হাওরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার মাসে পাবে ৩০ কেজি চাল

হাওর অঞ্চলের তিন লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে মাসে ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ করে টাকা দেবে সরকার। আগামী ১০০ দিন বিনামূল্যে ৩৩ থেকে ৩৫ হাজার টন চাল ও নগদ ৫০০ কোটি টাকা হাওরবাসীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। অসময়ে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হাওর এলাকায় কৃষকদের ক্ষতির প্রেক্ষাপটে গতকাল ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সাংবাদিকদের বলেন, ছয় জেলার ক্ষতিগ্রস্ত তিন লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে আগামী ৩১শে জুলাই পর্যন্ত সরকারের ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় মাসে ৩০ কেজি করে চাল এবং ডাল, তেল, নুন কিনতে ৫০০ টাকা করে দেয়া হবে। এছাড়া এসব জেলার ক্ষতিগ্রস্ত আরও (যারা রিলিফ নেবেন না) ১ লাখ ৭১ হাজার ৭১৫ পরিবারকে ওএমএসের মাধ্যমে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজিতে চাল দেয়া হবে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী বলেন, ছয় জেলার মধ্যে চার জেলার (সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনা) কৃষকদের সর্বহারা বলা যেতে পারে। কারণ, তারা বোরো ধানের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু আগাম ?বৃষ্টিতে ধান ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রত্যেক এলাকা আমরা পরিদর্শন করেছি, ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের সমস্যা সমাধানে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করেছি, খোলামেলা কথা বলেছি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবকে সদস্য করে একটি কমিটি করা হয়েছে জানিয়ে মোফাজ্জল হোসেন মায়া বলেন, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব কমিটিতে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি দেখে কী করণীয় সে বিষয়ে কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, সুনাগঞ্জে প্রায় ৮০ থেকে ৮৬ ভাগ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে যেসব ক্রটি ছিল বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তা চিহ্নিত করে সেসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছে। এটা কীভাবে উৎরে ওঠা যায় সেই ব্যবস্থা তারা নিচ্ছে। তাদের পক্ষ থেকে দাবি ছিল ৩ থেকে ৬ মাস খাদ্য দিয়ে সহায়তা করা। আমরা তাদের বলে এসেছি- যত দিন পর্যন্ত পানি না নামবে আপনারা ঘরে ফিরে না যাবেন, স্বাভাবিক জীবনযাপন না করতে পারবেন তত দিন পর্যন্ত খাদ্য ও নানান সহায়তা অব্যাহত রাখব। কারণ খাদ্যে আমাদের কোনো অভাব নেই। পরবর্তী ফসল না ওঠা পর্যন্ত এ কাজ আমরা চালিয়ে যাব। এ দুর্যোগে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মায়া বলেন, কোনো দলের একটা উচ্চপর্যায়ের নেতা হাওর অঞ্চলে গিয়ে পরিদর্শনও করেননি। এক ছটাক চাল বা গম নিয়ে হাজির হননি। আমি তাদের অনুরোধ করব- সকল ভুলভ্রান্তি ভুলে গিয়ে মানুষের সেবার এগিয়ে আসেন। হাওর এলাকাকে ‘দুর্গত অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। হাওরের পানিতে পিএইচের স্বাভাবিক মাত্রা ৬ দশমিক ৫ থেকে ৯ জানিয়ে মৎস ও প্রাণিসম্পদ সচিব মাকসুদুল হাসান খান সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৬ থেকে ১৮ই এপ্রিল পিএইচ-এর মাত্রা ছিল ৫ বা তার নিচে। অক্সিজেনের মাত্রা ছিল দশমিক ০২, অ্যামোনিয়ার মাত্রা ছিল দশমিক ০২ এর নিচে। এর ফলে প্রাথমিক গবেষণার যে ফল দেখা যায়- মূলত ফসল পচে গেছে, তাছাড়া কিছু কীটনাশক থাকতে পারে যার ফলে মাছ মারা যায়, এছাড়া আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। হাওর অঞ্চলে বনায় ১ হাজার ২৭৬ টন মাছের ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে মাকসুদুল বলেন, ৩ হাজার ৮৪৪টি হাঁস মারা গেছে। কৃষি সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্‌ বলেন, পাহাড়ি ঢল প্রতিবছরই মোকাবিলা করতে হয়, এবার এটা তিন সপ্তাহ আগে মোকাবিলা করতে হয়েছে। ফলে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে গেছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা নিমজ্জিত হচ্ছে আবার কোনো কোনো এলাকায় ৪-৫ দিন পরে পানি সরে যাচ্ছে। দুই লাখ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে, চালে ৬ লাখ টন হবে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ খান বলেন, আমাদের বাঁধগুলো ষাটের দশকে করা হয়েছিল। বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে, ক্লাইমেট চেইঞ্জের কারণে উজানের ঢল, বন্যা এসব প্রেক্ষিতে নতুন করে ভাবব। আরও এক মিটার উঁচু করা প্রয়োজন কি না- প্রয়োজনের বাইরে করলেও কিন্তু অসুবিধা হবে। সান্টিফিক্যালি অবস্থা দেখে কী করণীয় সেভাবে ব্যবস্থা নেব। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় অন্যান্যের মধ্যে খাদ্য সচিব, অর্থ সচিব, ত্রাণ সচিব ছাড়াও স্থানীয় সরকার বিভাগ, তথ্য ও অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর