ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৃষ্টি আর উচ্ছেদে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বিপাকে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির পর রাজধানীর ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের এখন দুর্দিন চলছে। কর্দমাক্ত পরিবেশে ফুটপাতের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ। আর যা দু-একটি খোলা আছে সেখানে নেই ক্রেতা।

এছাড়াও কোনো ঘোষণা ছাড়াই প্রায়ই উচ্ছেদের কারণে ভোগান্তি আরো কয়েকগুণ বেড়েছে বলে দাবি হকারদের। একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে উচ্ছেদে চরম বিপাকে পড়েছেন নিন্ম আয়ের মানুষেরা।

রাজধানীর ফার্মগেট, কাওরানবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, মহাখালী, শান্তিনগর, মতিঝিল, কমলাপুর ও বায়তুল মোকাররমসহ কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ স্থানে ফুটপাতে বসা দোকানপাট বন্ধ। গত কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে এসব ফুটপাতের মার্কেটগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

যদিও গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টি কমতে শুরু করে। তারপরও শুক্রবার দেখা গেছে রাজধানীর বেশিরভাগ ফুটপাতের দোকান পাট বন্ধ।

কথা হয় মৌচাক আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের সামনের দোকানি রহমান শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই ব্যবসা থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে নিজের সংসার চলে। দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন তিনি। আবার বাড়িতেও বাবা-মার কাছে টাকা পাঠাতে হয়।

কিন্তু বর্ষা মৌসুমে এমনিতে বিক্রি কম তারপরও কয়েকদিন একটানা বৃষ্টি হওয়ায় গত এক সপ্তাহে তিনি এক টাকার পণ্যও বিক্রি করতে পারেননি। নতুন সময়কে তিনি বলেন, প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়ে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে থাকি। কিন্তু কয়েকদিন কেনাবেচা না হওয়ায় টাকা-পয়সা সব শেষ। বেশিদিন কোনো দোকানি বাকি দিতে চান না। ফলে এখন খুব বাজে অবস্থায় পড়েছেন তিনি।

বায়তুল মোকাররমের সামনে পাঞ্জাবি বিক্রি করেন সোলামমান হোসেন। তিনি বলেন, গত ৮ দিনে মাত্র ২০০ টাকার একটি পাঞ্জাবি বিক্রি করেছি। শুক্রবার জুমার নামাজের পর স্বাভাবিকভাবে একটু বিক্রি বেশি হয়। কিন্তু আজ তাও হয়নি। তিনি বলেন, ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা আর চাল, ডালসহ নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছেন তিনি।

একই অবস্থা ফার্মেগেটের শার্ট বিক্রেতা রাসেলেরও। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে ক্রেতার উপস্থিতি নেই বললেও চলে। এছাড়াও প্রশাসন হুটহাট তাদের তুলে দেয়। ফলে কষ্টের শেষ নেই। তার মতো বেশিরভাগ ফুটপাত ব্যবসায়ীর একই অবস্থা।

মতিঝিলে শাপলা চত্বরের হকার মোস্তফার অভিযোগ, বৃষ্টি তো আছেই তারপরও যানজট নিরসনের কথা বলে রোজার শুরু থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হকারদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তার দাবি, মানবিক দিক বিবেচনা করে হুটহাট করে রাজধানীর ফুটপাতের হকার যেন উচ্ছেদ না করা হয়।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি হকার উচ্ছেদ চালায় সিটি করপোরেশন। এসব হকারের বেশির ভাগই এখন বেকার। পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদের যৌক্তিকতা নিয়ে হকারসহ অনেকের প্রশ্ন রয়েছে।

একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে উচ্ছেদে এখন নাকাল রাজধানীর হকার বা ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। নুন আনতে পান্তা ফুরানো স্বল্প আয়ের এসব মানুষের দুর্ভোগ যেন চরমে পৌঁছেছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

বৃষ্টি আর উচ্ছেদে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বিপাকে

আপডেট টাইম : ১২:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির পর রাজধানীর ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের এখন দুর্দিন চলছে। কর্দমাক্ত পরিবেশে ফুটপাতের বেশিরভাগ দোকান বন্ধ। আর যা দু-একটি খোলা আছে সেখানে নেই ক্রেতা।

এছাড়াও কোনো ঘোষণা ছাড়াই প্রায়ই উচ্ছেদের কারণে ভোগান্তি আরো কয়েকগুণ বেড়েছে বলে দাবি হকারদের। একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে উচ্ছেদে চরম বিপাকে পড়েছেন নিন্ম আয়ের মানুষেরা।

রাজধানীর ফার্মগেট, কাওরানবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, মহাখালী, শান্তিনগর, মতিঝিল, কমলাপুর ও বায়তুল মোকাররমসহ কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ স্থানে ফুটপাতে বসা দোকানপাট বন্ধ। গত কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে এসব ফুটপাতের মার্কেটগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

যদিও গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বৃষ্টি কমতে শুরু করে। তারপরও শুক্রবার দেখা গেছে রাজধানীর বেশিরভাগ ফুটপাতের দোকান পাট বন্ধ।

কথা হয় মৌচাক আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের সামনের দোকানি রহমান শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই ব্যবসা থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে নিজের সংসার চলে। দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন তিনি। আবার বাড়িতেও বাবা-মার কাছে টাকা পাঠাতে হয়।

কিন্তু বর্ষা মৌসুমে এমনিতে বিক্রি কম তারপরও কয়েকদিন একটানা বৃষ্টি হওয়ায় গত এক সপ্তাহে তিনি এক টাকার পণ্যও বিক্রি করতে পারেননি। নতুন সময়কে তিনি বলেন, প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়ে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে থাকি। কিন্তু কয়েকদিন কেনাবেচা না হওয়ায় টাকা-পয়সা সব শেষ। বেশিদিন কোনো দোকানি বাকি দিতে চান না। ফলে এখন খুব বাজে অবস্থায় পড়েছেন তিনি।

বায়তুল মোকাররমের সামনে পাঞ্জাবি বিক্রি করেন সোলামমান হোসেন। তিনি বলেন, গত ৮ দিনে মাত্র ২০০ টাকার একটি পাঞ্জাবি বিক্রি করেছি। শুক্রবার জুমার নামাজের পর স্বাভাবিকভাবে একটু বিক্রি বেশি হয়। কিন্তু আজ তাও হয়নি। তিনি বলেন, ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা আর চাল, ডালসহ নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছেন তিনি।

একই অবস্থা ফার্মেগেটের শার্ট বিক্রেতা রাসেলেরও। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে ক্রেতার উপস্থিতি নেই বললেও চলে। এছাড়াও প্রশাসন হুটহাট তাদের তুলে দেয়। ফলে কষ্টের শেষ নেই। তার মতো বেশিরভাগ ফুটপাত ব্যবসায়ীর একই অবস্থা।

মতিঝিলে শাপলা চত্বরের হকার মোস্তফার অভিযোগ, বৃষ্টি তো আছেই তারপরও যানজট নিরসনের কথা বলে রোজার শুরু থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হকারদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তার দাবি, মানবিক দিক বিবেচনা করে হুটহাট করে রাজধানীর ফুটপাতের হকার যেন উচ্ছেদ না করা হয়।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি হকার উচ্ছেদ চালায় সিটি করপোরেশন। এসব হকারের বেশির ভাগই এখন বেকার। পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদের যৌক্তিকতা নিয়ে হকারসহ অনেকের প্রশ্ন রয়েছে।

একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে উচ্ছেদে এখন নাকাল রাজধানীর হকার বা ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। নুন আনতে পান্তা ফুরানো স্বল্প আয়ের এসব মানুষের দুর্ভোগ যেন চরমে পৌঁছেছে।