ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতজনিত অসুখে সাবধানতা

ঠাণ্ডা ও সর্দি

শীতকাল এলেই লেগে থাকে ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশি, জ্বর ইত্যাদি। তীব্র ঠাণ্ডা পড়ার ফলে এখন অনেকের শরীর খারাপ করছে। এই সময় বাতাসে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস থাকে বলে ঠাণ্ডা লাগা, নাক বন্ধ, হাঁচি, কাশি, জ্বর ইত্যাদি হয়। তবে এসবকে পাত্তা না দিলে, সঠিক ওষুধ না খেলে ধীরে ধীরে তা ইনফেকশনে রূপ নিতে পারে।

করণীয়

■   সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে ঘন ঘন হাত-মুখ ধোবেন। সম্ভব হলে হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন।

■   কাশি বা হাঁচির সময় মুখ এবং নাক ঢেকে শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন করুন।

■   ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে রক্ষার জন্য ফ্লু ভ্যাকসিন নিতে পারেন।

■   ভিটামিন সি জাতীয় যেমন—লেবু, কমলা, স্ট্রবেরি, বেদানা, মাল্টা, আঙুর বা সাইট্রাসজাতীয় ফল খাবেন।

■   চিকেন স্যুপ সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য বেশ সহায়ক।

■   নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন।

■   সম্ভব হলে প্রতিদিন আধাঘণ্টা রোদে থাকুন।

■   সুষম খাদ্য খেয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখুন।

■   সর্দি-কাশি-জ্বর হলে অ্যান্টি-হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খাবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

পানিশূন্যতা

শীতকালে বাতাস শুষ্ক থাকে। অন্যদিকে শ্বাস-প্রশ্বাস এবং ত্বকের বাষ্পীভবনের মাধ্যমে দেহে পানির পরিমাণ কমে যায়।

এ জন্য সেই ঘাটতি পূরণের জন্য বাড়তি পানি পানের প্রয়োজন হয়। তবে পানির পিপাসা কমে যায় বলে অনেকে পানি পানের মাত্রা কমিয়ে দেন। ফলে ত্বক শুষ্ক হওয়া, পা, ঠোঁট, ত্বক ফেটে যাওয়া, র্যাশ ওঠা, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাব হলুদ হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের ইনফেকশনসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।করণীয়

■   উষ্ণ এবং হাইড্রেটেড থাকতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে উষ্ণ পানীয় পান করুন।

■   কতটুকু পানি পান করা হলো এ জন্য দাগ দেওয়া বোতল বা পানির পাত্র ব্যবহার করতে পারেন।

■   শিশু, বয়স্করা যথেষ্ট পানি পান করছেন কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

শুষ্ক ত্বক

শীতকালে ত্বকে শুষ্কতার সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক লোক, যাদের ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের মতো রোগ আছে তাদের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে অথবা একজিমা, সোরিয়াসিস, র্যাশ এবং অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

করণীয়

■   শুষ্ক ত্বক প্রতিরোধ করতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

■   দেহকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য প্রচুর পানি পান করুন।

■   গরম পানির দীর্ঘস্থায়ী এক্সপোজার এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি ত্বকের প্রাকৃতিক তেলকে নষ্ট করতে পারে।

মন খারাপ থাকা

শীতকালে সব সময় হতাশা বোধ, ঘুম থেকে উঠে আলসেমি, সব কাজেই অনীহা, শরীরে ও মনে অবসাদ ঘিরে থাকা, মেজাজ খিটখিটে থাকা, অল্পতেই মেজাজ হারিয়ে ফেলাসহ জামাকাপড় বদলানোর মতো প্রতিদিনের ছোটখাটো কাজেও বেশ আলসেমি হয় অনেকের। মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, শীতের সময়ের এই মন খারাপকে বলে সিজনাল অ্যাফেকটিভ ডিস-অর্ডার বা স্যাড।

করণীয়

■ সূর্যালোক পেতে প্রতিদিন কিছুটা সময় রোদে ও বাইরে কাটান।

■ প্রিয়জনের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন।

■ সামাজিকভাবে এমন ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত থাকুন যা আনন্দ দেয়।

■ চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টি-ডিপ্রেশন্ট ওষুধ খেতে পারেন।

তাপমাত্রা কম থাকা

শীতের মাত্রা অতি তীব্র হয়ে গেলে হাইপোথার্মিয়া হতে পারে। অর্থাৎ যখন শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হারে কমে যেতে শুরু করে, ঠিক তখনই হাইপোথার্মিয়া দেখা দেয়। শিশু, বয়স্ক ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের এটি হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।

করণীয়

■ হাইপোথার্মিয়া থেকে মুক্তি পেতে উষ্ণ পোশাক পরুন। ভালোভাবে হাত-পা-মুখ-কান ঢেকে রাখুন।

■ ঠাণ্ডা তাপমাত্রায় দীর্ঘ সময় বাইরে থাকা এড়িয়ে চলুন।

■ শোবার ঘরটি যাতে খুব বেশি শীতল না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে বেশি পাওয়ারের বাল্ব জালিয়ে রাখুন। খুব বেশি ঠাণ্ডা লাগলে রুম হিটার ব্যবহার করুন।

■   অসুস্থ, বয়স্ক মানুষ, ছোট শিশুদের জন্য বেশি সতর্কতা অবলম্বন করুন।

■   আবহাওয়ার পূর্বাভাসের দিকে নজর
রাখুন এবং সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা করুন।

■   কেউ গুরুতর উপসর্গ অনুভব করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা

শীতে শ্বাসযন্ত্রের কিছু সমস্যা হঠাৎ বেড়ে যায়। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ অনেকটা কমে, বাড়ে ধূলিকণার পরিমাণ। সেগুলোই শ্বাসনালি ও ফুসফুসে ঢুকে শ্বাসের সমস্যা বাড়ায়। এ ছাড়াও রাইনোভাইরাস, এডিনোভাইরাস, রেসপিরেটরি সিনসাইটিক্যাল ভাইরাস ইত্যাদির আকর্ষণ থাকে শ্বাসযন্ত্রের প্রতি। ফলে ঠাণ্ডা লাগা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে পানি ঝরা, কাশি, হাঁচি, মাথা ব্যথার সমস্যা, নিউমোনিয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

করণীয়

■   স্বাস্থ্যকর খাবার, বিশেষ করে লেবু, আমলকী, ব্রকোলি, পালংশাক খাওয়ার চেষ্টা করুন।

■   শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে সব সময় উষ্ণ এবং শুষ্ক থাকুন।

■   ধূলাবালি সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলুন। বাড়ির বাইরে বেরোলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন।

■   যদি হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্টের অবস্থা থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ওষুধ এবং ইনহেলারের মাত্রা ঠিক করে নিন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

শীতজনিত অসুখে সাবধানতা

আপডেট টাইম : ০৬:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪
ঠাণ্ডা ও সর্দি

শীতকাল এলেই লেগে থাকে ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশি, জ্বর ইত্যাদি। তীব্র ঠাণ্ডা পড়ার ফলে এখন অনেকের শরীর খারাপ করছে। এই সময় বাতাসে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস থাকে বলে ঠাণ্ডা লাগা, নাক বন্ধ, হাঁচি, কাশি, জ্বর ইত্যাদি হয়। তবে এসবকে পাত্তা না দিলে, সঠিক ওষুধ না খেলে ধীরে ধীরে তা ইনফেকশনে রূপ নিতে পারে।

করণীয়

■   সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে ঘন ঘন হাত-মুখ ধোবেন। সম্ভব হলে হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন।

■   কাশি বা হাঁচির সময় মুখ এবং নাক ঢেকে শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন করুন।

■   ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে রক্ষার জন্য ফ্লু ভ্যাকসিন নিতে পারেন।

■   ভিটামিন সি জাতীয় যেমন—লেবু, কমলা, স্ট্রবেরি, বেদানা, মাল্টা, আঙুর বা সাইট্রাসজাতীয় ফল খাবেন।

■   চিকেন স্যুপ সাধারণ সর্দি-কাশির জন্য বেশ সহায়ক।

■   নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন।

■   সম্ভব হলে প্রতিদিন আধাঘণ্টা রোদে থাকুন।

■   সুষম খাদ্য খেয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখুন।

■   সর্দি-কাশি-জ্বর হলে অ্যান্টি-হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খাবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

পানিশূন্যতা

শীতকালে বাতাস শুষ্ক থাকে। অন্যদিকে শ্বাস-প্রশ্বাস এবং ত্বকের বাষ্পীভবনের মাধ্যমে দেহে পানির পরিমাণ কমে যায়।

এ জন্য সেই ঘাটতি পূরণের জন্য বাড়তি পানি পানের প্রয়োজন হয়। তবে পানির পিপাসা কমে যায় বলে অনেকে পানি পানের মাত্রা কমিয়ে দেন। ফলে ত্বক শুষ্ক হওয়া, পা, ঠোঁট, ত্বক ফেটে যাওয়া, র্যাশ ওঠা, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাব হলুদ হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের ইনফেকশনসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।করণীয়

■   উষ্ণ এবং হাইড্রেটেড থাকতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে উষ্ণ পানীয় পান করুন।

■   কতটুকু পানি পান করা হলো এ জন্য দাগ দেওয়া বোতল বা পানির পাত্র ব্যবহার করতে পারেন।

■   শিশু, বয়স্করা যথেষ্ট পানি পান করছেন কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

শুষ্ক ত্বক

শীতকালে ত্বকে শুষ্কতার সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক লোক, যাদের ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের মতো রোগ আছে তাদের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে অথবা একজিমা, সোরিয়াসিস, র্যাশ এবং অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

করণীয়

■   শুষ্ক ত্বক প্রতিরোধ করতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

■   দেহকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য প্রচুর পানি পান করুন।

■   গরম পানির দীর্ঘস্থায়ী এক্সপোজার এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি ত্বকের প্রাকৃতিক তেলকে নষ্ট করতে পারে।

মন খারাপ থাকা

শীতকালে সব সময় হতাশা বোধ, ঘুম থেকে উঠে আলসেমি, সব কাজেই অনীহা, শরীরে ও মনে অবসাদ ঘিরে থাকা, মেজাজ খিটখিটে থাকা, অল্পতেই মেজাজ হারিয়ে ফেলাসহ জামাকাপড় বদলানোর মতো প্রতিদিনের ছোটখাটো কাজেও বেশ আলসেমি হয় অনেকের। মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, শীতের সময়ের এই মন খারাপকে বলে সিজনাল অ্যাফেকটিভ ডিস-অর্ডার বা স্যাড।

করণীয়

■ সূর্যালোক পেতে প্রতিদিন কিছুটা সময় রোদে ও বাইরে কাটান।

■ প্রিয়জনের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন।

■ সামাজিকভাবে এমন ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত থাকুন যা আনন্দ দেয়।

■ চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টি-ডিপ্রেশন্ট ওষুধ খেতে পারেন।

তাপমাত্রা কম থাকা

শীতের মাত্রা অতি তীব্র হয়ে গেলে হাইপোথার্মিয়া হতে পারে। অর্থাৎ যখন শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হারে কমে যেতে শুরু করে, ঠিক তখনই হাইপোথার্মিয়া দেখা দেয়। শিশু, বয়স্ক ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের এটি হওয়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।

করণীয়

■ হাইপোথার্মিয়া থেকে মুক্তি পেতে উষ্ণ পোশাক পরুন। ভালোভাবে হাত-পা-মুখ-কান ঢেকে রাখুন।

■ ঠাণ্ডা তাপমাত্রায় দীর্ঘ সময় বাইরে থাকা এড়িয়ে চলুন।

■ শোবার ঘরটি যাতে খুব বেশি শীতল না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে বেশি পাওয়ারের বাল্ব জালিয়ে রাখুন। খুব বেশি ঠাণ্ডা লাগলে রুম হিটার ব্যবহার করুন।

■   অসুস্থ, বয়স্ক মানুষ, ছোট শিশুদের জন্য বেশি সতর্কতা অবলম্বন করুন।

■   আবহাওয়ার পূর্বাভাসের দিকে নজর
রাখুন এবং সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা করুন।

■   কেউ গুরুতর উপসর্গ অনুভব করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা

শীতে শ্বাসযন্ত্রের কিছু সমস্যা হঠাৎ বেড়ে যায়। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ অনেকটা কমে, বাড়ে ধূলিকণার পরিমাণ। সেগুলোই শ্বাসনালি ও ফুসফুসে ঢুকে শ্বাসের সমস্যা বাড়ায়। এ ছাড়াও রাইনোভাইরাস, এডিনোভাইরাস, রেসপিরেটরি সিনসাইটিক্যাল ভাইরাস ইত্যাদির আকর্ষণ থাকে শ্বাসযন্ত্রের প্রতি। ফলে ঠাণ্ডা লাগা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে পানি ঝরা, কাশি, হাঁচি, মাথা ব্যথার সমস্যা, নিউমোনিয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

করণীয়

■   স্বাস্থ্যকর খাবার, বিশেষ করে লেবু, আমলকী, ব্রকোলি, পালংশাক খাওয়ার চেষ্টা করুন।

■   শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে সব সময় উষ্ণ এবং শুষ্ক থাকুন।

■   ধূলাবালি সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলুন। বাড়ির বাইরে বেরোলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন।

■   যদি হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্টের অবস্থা থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ওষুধ এবং ইনহেলারের মাত্রা ঠিক করে নিন।