দেশে সংসদীয় কাঠামোয় পাঁচ বছর পরপর জাতীয় নির্বাচন হয়। সংসদের মেয়াদ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সংবিধানের ৭২(৩)অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি পূর্বে ভেঙে না দিয়ে থাকলে প্রথম বৈঠকের তারিখ হতে পাঁচ বছর অতিবাহিত হলে সংসদভেঙে যাবে। এই অনুচ্ছেদে সংসদের মেয়াদকাল পাঁচ বছর উল্লেখ করা হয়েছে। তবে জাতীয় সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছরের পরিবর্তে চার বছর হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
তিনি বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বের মেয়াদ সংবিধানে যে পাঁচ বছর আছে, তা চার বছর হওয়া উচিত। তার প্রশ্ন, পৃথিবীর বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রে মেয়াদ যদি চার বছর হতে পারে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশেও রাষ্ট্র পরিচালনার মেয়াদ চার বছর হতে অসুবিধা কোথায়? এর পরেই সংসদের মেয়াদ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। সরকারের সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার প্রস্তাবে সংসদের মেয়াদ প্রসঙ্গ উঠে আসতে পারে। তবে রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, সংবিধানের মীমাংসিত বিষয় নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিতে হবে।
বাংলাদেশ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও যুক্তরাজ্যের সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক রাষ্ট্রে সংসদের মেয়াদ চার বছর। কেউ কেউ বলছেন, একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। চার বছর মেয়াদের সংসদে নির্বাচনের প্রস্তুতি তখন তিন বছর পরেই শুরু হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে জনগণের কাছে সরকারের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান সময়ের আলোকে বলেন, যে যার মতো কথা বলতে পারেন। একটি দল জনগণের জন্য কাজ করতে চাইলে তো দশ বছরও লাগতে পারে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সময়ের আলোকে বলেন, সংবিধানে আমাদের পাঁচ বছর পরপর সাধারণ নির্বাচন। সংসদের মেয়াদ চার বছর কিংবা পাঁচ বছর এসব নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। যখন সংস্কার কমিশন এ ধরনের প্রস্তাব করবে, তখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন হয়ে থাকে। সংসদের মেয়াদ চার বছর হলে তিন বছর পরেই জাতীয় নির্বাচন করার প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
বিএনপির যুগগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য খায়রুল কবির খোকনও সময়ের আলোকে বলেন, সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ও সংবিধানের মৌলিক বিষয়। সংসদের মেয়াদ চার বছর করতে হলে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতেহবে। এজন্য গণভোটের প্রয়োজন হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, ইউরোপ আমেরিকায় চার বছর মেয়াদি সরকার রয়েছে। এই পরিবর্তনে ভালো-মন্দ বিবেচনায় নিতে হবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ সময়ের আলোকে বলেন, সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর। পাশ্ববর্তী দেশগুলোতেও পাঁচ বছর। একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজন বেশ ব্যয়বহুল। দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স সময়ের আলোকে বলেন, সংসদের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর, যা সংবিধানের একটি মীমাংসিত বিষয়। উপদেষ্টা পরিষদের সামনে আরও অনেক ইস্যু আছে। সেগুলো সমাধান করলে জাতি আরও বেশি উপকৃত হবে। মীমাংসিত ইস্যু নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারবিষয়ক কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার সময়ের আলোকে বলেন, সংসদের মেয়াদসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত সংবিধান সংস্কার কমিশনের এখতিয়ার। সেখানে এ ধরনের কিছু এলে নির্বাচন ব্যবস্থায় বিবেচনায় নেওয়া হবে।