ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গোপন দানে সওয়াব বেশি

সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়াকে সবচেয়ে বড় ইবাদত বলে উল্লেখ করেছে ইসলাম।

অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার মর্যাদা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা নিজের সম্পদ দিনে বা রাতে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে তাদের পুরস্কার প্রতিপালকের কাছে আছে। তাদের কোনো ভয় নেই। তাদের কোনো চিন্তাও নেই,’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-২৭৪)।

হাদিসে রাসূলে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি বিধবা, গরিব, অভাবী ও অসহায়কে সাহায্য করতে গিয়ে আল্লাহর ইবাদতে সময় দিতে পারে না, সে রাত জেগে নফল সালাত আদায় ও দিনভর রোজা রাখার সমান সওয়াব পাবে,’ (বুখারি)।

পবিত্র কুরআনে বলা এমনসব লোভনীয় প্রতিদানের আশায় বন্যাসহ বিভিন্ন দুর্যোগে অনেকেই মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। শুধু আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সামর্থ্যানুযায়ী নিজের কষ্টার্জিত টাকা তুলে দিচ্ছেন গরিব-দুঃখী-অসহায় মানুষের হাতে। এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার কাজ। অনেক বড় সওয়াবের কাজ।

দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেকের আচরণ লোক দেখানো দানকারীর মতো হয়ে যাচ্ছে। দেখা যায়, একশ পরিবারকে সাহায্য করে নেতা-পাতি নেতা সবাই ফটোশুট করছে। ফটো তোলা শেষে সে ছবি ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বহু প্রশংসনীয় কমেন্ট ও লাইক পড়ছে সে ছবিতে। এতে করে যারা সাহায্যপ্রার্থী তাদের করুণ মুখখানি ছড়িয়ে পড়ছে দেশ-বিদেশে সবার কাছে।

এসব দেখে কষ্ট পান দান নিতে আসা অসহায় মানুষজন। অজান্তেই তাদের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে এক বুক দীর্ঘশ্বাস।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, দানের কথা প্রচার কর না এবং দান নিতে আসা মানুষজনকে কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান ওই ব্যক্তির মতো ব্যর্থ কর না, যে নিজের ধন সম্পদ কেবল লোক দেখানোর জন্যই ব্যয় করে, (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-২৬৪)।

প্রকাশ্য দানের চেয়ে গোপন দান আল্লাহ পছন্দ করেন বেশি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর তবে তা ভালো। আর যদি গোপনে দান কর তাহলে আরও ভালো, (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-২৭১)।

গোপন দানের মর্যাদা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন যখন আরশের ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না তখন আল্লাহতায়ালা সাত শ্রেণির মানুষকে তাঁর আরশের নিচে আশ্রয় দেবেন। তাদের মধ্যে একজন হল ওই ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করত, ডান হাত দান করত বাম হাত টেরও পেত না (বুখারি)।

অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, গোপন দান বড়ই বরকতময়। গোপন দানে আল্লাহর অভিমান কমে যায় (তাবরানি)। তাই আসুন! আমরা লোক দেখানো দান না করে প্রভুকে সন্তুষ্ট করার দান করি। আল্লাহতায়ালা আমাদের দান করার মানসিকতা তৈরি করার তাওফিক দিন। আমিন।

 

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

গোপন দানে সওয়াব বেশি

আপডেট টাইম : ১২:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৪

সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়াকে সবচেয়ে বড় ইবাদত বলে উল্লেখ করেছে ইসলাম।

অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার মর্যাদা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা নিজের সম্পদ দিনে বা রাতে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে তাদের পুরস্কার প্রতিপালকের কাছে আছে। তাদের কোনো ভয় নেই। তাদের কোনো চিন্তাও নেই,’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-২৭৪)।

হাদিসে রাসূলে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি বিধবা, গরিব, অভাবী ও অসহায়কে সাহায্য করতে গিয়ে আল্লাহর ইবাদতে সময় দিতে পারে না, সে রাত জেগে নফল সালাত আদায় ও দিনভর রোজা রাখার সমান সওয়াব পাবে,’ (বুখারি)।

পবিত্র কুরআনে বলা এমনসব লোভনীয় প্রতিদানের আশায় বন্যাসহ বিভিন্ন দুর্যোগে অনেকেই মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। শুধু আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সামর্থ্যানুযায়ী নিজের কষ্টার্জিত টাকা তুলে দিচ্ছেন গরিব-দুঃখী-অসহায় মানুষের হাতে। এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার কাজ। অনেক বড় সওয়াবের কাজ।

দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেকের আচরণ লোক দেখানো দানকারীর মতো হয়ে যাচ্ছে। দেখা যায়, একশ পরিবারকে সাহায্য করে নেতা-পাতি নেতা সবাই ফটোশুট করছে। ফটো তোলা শেষে সে ছবি ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বহু প্রশংসনীয় কমেন্ট ও লাইক পড়ছে সে ছবিতে। এতে করে যারা সাহায্যপ্রার্থী তাদের করুণ মুখখানি ছড়িয়ে পড়ছে দেশ-বিদেশে সবার কাছে।

এসব দেখে কষ্ট পান দান নিতে আসা অসহায় মানুষজন। অজান্তেই তাদের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে এক বুক দীর্ঘশ্বাস।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, দানের কথা প্রচার কর না এবং দান নিতে আসা মানুষজনকে কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান ওই ব্যক্তির মতো ব্যর্থ কর না, যে নিজের ধন সম্পদ কেবল লোক দেখানোর জন্যই ব্যয় করে, (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-২৬৪)।

প্রকাশ্য দানের চেয়ে গোপন দান আল্লাহ পছন্দ করেন বেশি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর তবে তা ভালো। আর যদি গোপনে দান কর তাহলে আরও ভালো, (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-২৭১)।

গোপন দানের মর্যাদা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন যখন আরশের ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না তখন আল্লাহতায়ালা সাত শ্রেণির মানুষকে তাঁর আরশের নিচে আশ্রয় দেবেন। তাদের মধ্যে একজন হল ওই ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করত, ডান হাত দান করত বাম হাত টেরও পেত না (বুখারি)।

অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, গোপন দান বড়ই বরকতময়। গোপন দানে আল্লাহর অভিমান কমে যায় (তাবরানি)। তাই আসুন! আমরা লোক দেখানো দান না করে প্রভুকে সন্তুষ্ট করার দান করি। আল্লাহতায়ালা আমাদের দান করার মানসিকতা তৈরি করার তাওফিক দিন। আমিন।