ঢাকা , বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

ব্যাংক খাতে প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে দ্বিগুণ

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির ফলে ব্যাংক খাতের প্রভিশন ঘাটতি প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত তিন মাসে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন ঘাটতি ৫৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই ঘাটতির ৭২ শতাংশেরও বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর।

ব্যাংকগুলো গ্রাহকের আমানত সুরক্ষিত রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করেছে। নিয়ম অনুযায়ী, অশ্রেণিকৃত ঋণের জন্য দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ, নিম্নমানের ঋণের জন্য ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের জন্য ৫০ শতাংশ এবং মন্দ ঋণের জন্য ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। প্রভিশন ঘাটতি থাকলে ব্যাংকগুলো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না এবং মূলধন ঘাটতির ঝুঁকিতে পড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর ২০২৪ প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে প্রভিশন ঘাটতি

দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা, যা তিন মাস আগের জুন প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ৩০ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা বেশি। জুন প্রান্তিকে ঘাটতি ছিল ২৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এ সময়ে প্রভিশনের প্রয়োজন ছিল ১ লাখ ৮১ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা, কিন্তু সংরক্ষণ করা হয়েছে মাত্র ১ লাখ ২৬ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। কিছু ব্যাংকে উদ্বৃত্ত থাকলেও বেশিরভাগেরই ঘাটতি রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, সেপ্টেম্বর ২০২৪ প্রান্তিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ৪০ হাজার ২০৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা জুন প্রান্তিকে ১১ হাজার ৪২৮ কোটি টাকার তুলনায় সাড়ে তিনগুণ বেশি। একই সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা বেড়ে ১৫ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা হয়েছে। তবে বিদেশি ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি নেই।

সংশ্লিষ্টদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যাংক থেকে অপব্যবহার করে নেওয়া অর্থ এখন খেলাপি ঋণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। গত সাড়ে ১৫ বছরে ঋণখেলাপি ও প্রভাবশালীদের একাধিক ছাড় দেওয়ার ফলে খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এই ছাড় নীতি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক দুই গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও ফজলে কবির। সরকার পরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নীতি থেকে সরে গিয়ে আন্তর্জাতিক মানদ-ে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা প্রয়োগ করেছে। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতার কারণেও ঋণ পরিশোধ কমে গেছে।

জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা বেড়ে মোট ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা বিতরণকৃত ঋণের ১৭ শতাংশ। সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি (৪০ দশমিক ৩৫ শতাংশ) এবং বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৪৯ হাজার কোটি (১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ) হয়েছে। বিশেষায়িত ব্যাংকে ১৩ দশমিক ২১ শতাংশ এবং বিদেশি ব্যাংকে ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ খেলাপি ঋণ রয়েছে। এ সময়ে সব খাতের ব্যাংকে মন্দমানের খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক বেড়েছে। ফলে খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে বেশি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

তিতুমীর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে এক সপ্তাহে কমিটি গঠন

ব্যাংক খাতে প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে দ্বিগুণ

আপডেট টাইম : এক ঘন্টা আগে

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির ফলে ব্যাংক খাতের প্রভিশন ঘাটতি প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত তিন মাসে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন ঘাটতি ৫৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই ঘাটতির ৭২ শতাংশেরও বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর।

ব্যাংকগুলো গ্রাহকের আমানত সুরক্ষিত রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করেছে। নিয়ম অনুযায়ী, অশ্রেণিকৃত ঋণের জন্য দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ, নিম্নমানের ঋণের জন্য ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের জন্য ৫০ শতাংশ এবং মন্দ ঋণের জন্য ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। প্রভিশন ঘাটতি থাকলে ব্যাংকগুলো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না এবং মূলধন ঘাটতির ঝুঁকিতে পড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর ২০২৪ প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে প্রভিশন ঘাটতি

দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা, যা তিন মাস আগের জুন প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ৩০ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা বেশি। জুন প্রান্তিকে ঘাটতি ছিল ২৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এ সময়ে প্রভিশনের প্রয়োজন ছিল ১ লাখ ৮১ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা, কিন্তু সংরক্ষণ করা হয়েছে মাত্র ১ লাখ ২৬ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। কিছু ব্যাংকে উদ্বৃত্ত থাকলেও বেশিরভাগেরই ঘাটতি রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, সেপ্টেম্বর ২০২৪ প্রান্তিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ৪০ হাজার ২০৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা জুন প্রান্তিকে ১১ হাজার ৪২৮ কোটি টাকার তুলনায় সাড়ে তিনগুণ বেশি। একই সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি ১ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা বেড়ে ১৫ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা হয়েছে। তবে বিদেশি ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি নেই।

সংশ্লিষ্টদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যাংক থেকে অপব্যবহার করে নেওয়া অর্থ এখন খেলাপি ঋণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। গত সাড়ে ১৫ বছরে ঋণখেলাপি ও প্রভাবশালীদের একাধিক ছাড় দেওয়ার ফলে খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এই ছাড় নীতি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক দুই গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও ফজলে কবির। সরকার পরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নীতি থেকে সরে গিয়ে আন্তর্জাতিক মানদ-ে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা প্রয়োগ করেছে। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতার কারণেও ঋণ পরিশোধ কমে গেছে।

জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা বেড়ে মোট ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা বিতরণকৃত ঋণের ১৭ শতাংশ। সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি (৪০ দশমিক ৩৫ শতাংশ) এবং বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৪৯ হাজার কোটি (১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ) হয়েছে। বিশেষায়িত ব্যাংকে ১৩ দশমিক ২১ শতাংশ এবং বিদেশি ব্যাংকে ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ খেলাপি ঋণ রয়েছে। এ সময়ে সব খাতের ব্যাংকে মন্দমানের খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক বেড়েছে। ফলে খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে বেশি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে।