নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর সৃষ্ট আস্থার ঘাটতিকে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তা কাটিয়ে ওঠায় জোর দিচ্ছে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্যদিকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে তাদের সহায়তা করবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এ দুইপক্ষের মধ্যে অতীতে নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সংঘটিত অপরাধের বিচার করার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
আজ বুধবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর ইসি ও সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে একথা জানানো হয়।
ইসির সঙ্গে বৈঠকের পর নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নতুন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য বদ্ধপরিকর। আমরাও আমাদের অবস্থান থেকে সুচারুভাবে সম্পূর্ণ কাজ শেষ করে সংস্কার প্রস্তাব দেব। যেগুলো তারা কিছু বাস্তবায়ন করবে আবার কিছু সরকার বাস্তবায়ন করবে। আর কিছু সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বাস্তবায়ন করবে।’
সংস্কার কমিশন প্রধান জানান ইসি ও তাদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের দায়দায়িত্ব, ক্ষমতা, স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সাধারণভাবে আলোচনা হয়েছে। খুটিনাটি কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র চূড়ান্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কার হওয়া উচিত, আদালতের ভূমিকা কি থাকবে, হলফনামা, ‘না’ ভোট, সংসদীয় আসন সীমানা পুনর্নির্ধারণ, পোস্টাল ব্যালট, প্রবাসী ভোটার, ভোটার তালিকা, নির্বাচনী অপরাধ, এনআইডিসহ নির্বাচনের সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বদিউল আলম বলেন, ‘আমাদের এখনো প্রায় এক মাস সময় আছে। আশা করি এই সময়ের মধ্যে সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে দেব। আমরা উনাদের (ইসি) কিছু মতামত চেয়েছি। উনারা চাইলে কিছু শেয়ার করবেন।’
সাংবাদিকদের ব্রিফ করার এক পর্যায়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আস্থার ঘাটতি আছে। সেটি ফিরিয়ে আনতে হবে। যে জায়গাতে আমরা দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে কিভাবে একটা সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন করা যায়। আপনারাও জানেন প্রেক্ষাপট, আমরাও জানি। মেজর ডেফিশিয়েন্সিগুলো (বড় ঘাটতি) নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
ইসির চোখে সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় ঘাটতিগুলো কি–এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় ডেফিশিয়েন্সি হচ্ছে নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আমাদের আস্থার ঘাটতি। সেটা ফিরিয়ে আনতে হবে।’
সংস্কার কমিশনের কিছু পর্যবেক্ষণ
অতীতে নির্বাচন কমিশন তাদের পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারতো না–এই বিষয়ে ইসিকে কোনো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা আছে। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের খাতিরে তারা দিনকে রাত, রাতকে দিন করা ছাড়া সবই করতে পারে। আমাদের আইনে বলা আছে এবং আদালতের রায়েও সুস্পষ্ট বলা আছে। যেখানে অস্পষ্টতা আছে যেখানে গ্যাপ (শূন্যতা) আছে সেগুলো তারা পূরণ করতে পারে।’
নতুন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংস্কার কমিশন প্রধান বলেন, ‘মনে হলো আমাদের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নাই ৷ উনারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। আমরা সহায়তা করতে একপায়ে রাজি আছি।’
বদিউল আলম মজুমদার সাংবাদিকদের আরো বলেন, ‘নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেকগুলো অপরাধ হয়েছে। এই অপরাধের বিচার হওয়া দরকার। সেটাও আমরা আলোচনা করেছি।’
বিগত তিন কমিশন নাকি সব কমিশনকে বিচারের আওতায় আনা হবে–এমন প্রশ্নের জবাবে সংস্কার কমিশন প্রধান বলেন, ‘যারাই অপরাধ করেছে সকলকে আসতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, ৭৩ থেকে ৯০ ধারার মধ্যে নির্বাচনের অপরাধের বিষয়গুলো বর্ণনা আছে। এগুলোর যথাযথ প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
ফলাফল হওয়ার পরে আর অপরাধের শাস্তি দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না–আগের কমিশনের এ যুক্তির বিষয়টি সামনে আনলে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘তারা ইচ্ছে করলেই করতে পারতেন। গেজেট হওয়ার আগে তদন্ত সাপেক্ষে তারা নির্বাচন বাতিল করতে পারতেন। তদন্ত সাপেক্ষে পুনঃনির্বাচন দেওয়ার ক্ষমতাও তাদের আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সে ক্ষমতা তারা ব্যবহার করেননি।’
নির্বাচনের সময় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না–এ প্রশ্নের জবাবে সংস্কার কমিশন প্রধান নেতিবাচক জবাব দেন।
সভায় সিইসি, চার নির্বাচন কমিশনার ও সংস্কার কমিশনের অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন।