ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নদীই আমাদের রক্ষাকবচ

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ নদীমাতৃক বাংলাদেশের বেশিরভাগ নদীর অবস্থা ভালো নেই। অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে অনেক নদী। অনেক নদী হারিয়ে গেছে। একসময়ের খরস্রোতা নদীর বুকজুড়ে দেখা দিচ্ছে ধু ধু বালুচর।

শুকনো মৌসুমে পানি নেই। বর্ষা মৌসুমে এই নদীই আবার দুই কূল ছাপিয়ে দুর্দশার কারণ হয়। বর্ষার পানি ধারণ করার ক্ষমতা নেই বেশিরভাগ নদীর।

সুষ্ঠু পরিচর্যার অভাবে নাব্যতা হারিয়েছে অনেক নদী। এমন অনেক নদী আছে, যে নদীতে একসময় স্টিমারসহ বড় বড় নৌকা চলত; সেসব নদী আজ হেঁটে পার হওয়া যায়। বাংলাদেশের মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা নদীর আজ খুবই করুণ দশা।

চর পড়ে এবং দখল-দূষণের কারণে নদ-নদীগুলো এখন মৃতপ্রায়। নদীর ধারে গড়ে উঠেছে বড় বড় কলকারখানা। যখন যেভাবে প্রয়োজন তখন সেভাবে নদীকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

নদী ভরাট করে দখলে মেতে উঠেছে অনেকে। বাংলাদেশ যে একটি নদীমাতৃক দেশ- এ কথা বলার আর কোনো উপায় নেই এখন। এ দেশ এখন নদীবৈরী দেশে পরিণত হয়েছে যেন।

দেশের স্বার্থেই নদী রক্ষা করতে হবে। বাঁচাতে হবে সব নদী। সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

নদী সংস্কার ও পরিচর্যার গুরুত্ব বিবেচনা করেই গত ৩ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় বছরব্যাপী নদী খননের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক সভাপতি শেখ হাসিনা। নদীর প্রবাহ বা পানি ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।

নদীর পানি যখন কমে যায়, তখন চর পড়ে বা অন্যান্য কারণে পানি বেড়ে গেলে ভাঙন শুরু হয়। তাই নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে বড় নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পুরো বছরের পরিকল্পনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এ দেশের প্রকৃতি, জনজীবন, চাষাবাদ প্রায় সবই নদীনির্ভর। জীবন-জীবিকা, সংস্কৃতি-শিল্প-সাহিত্য সবকিছুর সঙ্গে আমাদের নদীগুলোর সম্পর্ক রয়েছে। তাই বলা হয়, নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না; অর্থাৎ জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। বহু নদী এর মধ্যেই মরে গেছে। বহু নদী মৃত্যুর পথে।

নদীগুলোর গভীরতা কমে যাওয়ায় বন্যা ও জলাবদ্ধতা অবধারিত হয়ে পড়ে। হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়। এ কারণে নদী রক্ষাকে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকে খুব দ্রুত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।

সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পগুলোর কাজের গতি যেমন ত্বরান্বিত করতে হবে, তেমনি এসব কাজের জবাবদিহি বাড়াতে হবে। নদী দখল-দূষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

দেশে ছোট-বড় যে তিন শতাধিক নদী আছে, সেগুলো আজ বিপন্ন এবং এর মূলে রয়েছে নদী দখল করে ঘরবাড়ি, দোকানপাট, উপনগরী গড়ে তোলা। ভরাটের কারণে পানিপ্রবাহ কমে গেছে ও ক্রমেই কমছে। স্রোতস্বিনী নদীগুলোতে জেগে উঠছে ছোট-বড় চর। নাব্যতা হারাচ্ছে নদী।

দূষণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে ছোট-বড় ১৭৫টি নদী মৃতপ্রায়। তাছাড়া প্রতি বছরই দু’-একটি করে নদী মরে যাচ্ছে বা শুকিয়ে যাচ্ছে।

পানিপ্রবাহের জটিলতার পাশাপাশি আমাদের অপরিণামদর্শী কার্যক্রমও নদীমৃত্যুর অন্যতম কারণ। কাজেই নদী বাঁচাতে দেশের প্রত্যেক মানুষকেই সচেতন হতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকাও দরকার। তবে নিজেরা আগে ঠিক হলে বিশ্ববাসীর সহযোগিতা চাওয়া যাবে।

নদী বাংলাদেশের প্রাণ। কাজেই দেশের প্রাণশক্তি রক্ষা করতে হলে নদী দখল বন্ধ এবং নদী দূষণ রোধ করতেই হবে।

ড. মোজাম্মেল হক খান : কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সাবেক সিনিয়র সচিব, জ্বালানি, স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

নদীই আমাদের রক্ষাকবচ

আপডেট টাইম : ০৪:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর ২০২০

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ নদীমাতৃক বাংলাদেশের বেশিরভাগ নদীর অবস্থা ভালো নেই। অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে অনেক নদী। অনেক নদী হারিয়ে গেছে। একসময়ের খরস্রোতা নদীর বুকজুড়ে দেখা দিচ্ছে ধু ধু বালুচর।

শুকনো মৌসুমে পানি নেই। বর্ষা মৌসুমে এই নদীই আবার দুই কূল ছাপিয়ে দুর্দশার কারণ হয়। বর্ষার পানি ধারণ করার ক্ষমতা নেই বেশিরভাগ নদীর।

সুষ্ঠু পরিচর্যার অভাবে নাব্যতা হারিয়েছে অনেক নদী। এমন অনেক নদী আছে, যে নদীতে একসময় স্টিমারসহ বড় বড় নৌকা চলত; সেসব নদী আজ হেঁটে পার হওয়া যায়। বাংলাদেশের মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা নদীর আজ খুবই করুণ দশা।

চর পড়ে এবং দখল-দূষণের কারণে নদ-নদীগুলো এখন মৃতপ্রায়। নদীর ধারে গড়ে উঠেছে বড় বড় কলকারখানা। যখন যেভাবে প্রয়োজন তখন সেভাবে নদীকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

নদী ভরাট করে দখলে মেতে উঠেছে অনেকে। বাংলাদেশ যে একটি নদীমাতৃক দেশ- এ কথা বলার আর কোনো উপায় নেই এখন। এ দেশ এখন নদীবৈরী দেশে পরিণত হয়েছে যেন।

দেশের স্বার্থেই নদী রক্ষা করতে হবে। বাঁচাতে হবে সব নদী। সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

নদী সংস্কার ও পরিচর্যার গুরুত্ব বিবেচনা করেই গত ৩ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় বছরব্যাপী নদী খননের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক সভাপতি শেখ হাসিনা। নদীর প্রবাহ বা পানি ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।

নদীর পানি যখন কমে যায়, তখন চর পড়ে বা অন্যান্য কারণে পানি বেড়ে গেলে ভাঙন শুরু হয়। তাই নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে বড় নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পুরো বছরের পরিকল্পনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এ দেশের প্রকৃতি, জনজীবন, চাষাবাদ প্রায় সবই নদীনির্ভর। জীবন-জীবিকা, সংস্কৃতি-শিল্প-সাহিত্য সবকিছুর সঙ্গে আমাদের নদীগুলোর সম্পর্ক রয়েছে। তাই বলা হয়, নদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না; অর্থাৎ জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। বহু নদী এর মধ্যেই মরে গেছে। বহু নদী মৃত্যুর পথে।

নদীগুলোর গভীরতা কমে যাওয়ায় বন্যা ও জলাবদ্ধতা অবধারিত হয়ে পড়ে। হাজার হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়। এ কারণে নদী রক্ষাকে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকে খুব দ্রুত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।

সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পগুলোর কাজের গতি যেমন ত্বরান্বিত করতে হবে, তেমনি এসব কাজের জবাবদিহি বাড়াতে হবে। নদী দখল-দূষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

দেশে ছোট-বড় যে তিন শতাধিক নদী আছে, সেগুলো আজ বিপন্ন এবং এর মূলে রয়েছে নদী দখল করে ঘরবাড়ি, দোকানপাট, উপনগরী গড়ে তোলা। ভরাটের কারণে পানিপ্রবাহ কমে গেছে ও ক্রমেই কমছে। স্রোতস্বিনী নদীগুলোতে জেগে উঠছে ছোট-বড় চর। নাব্যতা হারাচ্ছে নদী।

দূষণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে ছোট-বড় ১৭৫টি নদী মৃতপ্রায়। তাছাড়া প্রতি বছরই দু’-একটি করে নদী মরে যাচ্ছে বা শুকিয়ে যাচ্ছে।

পানিপ্রবাহের জটিলতার পাশাপাশি আমাদের অপরিণামদর্শী কার্যক্রমও নদীমৃত্যুর অন্যতম কারণ। কাজেই নদী বাঁচাতে দেশের প্রত্যেক মানুষকেই সচেতন হতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকাও দরকার। তবে নিজেরা আগে ঠিক হলে বিশ্ববাসীর সহযোগিতা চাওয়া যাবে।

নদী বাংলাদেশের প্রাণ। কাজেই দেশের প্রাণশক্তি রক্ষা করতে হলে নদী দখল বন্ধ এবং নদী দূষণ রোধ করতেই হবে।

ড. মোজাম্মেল হক খান : কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সাবেক সিনিয়র সচিব, জ্বালানি, স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়