ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইয়োস্যুমোতো ইয়াসুহিরো-এর কবিতা ॥ ভাষান্তর: আশরাফুল মোসাদ্দেক

[কবি ইয়োস্যুমোতো ইয়াসুহিরো (Yotsumoto Yasuhiro) ১৯৫৯ সালে জাপানের ওসাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বেড়ে ওঠেন হিরোশিমায়। কৈশোরেই তিনি কাব্যচর্চা শুরু করেন এবং ১৯৯১ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ A Laughing Bug প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত তার মোট ছয়টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো Starboard of my Wife (2006) এবং Golden House (2004)। বেশ কিছু পুরস্কার তিনি অর্জন করেছেন যার মধ্যে Hagiwara Sakutaro Award in Japan হলো অন্যতম। তার কবিতা ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, সারবিয়ান, রুমানিয়ানসহ অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে তিনি Poetry International Web—Japan-এর জাতীয় সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। আট বছর আমেরিকায় বসবাসের পর এখন তিনি জার্মানির মিউনিখেস পরিবারে বসবাস করছেন। নিচের কবিতাগুলো ইংরেজি থেকে ভাষান্তরিত করা হয়েছে।]
স্ত্রীকে পাঠ করা

একজন স্ত্রী শব্দে কম্পোজকৃত নয়, তাই
উপন্যাসের মতো নয় যা ভোর পর্যন্ত লাগে
একে উপভোগ করতে, কিন্তু ও-কে সারারাতে
পাঠ করা সম্ভব নয়

কবিতার কঠিন চরণের মতো
বারবার পড়ে তবে বুঝে নিতে হয়
কিন্তু তা ভিন্নরকম যদিও দেখতে মনে হয় সমগোত্রীয়

গতকাল গাড়ি চালনার সময়
জ্যামে থেমে থাকার সময়
এক মুহূর্তের জন্য শ্রবণ করলাম পাখির ডানা ঝাপটানো
আহ্, আমি মনে করি

ওই আহ্ শব্দটি শুধু এক মুহূর্তের জন্য, কিন্তু
এর জন্য প্রয়োজন অতীন্দ্রিয় বোধ, কিছু মনে করবেন না
আমার স্ত্রী যে আমার সন্মুখে হয় ঘুমাচ্ছিল বা জেগে ছিল

এটি কি ঔদ্ধত্য কোনো ব্যক্তিকে পাঠ করা?
না ওর অভিব্যক্তি অথবা অঙ্গভঙ্গি
কিন্তু ওই ব্যক্তি অর্থাৎ আমার স্ত্রী-কে পাঠ করতে গিয়ে
সন্তুষ্ট হতে পারিনি শুধুমাত্র একত্রে বসবাস ব্যতিত

স্ত্রী আমাকে বলে টেবিলের ওপার থেকে
স্ত্রী বাক্যহীন দোলে ও এদিক-ওদিক ফিরে বিছানায়
মনে হয়
অপেক্ষমাণ অনুগত এক মহিলা পেশ হতে চাইছে যা দেখছি না আমি

নিঃশ্বাসে খোঁদাই করছে প্রতিটি বাক্য
দৈনন্দিন বাস্তবতাকে বিরামচিহ্নসহ
এ খসড়া আমার স্ত্রীর জীবনের পাতাকে উলটিয়ে দেয়
অনুধাবন করতে চাই কিন্তু দেখতে নয় বরং শব্দগুলোকে
আমি ও আমার স্ত্রী থেকে অনেক দূরে একটি শান্ত স্থানে
যেখানে প্রশাখার ঘ্রাণ তুষারের মধ্য দিয়ে বাতাসে বিস্তারিত হয়
আমি আমার স্ত্রী-কে পাঠ করতে চাই
মিউজিয়ামে রমণী

তোমার সাথে দেখা হওয়া নিঃসন্দেহে
আমার ভাগ্যের এক বিশালতম অভিঘাত
কিন্তু অবাক হই সংরক্ষণটিও কি সত্যি?
মিউজিয়ামে অপরাহ্নে বিভিন্ন রমণীদের জীবন প্রদর্শিত হচ্ছিল
পুরোহিত এক মহিলা সন্তুকে সময় দিচ্ছিল এবং
পানশালার এক মহিলা মালিক চেষ্টা করছিল বিচ্ছিন্ন করতে
জাপটাজাপটি করা পুরুষগুলোকে
দ্যানে, নগ্ন উন্মুক্ত পায়ে
স্নানমগ্ন ছিল সোনালি বৃষ্টিতে

এর মধ্যে যে কেউ একজন ছিলে তুমি
একটি গাছের গুঁড়ির পিছনে এক মা তার শিশুকে স্তন্যপান করাচ্ছিল
বয়স্ক পিতা এবং একটি গাধা উঁকি দিয়ে দেখছিল
ভ্রমণে স্বল্প থেমে
পিছনের পর্দার অন্তরালে পায়ুকামীদের প্রজ্বলিত সড়কে
বেসামাল মাতাল ছেনালিপনায় মত্ত হয়েছিলো কন্যাদের সাথে
যখন তার স্ত্রী ফিরে তাকালো ও একটি লবণের স্তম্ভে রূপান্তরিত হলো

এসব বিষয় তুমি বাদ দিয়েছো এবং এখনো স্বপ্ন দেখছ
পেইন্টের মতো একসাথে মিশে যেতে
কোনো দৈবঘটনা নয়
নির্লজ্জ পাত্রে যৌনানন্দের পুলকের ব্যবহার নয়
আবেগঅস্বীকার করে তুমি এগিয়ে গেলে পায়েপায়ে
শরীর

সময় প্রবাহিত হলে
এটি কোমল হয়ে আসে
এবং খানিকটা হিমেল

কপোল
ঘাড়
স্কন্ধ থেকে কনুই
ওষ্ঠ যুগল
যদিও প্রেমময়
ধীরে ধীরে
হারায় পরত

ছাল তুলে ছড়ায়
শাখায় ঝুলে থাকে
কম্পিত করে
বক্ষদ্বয় এবং আত্মা
সারারাতভর নদীর শব্দ

হঠাৎ প্রভাতে উদিত হয়
টেনে নেয় বলিদানে
উৎসর্গ ধারণ করে রক্তের গন্ধ
এক আকস্মিক বিরতি
শক্ত পাথরের মতো
এটি বড় হয়

দেখায়
টর্চের মতো
আপেল

এটি ছিলো সর্প যা ইভ-কে প্ররোচিত করেছিলো, কিন্তু
পঁচিশ বছর আগে আমার স্ত্রী-কে প্ররোচিত করেছিলো কে?
সেইদিন যখন তাইফুন থামিয়ে দিয়েছিলো ট্রেন
ও হেঁটে গিয়েছিলো সারাপথ পরবর্তী স্টেশন পর্যন্ত
ঘাড়ে একটি টেনিসব্যাগ নিয়ে
ও আমার দরোজায় টোকা দিয়েছিলো যেনো নিজেকে বিসর্জন দেবে

নিষিদ্ধ ফলের পরিবর্তে
ক্রেনেচ পেইন্ট করেছে এডাম
ধরে আছে সোনালি ফল একহাতে
এবং অন্যহাতে ঘসছে তার চুলময় মস্তক
এটি খুবই স্পষ্ট যে
তার কোনো ক্লু ছিল না
অস্থায়ী মৃদুমন্দ হাওয়ায়

দু’টো কামড় দিল
একটি কামড়, দু’টো, তিনটি এবং আরও একটি
আপেলবৃক্ষটি এখনো চারা যখন আমরা হেঁটে যাচ্ছিলাম
এটি লম্বা এবং শক্ত হচ্ছে
আমাদের কন্যা সহজেই এতে চড়তে পারে
প্রতিবছর অসংখ্য কীট এর ফল খায়
মাটিতে পতিত হয়, পাখিরা চঞ্চুতে তুলে নিয়ে যায়

এ ফল ভক্ষণজনিত জ্ঞানের কারণে
দু’জন খুব চিন্তিত আর চারপাশের সবাই শান্ত
মৃদু তরঙ্গে বয়ে যাওয়া হ্রদের ওপার থেকে স্ত্রীর চক্ষুগুলো থেকে
পালিয়ে যায় এক দ্রুত ছায়া
একটি ঘরের দু’কোণ থেকে আমরা দ্রুত পাজামা পরিবর্তন করি

এবং তখন একে অন্যের পোশাক খুলে ফেলি
দাঁড়াই পাশাপাশি বুনোরাতে
এটি কি কোনো আশীর্বাদ?
অথবা কোনো শাস্তি?
আমার হাতে এখনো আপেল
যার চারপাশে এখনো অসংখ্য দাঁতের দাগ । কবিতা ভাষান্তর: আশরাফুল মোসাদ্দেক

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ইয়োস্যুমোতো ইয়াসুহিরো-এর কবিতা ॥ ভাষান্তর: আশরাফুল মোসাদ্দেক

আপডেট টাইম : ০৯:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ মে ২০১৬

[কবি ইয়োস্যুমোতো ইয়াসুহিরো (Yotsumoto Yasuhiro) ১৯৫৯ সালে জাপানের ওসাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বেড়ে ওঠেন হিরোশিমায়। কৈশোরেই তিনি কাব্যচর্চা শুরু করেন এবং ১৯৯১ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ A Laughing Bug প্রকাশিত হয়। এ পর্যন্ত তার মোট ছয়টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো Starboard of my Wife (2006) এবং Golden House (2004)। বেশ কিছু পুরস্কার তিনি অর্জন করেছেন যার মধ্যে Hagiwara Sakutaro Award in Japan হলো অন্যতম। তার কবিতা ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, সারবিয়ান, রুমানিয়ানসহ অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে তিনি Poetry International Web—Japan-এর জাতীয় সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। আট বছর আমেরিকায় বসবাসের পর এখন তিনি জার্মানির মিউনিখেস পরিবারে বসবাস করছেন। নিচের কবিতাগুলো ইংরেজি থেকে ভাষান্তরিত করা হয়েছে।]
স্ত্রীকে পাঠ করা

একজন স্ত্রী শব্দে কম্পোজকৃত নয়, তাই
উপন্যাসের মতো নয় যা ভোর পর্যন্ত লাগে
একে উপভোগ করতে, কিন্তু ও-কে সারারাতে
পাঠ করা সম্ভব নয়

কবিতার কঠিন চরণের মতো
বারবার পড়ে তবে বুঝে নিতে হয়
কিন্তু তা ভিন্নরকম যদিও দেখতে মনে হয় সমগোত্রীয়

গতকাল গাড়ি চালনার সময়
জ্যামে থেমে থাকার সময়
এক মুহূর্তের জন্য শ্রবণ করলাম পাখির ডানা ঝাপটানো
আহ্, আমি মনে করি

ওই আহ্ শব্দটি শুধু এক মুহূর্তের জন্য, কিন্তু
এর জন্য প্রয়োজন অতীন্দ্রিয় বোধ, কিছু মনে করবেন না
আমার স্ত্রী যে আমার সন্মুখে হয় ঘুমাচ্ছিল বা জেগে ছিল

এটি কি ঔদ্ধত্য কোনো ব্যক্তিকে পাঠ করা?
না ওর অভিব্যক্তি অথবা অঙ্গভঙ্গি
কিন্তু ওই ব্যক্তি অর্থাৎ আমার স্ত্রী-কে পাঠ করতে গিয়ে
সন্তুষ্ট হতে পারিনি শুধুমাত্র একত্রে বসবাস ব্যতিত

স্ত্রী আমাকে বলে টেবিলের ওপার থেকে
স্ত্রী বাক্যহীন দোলে ও এদিক-ওদিক ফিরে বিছানায়
মনে হয়
অপেক্ষমাণ অনুগত এক মহিলা পেশ হতে চাইছে যা দেখছি না আমি

নিঃশ্বাসে খোঁদাই করছে প্রতিটি বাক্য
দৈনন্দিন বাস্তবতাকে বিরামচিহ্নসহ
এ খসড়া আমার স্ত্রীর জীবনের পাতাকে উলটিয়ে দেয়
অনুধাবন করতে চাই কিন্তু দেখতে নয় বরং শব্দগুলোকে
আমি ও আমার স্ত্রী থেকে অনেক দূরে একটি শান্ত স্থানে
যেখানে প্রশাখার ঘ্রাণ তুষারের মধ্য দিয়ে বাতাসে বিস্তারিত হয়
আমি আমার স্ত্রী-কে পাঠ করতে চাই
মিউজিয়ামে রমণী

তোমার সাথে দেখা হওয়া নিঃসন্দেহে
আমার ভাগ্যের এক বিশালতম অভিঘাত
কিন্তু অবাক হই সংরক্ষণটিও কি সত্যি?
মিউজিয়ামে অপরাহ্নে বিভিন্ন রমণীদের জীবন প্রদর্শিত হচ্ছিল
পুরোহিত এক মহিলা সন্তুকে সময় দিচ্ছিল এবং
পানশালার এক মহিলা মালিক চেষ্টা করছিল বিচ্ছিন্ন করতে
জাপটাজাপটি করা পুরুষগুলোকে
দ্যানে, নগ্ন উন্মুক্ত পায়ে
স্নানমগ্ন ছিল সোনালি বৃষ্টিতে

এর মধ্যে যে কেউ একজন ছিলে তুমি
একটি গাছের গুঁড়ির পিছনে এক মা তার শিশুকে স্তন্যপান করাচ্ছিল
বয়স্ক পিতা এবং একটি গাধা উঁকি দিয়ে দেখছিল
ভ্রমণে স্বল্প থেমে
পিছনের পর্দার অন্তরালে পায়ুকামীদের প্রজ্বলিত সড়কে
বেসামাল মাতাল ছেনালিপনায় মত্ত হয়েছিলো কন্যাদের সাথে
যখন তার স্ত্রী ফিরে তাকালো ও একটি লবণের স্তম্ভে রূপান্তরিত হলো

এসব বিষয় তুমি বাদ দিয়েছো এবং এখনো স্বপ্ন দেখছ
পেইন্টের মতো একসাথে মিশে যেতে
কোনো দৈবঘটনা নয়
নির্লজ্জ পাত্রে যৌনানন্দের পুলকের ব্যবহার নয়
আবেগঅস্বীকার করে তুমি এগিয়ে গেলে পায়েপায়ে
শরীর

সময় প্রবাহিত হলে
এটি কোমল হয়ে আসে
এবং খানিকটা হিমেল

কপোল
ঘাড়
স্কন্ধ থেকে কনুই
ওষ্ঠ যুগল
যদিও প্রেমময়
ধীরে ধীরে
হারায় পরত

ছাল তুলে ছড়ায়
শাখায় ঝুলে থাকে
কম্পিত করে
বক্ষদ্বয় এবং আত্মা
সারারাতভর নদীর শব্দ

হঠাৎ প্রভাতে উদিত হয়
টেনে নেয় বলিদানে
উৎসর্গ ধারণ করে রক্তের গন্ধ
এক আকস্মিক বিরতি
শক্ত পাথরের মতো
এটি বড় হয়

দেখায়
টর্চের মতো
আপেল

এটি ছিলো সর্প যা ইভ-কে প্ররোচিত করেছিলো, কিন্তু
পঁচিশ বছর আগে আমার স্ত্রী-কে প্ররোচিত করেছিলো কে?
সেইদিন যখন তাইফুন থামিয়ে দিয়েছিলো ট্রেন
ও হেঁটে গিয়েছিলো সারাপথ পরবর্তী স্টেশন পর্যন্ত
ঘাড়ে একটি টেনিসব্যাগ নিয়ে
ও আমার দরোজায় টোকা দিয়েছিলো যেনো নিজেকে বিসর্জন দেবে

নিষিদ্ধ ফলের পরিবর্তে
ক্রেনেচ পেইন্ট করেছে এডাম
ধরে আছে সোনালি ফল একহাতে
এবং অন্যহাতে ঘসছে তার চুলময় মস্তক
এটি খুবই স্পষ্ট যে
তার কোনো ক্লু ছিল না
অস্থায়ী মৃদুমন্দ হাওয়ায়

দু’টো কামড় দিল
একটি কামড়, দু’টো, তিনটি এবং আরও একটি
আপেলবৃক্ষটি এখনো চারা যখন আমরা হেঁটে যাচ্ছিলাম
এটি লম্বা এবং শক্ত হচ্ছে
আমাদের কন্যা সহজেই এতে চড়তে পারে
প্রতিবছর অসংখ্য কীট এর ফল খায়
মাটিতে পতিত হয়, পাখিরা চঞ্চুতে তুলে নিয়ে যায়

এ ফল ভক্ষণজনিত জ্ঞানের কারণে
দু’জন খুব চিন্তিত আর চারপাশের সবাই শান্ত
মৃদু তরঙ্গে বয়ে যাওয়া হ্রদের ওপার থেকে স্ত্রীর চক্ষুগুলো থেকে
পালিয়ে যায় এক দ্রুত ছায়া
একটি ঘরের দু’কোণ থেকে আমরা দ্রুত পাজামা পরিবর্তন করি

এবং তখন একে অন্যের পোশাক খুলে ফেলি
দাঁড়াই পাশাপাশি বুনোরাতে
এটি কি কোনো আশীর্বাদ?
অথবা কোনো শাস্তি?
আমার হাতে এখনো আপেল
যার চারপাশে এখনো অসংখ্য দাঁতের দাগ । কবিতা ভাষান্তর: আশরাফুল মোসাদ্দেক