ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আত্রাইয়ে ৩ গ্রামের মানুষের নদী পারাপারের ভরসা নৌকা

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শেষ সীমানায় অবস্থিত অঞ্চলের নাম বিশিয়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের দর্শনগ্রাম, নন্দীগ্রাম ও তেমুখ এই ৩ গ্রামের অবস্থান আত্রাই নদীর উত্তর দিকে। এখানে নেই কোন আধুনিক মান সম্মত রাস্তা। আত্রাই নদী নৌকা করে পার হয়ে নিজের বাড়িতে যেতে হয়।
আর এই নদী পার হওয়ার একমাত্র ভরসা নৌকা। এই নৌকায় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গ্রামবাসীসহ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন পারাপার হতে হয়। নৌকা ডুবির মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনাও একাধিকবার ঘটেছে। তবুও উপায় নেই, বাধ্য হয়ে পরাপার হতে হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই গ্রামের মানুষদের নিত্যদিনের প্রয়োজনে মিটাতে এই নদী পার হতে হয়। নদীর দক্ষিণ দিকে অবস্থিত সুদরানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সুদরানা উচ্চ বিদ্যালয়। তাই প্রতিদিনই শিক্ষার্থীদের এই নদী পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয় আবার বিদ্যালয় শেষ করে বাড়ি ফিরতে হয় এই নৌকা করেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নেই বলে এই গ্রামগুলোর মাঠে উৎপাদিত বিভিন্ন ফসলের নায্য মূল্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। আত্রাই সদর থেকে শেষ সীমানা পর্যন্ত এই নদীতে কোন স্থানে পারাপারের জন্য নেই ব্রিজ।
সুদরানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. রাসেল জানায় আমরা প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে এই নদী পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করি। অনেক সময় আমাদেরকেই নৌকা বেয়ে নদী পার হতে হয়।
সুদরানা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আওয়াল হোসেন জানায় আমাদের এই ঘাটে একটি ব্রিজ খুবই প্রয়োজন। শুধু শিক্ষার্থীরাই নন এই কটি গ্রামের মানুষের ভাগ্যের চাকা বদলাতে হলে নদীর এই ঘাটে ব্রিজ প্রয়োজন। একাধিকবার এই ঘাটে নৌকাডুবি হয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে অনেককেই।
দর্শন গ্রামের প্রিন্স জানান, একটি অঞ্চলের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠিই হলো আধুনিক মান সম্মত যোগাযোগ ব্যবস্থা। নদীর এই সুদরানা ঘাটে একটি ব্রিজের অভাবে এই প্রত্যন্ত অঞ্চল অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এই গ্রামের মানুষগুলো সব কিছু থেকেই বর্তমানে বঞ্চিত রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই খারাপ যে কোন মূমুর্ষূ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই পথের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
নন্দীগ্রামের বাসিন্দা মো. আবুল কালাম জানান, কারো নজর এই প্রত্যন্ত অবহেলিত অঞ্চলের মানুষের দিকে নেই। আজ আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয় বলেই আমরা সকল কিছু থেকে বঞ্চিত। আধুনিকতার কোন ছোঁয়াই আজও আমাদেরকে স্পর্শ করতে পারেনি। আমরা জানিনা কবে এই ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণসহ আধুনিক মানের যোগাযোগ ব্যবস্থা পাবো।
সুদরানা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনছার আলী জানান, এই ঘাটে একটি ব্রিজের জন্য আমরা বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে লিখিত আবেদন করেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। শিক্ষার্থীসহ গ্রামবাসীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পার হতে হয়। সত্যিই এই কটি গ্রাম আধুনিক যোগাযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই এই অঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন ঘটাতে হলে আগে এই গ্রামগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোখলেছুর রহমান জানান, সুদরানা ঘাট কিংবা এর কাছাকাছি কোন স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাপ্তরিক প্রক্রিয়া চলছে। আশা রাখি নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের কাজটি অতিদ্রুত শুরু হবে।

 

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

আত্রাইয়ে ৩ গ্রামের মানুষের নদী পারাপারের ভরসা নৌকা

আপডেট টাইম : ০৫:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০১৭
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শেষ সীমানায় অবস্থিত অঞ্চলের নাম বিশিয়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের দর্শনগ্রাম, নন্দীগ্রাম ও তেমুখ এই ৩ গ্রামের অবস্থান আত্রাই নদীর উত্তর দিকে। এখানে নেই কোন আধুনিক মান সম্মত রাস্তা। আত্রাই নদী নৌকা করে পার হয়ে নিজের বাড়িতে যেতে হয়।
আর এই নদী পার হওয়ার একমাত্র ভরসা নৌকা। এই নৌকায় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গ্রামবাসীসহ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন পারাপার হতে হয়। নৌকা ডুবির মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনাও একাধিকবার ঘটেছে। তবুও উপায় নেই, বাধ্য হয়ে পরাপার হতে হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই গ্রামের মানুষদের নিত্যদিনের প্রয়োজনে মিটাতে এই নদী পার হতে হয়। নদীর দক্ষিণ দিকে অবস্থিত সুদরানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সুদরানা উচ্চ বিদ্যালয়। তাই প্রতিদিনই শিক্ষার্থীদের এই নদী পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয় আবার বিদ্যালয় শেষ করে বাড়ি ফিরতে হয় এই নৌকা করেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নেই বলে এই গ্রামগুলোর মাঠে উৎপাদিত বিভিন্ন ফসলের নায্য মূল্য থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। আত্রাই সদর থেকে শেষ সীমানা পর্যন্ত এই নদীতে কোন স্থানে পারাপারের জন্য নেই ব্রিজ।
সুদরানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. রাসেল জানায় আমরা প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় করে এই নদী পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করি। অনেক সময় আমাদেরকেই নৌকা বেয়ে নদী পার হতে হয়।
সুদরানা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. আওয়াল হোসেন জানায় আমাদের এই ঘাটে একটি ব্রিজ খুবই প্রয়োজন। শুধু শিক্ষার্থীরাই নন এই কটি গ্রামের মানুষের ভাগ্যের চাকা বদলাতে হলে নদীর এই ঘাটে ব্রিজ প্রয়োজন। একাধিকবার এই ঘাটে নৌকাডুবি হয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে অনেককেই।
দর্শন গ্রামের প্রিন্স জানান, একটি অঞ্চলের উন্নয়নের মূল চাবিকাঠিই হলো আধুনিক মান সম্মত যোগাযোগ ব্যবস্থা। নদীর এই সুদরানা ঘাটে একটি ব্রিজের অভাবে এই প্রত্যন্ত অঞ্চল অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এই গ্রামের মানুষগুলো সব কিছু থেকেই বর্তমানে বঞ্চিত রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই খারাপ যে কোন মূমুর্ষূ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই পথের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
নন্দীগ্রামের বাসিন্দা মো. আবুল কালাম জানান, কারো নজর এই প্রত্যন্ত অবহেলিত অঞ্চলের মানুষের দিকে নেই। আজ আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয় বলেই আমরা সকল কিছু থেকে বঞ্চিত। আধুনিকতার কোন ছোঁয়াই আজও আমাদেরকে স্পর্শ করতে পারেনি। আমরা জানিনা কবে এই ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণসহ আধুনিক মানের যোগাযোগ ব্যবস্থা পাবো।
সুদরানা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনছার আলী জানান, এই ঘাটে একটি ব্রিজের জন্য আমরা বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে লিখিত আবেদন করেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। শিক্ষার্থীসহ গ্রামবাসীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পার হতে হয়। সত্যিই এই কটি গ্রাম আধুনিক যোগাযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই এই অঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন ঘটাতে হলে আগে এই গ্রামগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোখলেছুর রহমান জানান, সুদরানা ঘাট কিংবা এর কাছাকাছি কোন স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাপ্তরিক প্রক্রিয়া চলছে। আশা রাখি নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের কাজটি অতিদ্রুত শুরু হবে।