বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ডুমুর খুবই উচ্চমানের ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। বিদেশি এই ফল বাংলাদেশেও চাষ হচ্ছে। ডুমুরের ফারসি ও ইউনানী নাম আনজির। পুষ্টির স্টোরহাউস এবং রোগ নিরাময় অসাধারণ। এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণসম্পন্ন এবং বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজদ্রব্যে পরিপূর্ণ। দিনে তিনটি ডুমুর খেলে সে রোগমুক্ত থাকবে। ভিটামিন-এ এবং ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাবজনিত রোগে এটি বেশ কার্যকরী।
এ প্রসঙ্গে পুষ্টিবিদরা জানান, প্রাকৃতিক এক দারুণ ফল ডুমুর। এটি নরম ও মিষ্টিজাতীয় ফল। ডুমুরের বেশ কয়েকটি প্রজাতির রয়েছে। ফলের আবরণ ভাগ খুবই পাতলা এবং এর অভ্যন্তরে অনেক ছোট ছোট বীজ রয়েছে। এর ফল শুকনো ও পাকা অবস্থায় খাওয়া যায়। উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে এ প্রজাতির গাছ জন্মে। কখনো কখনো জ্যাম এবং স্ন্যাকজাতীয় খাবারে হিসেবে এর ব্যবহার হয়ে থাকে।
প্রজাতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শহর-নগর সর্বত্র ডুমুর পাওয়া যায় না। গ্রামগঞ্জে যেখানে-সেখানে ডুমুর গাছ দেখতে পাওয়া যায়। ডুমুর গাছ কেউ লাগায় না। প্রাকৃতিকভাবে আপনাআপনি হয়। তবে ডুমুর খুবই উপকারি। দুই ধরনের ডুমুর দেখা যায় – গোল ডুমুর ও যজ্ঞ ডুমুর। ডুমুরের পাতা খসখসে হয়। গোল ডুমুরের পাতা লম্বা এবং যজ্ঞ ডুমুরের পাতা গোল। ডুমুর হাটবাজারে কিনতে পাওয়া যায় না।’
প্রাপ্তি সম্পর্কে তিনি জানান, বাংলাদেশে যেটি পাওয়া যায়। সেটি ‘কাকডুমুর’ নামে পরিচিত। ফল আকারে বেশ ছোট এবং খাওয়ার অযোগ্য। এগুলো মূলত পাখিরাই খেয়ে থাকে। তবে বেশ কিছু অঞ্চলে এ ফল তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়। যে ডুমুর ফল হিসেবে খাওয়া হয় তা মধ্যপ্রাচ্যে পাওয়া যায়। এটি আকারে বড় এবং মিষ্টি।
রোগের নামগুলো উল্লেখ করে এ পুষ্টিবিদ বলেন, ডুমুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশক্তি, ভিটামিন এ, বি, শর্করা, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও আয়রন। ডুমুরের রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা।
‘উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে’ অর্থাৎ ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় এটি শারীরিক রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণসহ হাড়ের শক্তি অর্জনে সহায়তা করে। ‘ডায়াবেটিস সমস্যায় উপকারি’ অর্থাৎ গবেষণায় জানা গিয়েছে, নিয়মিত ডুমুর খেলে ইনসুলিন গ্রহণের পরিমাণ কম করতে সাহায্য করে। ‘যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে ডুমুর’ অর্থাৎ প্রতিদিন ডুমুর খেলে শুক্রাণু বৃদ্ধিসহ যৌনশক্তি বৃদ্ধি পায়। ‘হার্ট ভালো রাখে’ অর্থাৎ গবেষণায় জানা গিয়েছে ডুমুর ও ডুমুরের পাতা ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে হার্টকে ভালো রাখে। ‘পেটের সমস্যা দূর করতে’ অর্থাৎ ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ থাকায় পেটের সমস্যা দূরীকরণের পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যাও কমাতে সাহায্য করে।
এ ছাড়াও আরও শারীরিক উপকারগুলো মধ্যে রয়েছে- ‘চর্মের বিবর্ণতা দূর করতে’ অর্থাৎ ডুমুর ছাল পানিসহ সিদ্ধ করে সেই পানি দ্বারা ত্বক ধুলে চর্মের বিবর্ণতা, ক্ষত রোগ, শ্বেতী রোগে উপকার পাওয়া যায়। ‘পরিপাক শক্তি বৃদ্ধি’ অর্থাৎ শুষ্ক ছাল থেঁতো করে চার কাপ পানিতে জ্বাল দেওয়ার পর এক কাপ হলে নামিয়ে ছেঁকে উক্ত নির্যাসটি খেলে উপকার পাওয়া যায়। ‘ফোঁড়া পাকাতে ডুমুর’ অর্থাৎ ডুমুর দুধের সাথে সিদ্ধ করে প্রলেপ দিলে শরীরের ফোঁড়া পেকে যায়। ‘ক্ষুধামন্দা বা অপুষ্টি রোগ দূর করতে’ অর্থাৎ কাঁচা ডুমুরের রস দিনে দু-একবার খাওয়ার পর সেবনে ভালো ফল পাওয়া যায়। ‘ওজন কমাতে সাহায্য করে’ অর্থাৎ প্রচুর খাদ্যআঁশ থাকায় ডুমুর ওজন কমাতে সাহায্য করে। ‘স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে’ অর্থাৎ গবেষণায় জানা গেছে, মেনোপজ পরবর্তী পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ডুমুর।