বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ চট্টগ্রামসহ দেশের বেশ কয়েকটি শহরে গত কয়েক দিনের জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দৈনন্দিন জীবন। চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন সড়কের কোথাও কোথাও কোমর সমান পানির উঠে যাওয়ায় কারণে যাতায়াতের জন্য নৌকার উপর নির্ভর করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকছে না। তাই অনেকাংশে বেড়ে গেছে নৌকার বেচাকেনা। সরকারি অফিসও এর বাইরে নয়। সম্প্রতি চট্টগ্রামের কর অফিসের কর্মীরা যাতায়াতের জন্য নৌকা কিনেছে। এবার নৌযানটি এনেছে পুলিশ সুপার অফিসের কর্মীরা।
অফিসের কাজ সারতে প্যাডল নৌকা ব্যবহার করছেন জেলা পুলিশ সুপার অফিসের কর্মকর্তারা। পুলিশ সুপার অফিসের সামনেই ভিড়ছে নৌকা।
কয়েকঘণ্টা বৃষ্টি হলেই পানি উঠে যায় নগরীর হালিশহর জেলা পুলিশ লাইনে। পুলিশ সুপারের কক্ষের ভেতরে কখনো হাঁটু আবার কখনো বুক–সমান পানি চলাচল করছে। পানির নীচে তলিয়ে গেছে অস্ত্রাগার, রেশন স্টোর, পুলিশের ব্যারাক আর যানবাহন। এ অবস্থায় পুলিশ লাইন্সের পুকুরে থাকা প্যাডল নৌকাটিই তুলে আনা হয়েছে সড়কে।
জেলা পুলিশ সুপারের স্থায়ী কার্যালয় হচ্ছে নগরীর নাসিরাবাদে। গত মার্চ মাসে শুরু হয়েছে চারতলা পুরনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ। তাই গত মার্চ মাস থেকে হালিশহর পুলিশ লাইনে অস্থায়ী কার্যালয়ে বসছেন এসপিসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জেলা পুলিশের মাসিক অপরাধ সভা, কল্যাণ সভা, সমন্বয় সভাসহ সার্বিক কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে এই কার্যালয়েই।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. রেজাউল মাসুদ তার ফেসবুকের ওয়ালে লিখেছেন, টানা বৃষ্টি চলছে তিনদিন ধরে, অফিসে যেতে হচ্ছে অনেক রাস্তা ঘুরে, রাস্তায় কোথাও পায়ের গোড়ালী সম পানি কোথাও হাঁটু পানি কোথাও বা তারও বেশি, রাস্তার ভাঙা খানা–খন্দ ছোট বড় গর্ত মাড়িয়ে পোর্ট কানেক্টিং হয়ে কখনও অলংকার এ কে খান মোড় ঘুরে কোনরকমে অফিস করছি হালিশহরের পুলিশ লাইন্সে।
জেলা পুলিশের ট্রাফিক ইউনিট, ডিবি, ডিএসবিসহ সিনিয়র সকল পুলিশ কর্মকর্তাদের অফিসও এখন এই হালিশহর পুলিশ লাইন্সেই। তাছাড়া রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স এর কমান্ড্যান্টের (এসপি) কার্যালয় তো আগে থেকেই এই পুলিশ লাইন্সেই।
পুলিশ অফিসের নিচতলার দশটি কক্ষের সব ক’টিতেই পানি জমে আছে। ভবনের সামনেও পানি। ভারী বৃষ্টিতে ভবনের উত্তর ও দক্ষিণ দিকের সীমানা প্রাচীরের কয়েক ফুট উপরে পানি উঠেছে। তুমুল বৃষ্টির মধ্যেও বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাফিকের জরিমানা দিতে আসা, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, পাসপোর্টের কাজে আসেন অনেকে, পুলিশ সুপারের সাথে সাক্ষাতেও অনেকে আসেন। কিন্তু ফটকে কোমর–সমান পানি দেখে ফিরে যান তারা। অতিসম্প্রতি শুরু হওয়া ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবলদের মাঠ পর্যায়ের মৌলিক প্রশিক্ষণও ব্যাহত হচ্ছে।
হালিশহর পুলিশ লাইন্সে নিয়মিত এক হাজার পুলিশ সদস্য থাকেন। তাদের মেইনটেন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট, ডিউটি ওয়েলফেয়ার পিটি প্যারেড, থাকা খাওয়া নানা কর্মযজ্ঞে অনেককে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়।
উইম্যান সাপোর্ট সেন্টারের কম্পিউটারসহ মূল্যবান কাগজপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। দ্বিতীয় তলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের রুমে পানি না উঠলেও সেখানেও স্বস্তি নেই। কারণ নিচতলার নোংরা পানি মাড়িয়েই তাদের দোতলায় উঠতে হচ্ছে। জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয়ে একাকার হয়ে যায় পুরো পুলিশ লাইন্স। জুন মাসের শুরু থেকেই এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের। বর্ষা শুরুর পর থেকে পুলিশ সদস্য, পুলিশিং কার্যক্রম, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং আইনি সহায়তায় আগত লোকজনের কষ্টের শেষ নেই।