দুইদিনে ২ মাসের বৃষ্টি অস্ট্রেলিয়ায় খরা-দাবানলের জ্বালা মেটাল

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ গত কয়েক মাস ধরেই খরা-দাবানলে জর্জরিত অস্ট্রেলিয়া এবার উল্টো দুর্যোগে পড়েছে। দেশটির পূর্ব উপকূলীয় এলাকাগুলোতে গত দু’দিনেই গড়ে দুই মাসের সমান বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে সেখানকার দাবানলের আগুন নিভলেও এবার ভয়াবহ বন্যার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

গত সপ্তাহে সিডনিতে বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে ওই এলাকায় কয়েক মাস ধরে চলা দাবানলের আগুন প্রায় নিভে গেছে। এছাড়া প্রবল বর্ষণে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম জনবসতিপূর্ণ রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলসের জলাধারগুলোও ফের ভরে উঠেছে।

সিডনি ও এর আশপাশের এলাকায় প্রায় ৪শ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে ওয়ারাগাম্বা বাঁধে পানির পরিমাণ ৪০ শতাংশ থেকে একলাফে বেড়ে ৬০ শতাংশে পৌঁছেছে। সিডনি শহরের প্রায় পাঁচ ভাগের চারভাগ পানিই এই বাঁধ থেকে সরবরাহ করা হয়।

এছাড়া, ক্রমাগত পানিবৃদ্ধির কারণে বন্যা ও ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বিশেষ ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে নিউ সাউথ ওয়েলস ফায়ার সার্ভিসের সিডনি সদর দফতর।

গত সেপ্টেম্বর থেকে দাবানলে জ্বলছে অস্ট্রেলিয়া। এতে অন্তত ৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছে, মারা গেছে ৫০ কোটিরও বেশি প্রাণী। দাবানলের লেলিহান শিখায় ধ্বংস হয়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, পুড়ে ছাই হয়েছে লাখ লাখ একর জমির গাছপালা। গরমের মৌসুম হওয়ায় দাবানলের আগুন নেভাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন দেশটির দমকলকর্মীরা। তাদের জন্য একপ্রকার আশীর্বাদ হয়েই যেন শুরু হয়েছে প্রবল বর্ষণ!অস্ট্রেলিয়ায় খরা-দাবানলের জ্বালা মেটাল ‘দুইদিনে ২ মাসের বৃষ্টি’

 

গত তিন বছর ধরে খরা ও ধূলিঝড়ে ভুগছিল দেশটির দুব্বো অঞ্চল। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, পানি ব্যবহারেও বিধিনিষেধ আরোপ করতে হয়েছিল শহর কর্তৃপক্ষকে। এবার শুষ্ক-রুক্ষ এই শহরেও নেমেছে বৃষ্টির ধারা।

সিডনির ৫শ কিলোমিটার দূরবর্তী গুরিয়া জেলায়ও রৌদ্রমূর্তি দেখিয়েছে প্রচণ্ড খরা। জেমস জ্যাকসন নামে এক কৃষক জানান, এ অঞ্চলটি আবারও সবুজ গাছপালায় ভরে উঠতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, আমার কাছে দুই বছরের ভেড়া আছে, যারা প্রথমবারের মতো সবুজ ঘাস দেখতে পাচ্ছে। তবে মাটির আর্দ্রতা পুরোপুরি ফেরাতে এই বৃষ্টি যথেষ্ট নয়, এমন আরও কয়েকবার দরকার। যদিও এটা অবশ্যই দারুণ শুরু।

প্রবল বৃষ্টিপাতে দাবানল গেলেও সিডনির বিভিন্ন এলাকায় বন্যার কারণে অন্তত ১০ হাজার বাড়িঘর বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এক সপ্তাহের জন্য সেখানকার সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন।

আরও বৃষ্টি দরকার?
২০১৬ সাল থেকেই খরার শিকার নিউ সাউথ ওয়েলসের উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় কুইন্সল্যান্ড। এসব অঞ্চলে নদীর পানি কমে গেছে, বাঁধে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে, ভয়াবহ শুষ্কতার কারণেই বেশি ছড়িয়েছে সাম্প্রতিক দাবানলের আগুন।

এ বছর দাবানলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার একটি হচ্ছে কুরোওয়ান অঞ্চল। সেখানে গত ৭৪ দিন ধরে চলা দাবানলে অন্তত ৩১২টি বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে, পুড়ে ছাই হয়ে গেছে অন্তত পাঁচ লাখ হেক্টর জমির গাছপালা। অবশেষে গত সপ্তাহের বৃষ্টিপাতে থেমেছে এই দাবানল।

australia-2

সোমবার সকালে রাজ্যের অন্তত ৩৩টি জায়গায় এখনও আগুন জ্বলার খবর পাওয়া গেছে। তবে এর তীব্রতা অনেকটাই কমে এসেছে। আশার কথা, এসব অঞ্চলের দিকেই ধীরে ধীরে বৃষ্টিপাত এগিয়ে যাচ্ছে। নিউ সাউথ ওয়েলস ও পার্শ্ববর্তী ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যে বজ্রঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

কনজোলা অঞ্চলের কিছু অংশে বন্যার আশঙ্কায় স্থানীয়দের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে। ওই এলাকাতেই ইংরেজি নববর্ষের রাতে ভয়াবহ দাবানলে বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়েছিল।

তবে আবহাওয়াবিদ জেন গোল্ডিং বলছেন, দেশটিতে আরও বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমি জানি কিছু কৃষক আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। আমাদের যেটা দরকার তা হচ্ছে, আরও বৃষ্টিপাত। বৃষ্টিস্বল্পতায় মাটির এত গভীর পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে যে, বৃষ্টির ধারা আরও চলা দরকার।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর