তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের শিল্পপতিদের দাবি বিনিময় হার কমবেশি করেন। আমার পণ্যের জন্য প্রণোদনা দেন। একটি শিল্পের ৪০ বছর পরও সামান্য ‘শক’ নিতে না পারলে সহজাতভাবেই সেই খাত দুর্বল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ প্রক্রিয়ায় সহায়তা দিতে আগ্রহী নন প্রধানমন্ত্রীও। সম্প্রতি তাঁত পণ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পোশাক খাতের সংগঠন বিকেএমইএ’র নেতারা এ প্রসঙ্গটি তুললে প্রধানমন্ত্রী নিজের আনাগ্রহের কথা জানিয়েছেন। বিকেএমইএর পরিচালক ফজলে শামীম এহসান ইত্তেফাককে বলেন, রপ্তানি পণ্যে স্থানীয় মূল্য সংযোজিত অংশের ওপর ডলারের বিনিময় হারে বাড়তি টাকা দেওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা তুলেছি। তবে তিনি আগ্রহী নন। অবশ্য আমাদের সার্বিক চ্যালেঞ্জ বিষয়ে তাকে বিস্তারিত আনুষ্ঠানিকভাবে জানাব।

পোশাক রপ্তানির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সেই হিসেবে এর ওপর ২৫ শতাংশ স্থানীয় মূল্য সংযোজনের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার। বিজিএমইএর হিসাবে, ডলার প্রতি ৫ টাকা করে করে বিনিময় হার দেওয়া হলে স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।

বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক ইত্তেফাককে বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত সক্ষমতা হারাচ্ছি। অন্য দেশগুলোর প্রতিযোগী সক্ষমতা বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের তরফে সহযোগিতা পেলে এ খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

গত কয়েক মাস ধরে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি কমে গেছে। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসেও রপ্তানি কমেছে। এটি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এর ফলে সার্বিকভাবে অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

অবশ্য ডলারের বিনিময় হারের মাধ্যমে সুবিধা দেওয়া নিয়ে মতভেদ রয়েছে গার্মেন্টস মালিকদের মধ্যেও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উদ্যোক্তা বলেন, এর চেয়ে বরং ডলারের দরের বিষয়ে ব্যাংকের সঙ্গে নেগোশিয়েট করা কিংবা এটি উন্মুক্ত করে দিলে, তা আমাদের জন্য সুবিধা বেশি। এটি হবে অনেকটা কার্ব মার্কেটের মতো। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর দেওয়া বিনিময় হার মেনে নিতে হওয়ায় আমরা খোলা বাজারের চেয়ে প্রায় আড়াই টাকা কম পাই। এটি উন্মুক্ত করে দিলে বাড়তি টাকা পাওয়ার সুযোগ হবে। অথচ যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাতে ডলার প্রতি আসবে ৭০ থেকে ৮০ পয়সা।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর