তিন মাসে ২২ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমল

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ঋণখেলাপিদের গণছাড় দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে নীতিমালা জারি করেছিল, বছরের শেষ সময়ে সেটির সদ্ব্যবহার ভালোই হয়েছে। এতে টানা বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণেও লাগাম দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা, যা ওই সময় পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের ৯.৩২ শতাংশ। তবে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এই তিন মাসে ২২ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমিয়ে ফেলেছে ব্যাংকগুলো।

মূলত বিদ্যমান নীতিমালার পাশাপাশি বিশেষ সুবিধার আওতায় বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়মিত হওয়ায় খেলাপি ঋণের এই উন্নতি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সার্বিক ব্যাংকিং খাতে ২০১৮ সালের সঙ্গে তুলনা করলে ২০১৯ সালে পরিমাণের দিক থেকে খেলাপি ঋণ কিছুটা বেড়েছে। এ সময়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর কমলেও বেড়েছে বেসরকারি ব্যাংকের। এর অর্থ সরকারি ব্যাংকগুলো গণছাড়ে বেশি সাড়া দিয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিষেষ পুনঃ তফসিল ও এককালীন এক্সিট নীতিমালার আওতায় গণছাড় সুবিধার সময়সীমা গতকাল সোমবার শেষ হয়েছে।

সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন ‘খেলাপি ঋণ এক টাকাও বাড়বে না’। কিন্তু জানুয়ারি-মার্চ এ তিন মাসে খেলাপি ঋণ ১৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা বেড়ে প্রথমবারের মতো এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। পরবর্তী তিন মাস অর্থাৎ এপ্রিল-জুন পর্যন্ত এক হাজার ৫৫২ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ বেড়েছে তিন হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার পরও সব মিলিয়ে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ২২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা, যা ওই সময় পর্যন্ত বিতরণকৃত ঋণের ১১.৯৯ শতাংশ ছিল। তবে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এই তিন মাসে ২২ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমিয়ে ফেলেছে ব্যাংকগুলো। এতে আবার খেলাপি ঋণ এক লাখ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশেষ নীতিমালার আওতায় ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে বড় অঙ্কের ঋণ পুনঃ তফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত করেছে ব্যাংকগুলো। বিদ্যমান নীতিমালার আওতায়ও কিছু পরিমাণ খেলাপি ঋণ নিয়মিত হয়েছে। এ ছাড়া বছরের শেষ প্রান্তিকে নগদ আদায় কিছুটা বেড়েছে। কিছু ঋণ অবলোপন করে মূল হিসাব থেকে আলাদা করা হয়েছে। ফলে কমে এসেছে খেলাপি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে গেছে, যা ওই সময় পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের ৯.৩২ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। ফলে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ কমেছে ২১ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। তবে সেপ্টেম্বরের তুলনায় বাড়লেও আগের বছরের পুরো সময়ের চেয়ে বেড়েছে ৪২০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা বা ১০.৩০ শতাংশ। আর ২০১৭ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা বা ৯.৩১ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ করা এক লাখ ৮৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ২৪ শতাংশ বা ৪৩ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে। ২০১৮ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৪৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। গত বছর শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৪৪ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণকৃত ঋণের ৫.৭৮ শতাংশ। ২০১৮ সালে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৩৮ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। এর মানে গত বছর সরকারি খাতের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমলেও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

অন্যদিকে গত বছর শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দুই হাজার ১০৩ কোটি টাকা বা ৫.৭৪ শতাংশ। সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত তিন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ চার হাজার ৫৯ কোটি টাকা বা ১৫.১৩ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল চার হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।

জানা যায়, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে ২০১৯ সালের ১৬ মে ঋণ পুনঃ তফসিল ও এককালীন এক্সিটসংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করা হয়। এ সার্কুলারের আওতায় যেসব ঋণ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মন্দমানে শ্রেণীকৃত রয়েছে সেসব খেলাপির অনুকূলে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট আদায় সাপেক্ষে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১০ বছর মেয়াদে পুনঃ তফসিল এবং ৩৬০ দিন মেয়াদে এককালীন এক্সিট সুবিধা প্রদান করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। পরবর্তী সময় একই বছরের ১৭ নভেম্বর আরেক সার্কুলারে আবেদন করার সময়সীমা আরো ৯০ দিন বৃদ্ধি করা হয়, যা গতকাল সোমবার শেষ হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিকের মতো চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকেও খেলাপি ঋণ আরো কমে আসবে।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর