ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বপ্নময় হোক শিশুদের জীবন

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আজ ১২ জুন বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় দিবসটি পালিত হচ্ছে বাংলাদেশেও। শিশুর মৌলিক অধিকার রক্ষার পাশাপাশি শিশুশ্রম বন্ধ করাই দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য। শিশুদের যে হাতে বই-খাতা-কলম থাকার কথা, আমাদের দেশে বিভিন্ন কারণে সেই হাতে শিশুরা উঠিয়ে নিচ্ছে হাতুড়ি, ভাঙছে ইট, কাজ করছে শ্রমিক হয়ে।

দরিদ্র ঘরে জন্ম নেওয়ায় পেটের তাগিদে অথবা শ্রমের বিনিময়ে অন্ন সংস্থানের লক্ষ্যে বাধ্য হয়ে যোগ দিচ্ছে কায়িক শ্রমে। মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি অনীহা দেখা দিলে পড়াশোনার খরচজনিত আর্থিক জটিলতায় বাবা-মা শিশু সন্তানদের বিভিন্ন কাজে দিয়ে দেন। শিশুশ্রমের কুফল সম্পর্কে সামাজিক ও পারিবারিক অসচেতনতার কারণে অতি অল্প বয়সে শিশুরা নেমে পড়ে শ্রমবাজারে।

বর্তমানের করোনা সংকটে পারিবারিক আয়ে বিপর্যয় নেমে আসায় আরও অনেক শিশু বাধ্য হয়ে যোগ দিচ্ছে বঞ্চনামূলক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে, যা ভবিষ্যতে তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

শিশুশ্রমের ফলে শিশুদের দৈহিক ক্ষতি হয় এবং মানসিক চাপ বাড়তে থাকে। ফলে তাদের শারীরিক, মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি অবনতি ঘটে নৈতিকতার। তারা সুন্দর ও নিরাপদ শৈশব থেকে বঞ্চিত হয়। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সুন্দর পরিবেশ না পেলে শিশুর যথার্থ বিকাশ ঘটে না। বর্তমান করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে সবচেয়ে নাজুক হয়ে গেছে শিশুদের জীবন। এটি তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

শিশুশ্রম প্রতিরোধ সংক্রান্ত এই দিনটি শুধু দিবস হিসাবে পালন না করে শিশুদের সার্বিক অবস্থার পরিবর্তনের লক্ষ্যে করণীয় নির্ধারণে পালন করা উচিত। বর্তমান বাস্তবতায় নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন- সংকটের সময় শিশুদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদান, দরিদ্র পরিবারের জন্য সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুযোগ, পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিশুদের মানসম্পন্ন শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

সরকারি-বেসরকারি স্কুল-মাদ্রাসার বেতন বাতিল, প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি মাধ্যমিক পর্যায়ে উপবৃত্তি কার্যক্রম গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নসহ শিশুদের পুনরায় শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। সংশ্লিষ্ট আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে শিশুশ্রম অনেকাংশে কমে আসবে।

সর্বোপরি সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজ কর্তৃক জনগণের মধ্যে সচেতনতা ও গণজাগরণ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তাছাড়া মানুষের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। এসবের মধ্য দিয়ে আজকের শিশুকে আগামীর স্বপ্নতোরণে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

মো. জাহিদুল ইসলাম : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

স্বপ্নময় হোক শিশুদের জীবন

আপডেট টাইম : ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুন ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আজ ১২ জুন বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় দিবসটি পালিত হচ্ছে বাংলাদেশেও। শিশুর মৌলিক অধিকার রক্ষার পাশাপাশি শিশুশ্রম বন্ধ করাই দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য। শিশুদের যে হাতে বই-খাতা-কলম থাকার কথা, আমাদের দেশে বিভিন্ন কারণে সেই হাতে শিশুরা উঠিয়ে নিচ্ছে হাতুড়ি, ভাঙছে ইট, কাজ করছে শ্রমিক হয়ে।

দরিদ্র ঘরে জন্ম নেওয়ায় পেটের তাগিদে অথবা শ্রমের বিনিময়ে অন্ন সংস্থানের লক্ষ্যে বাধ্য হয়ে যোগ দিচ্ছে কায়িক শ্রমে। মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি অনীহা দেখা দিলে পড়াশোনার খরচজনিত আর্থিক জটিলতায় বাবা-মা শিশু সন্তানদের বিভিন্ন কাজে দিয়ে দেন। শিশুশ্রমের কুফল সম্পর্কে সামাজিক ও পারিবারিক অসচেতনতার কারণে অতি অল্প বয়সে শিশুরা নেমে পড়ে শ্রমবাজারে।

বর্তমানের করোনা সংকটে পারিবারিক আয়ে বিপর্যয় নেমে আসায় আরও অনেক শিশু বাধ্য হয়ে যোগ দিচ্ছে বঞ্চনামূলক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে, যা ভবিষ্যতে তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

শিশুশ্রমের ফলে শিশুদের দৈহিক ক্ষতি হয় এবং মানসিক চাপ বাড়তে থাকে। ফলে তাদের শারীরিক, মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি অবনতি ঘটে নৈতিকতার। তারা সুন্দর ও নিরাপদ শৈশব থেকে বঞ্চিত হয়। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সুন্দর পরিবেশ না পেলে শিশুর যথার্থ বিকাশ ঘটে না। বর্তমান করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে সবচেয়ে নাজুক হয়ে গেছে শিশুদের জীবন। এটি তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

শিশুশ্রম প্রতিরোধ সংক্রান্ত এই দিনটি শুধু দিবস হিসাবে পালন না করে শিশুদের সার্বিক অবস্থার পরিবর্তনের লক্ষ্যে করণীয় নির্ধারণে পালন করা উচিত। বর্তমান বাস্তবতায় নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন- সংকটের সময় শিশুদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদান, দরিদ্র পরিবারের জন্য সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুযোগ, পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিশুদের মানসম্পন্ন শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

সরকারি-বেসরকারি স্কুল-মাদ্রাসার বেতন বাতিল, প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি মাধ্যমিক পর্যায়ে উপবৃত্তি কার্যক্রম গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নসহ শিশুদের পুনরায় শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। সংশ্লিষ্ট আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে শিশুশ্রম অনেকাংশে কমে আসবে।

সর্বোপরি সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজ কর্তৃক জনগণের মধ্যে সচেতনতা ও গণজাগরণ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তাছাড়া মানুষের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। এসবের মধ্য দিয়ে আজকের শিশুকে আগামীর স্বপ্নতোরণে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

মো. জাহিদুল ইসলাম : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়