ঢাকা , শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০ দিনে ১ হাজার ৫০০ কাছিমের ছানা সাগরে অবমুক্ত

কক্সবাজারের রামুর প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতে ১২০টি কাছিমের ছানা অপমোক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে ২০ দিনে ১ হাজার ৫০০ কাছিমের ছানা সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে সৈকতের প্যাঁচার দ্বীপ পয়েন্টে বন বিভাগ ও নেকমে কর্মকর্তারা এই কাছিমের ছানাগুলো অবমুক্ত করে।

জানা গেছে, এই কাছিমগুলো অলিভ রিডলি প্রজাতির, যা নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) কর্তৃক পরিচালিত প্রজনন হ্যাচারিতে জন্ম নিয়েছে।

 

নেকমের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম জানান, কক্সবাজার উপকূলের ১২টি স্থান থেকে গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে এপর্যন্ত ২৫ হাজার ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ডিমগুলো সোনাদিয়া দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, রামুর প্যাঁচার দ্বীপ, হিমছড়ি এলাকার হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করা হয়। ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে বাচ্চা ফুটে উঠে। পরে এসব বাচ্চাগুলো নিরাপদে সমুদ্রে অবমুক্ত করা হয়। এই উদ্যোগ কাছিম প্রজনন ও পরিবেশ সংরক্ষণ এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে জানান তিনি।

শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজারের রামুর প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতে কাছিমের ছানা অবমুক্ত করতে গিয়ে উপস্থিত কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক বলেন, ‘বন রক্ষার পাশাপাশি পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণে কাজ করছে বন বিভাগ। কাছিমের ছানা অবমুক্ত করার ঘটনাটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’

 

প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব কক্সবাজারের উপদেষ্টা আ.ন.ম হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘কাছিম হচ্ছে সাগরের পরিবেশ রক্ষাকারী। এরা সাগরের ময়লা পরিষ্কার করে। এসব কাছিমের ছানা অবমুক্ত করার মাধ্যমে সমুদ্রের প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধারে সাহায্য করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় এই ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক জীবনবৈচিত্র্য রক্ষা এবং সঠিক পরিচর্যা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।’

নেকমের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশি ডিম পাওয়া গেছে। আগামী মাস পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করা যাবে বলেও জানান তিনি।

 

উল্লেখ্য, সমুদ্র উপকূলে মানুষের চলাচল সংরক্ষিত ও রাতে আলোর ব্যবহার না থাকলে সাগরের কাছিম গুলো ডিম পাড়তে আসে উপকূলে।

পরিবেশবিদ আহমদ গিয়াস বলেন, ‘বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, কাছিমের মতো কিছু প্রাণীর প্রজনন ও সংরক্ষণের জন্য নিয়ম-নীতি রয়েছে। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে, অবমুক্তি প্রক্রিয়া পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিকভাবে সম্পাদিত হয় এবং সংরক্ষিত প্রজাতির জন্য ক্ষতিকর কিছু না ঘটে। মূলত, কাছিমের ছানা অবমুক্ত করার মাধ্যমে তাদের প্রজনন হার বৃদ্ধি পায় এবং পরিবেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা সম্ভব হয়।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

২০ দিনে ১ হাজার ৫০০ কাছিমের ছানা সাগরে অবমুক্ত

আপডেট টাইম : ০৫:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

কক্সবাজারের রামুর প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতে ১২০টি কাছিমের ছানা অপমোক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে ২০ দিনে ১ হাজার ৫০০ কাছিমের ছানা সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে সৈকতের প্যাঁচার দ্বীপ পয়েন্টে বন বিভাগ ও নেকমে কর্মকর্তারা এই কাছিমের ছানাগুলো অবমুক্ত করে।

জানা গেছে, এই কাছিমগুলো অলিভ রিডলি প্রজাতির, যা নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) কর্তৃক পরিচালিত প্রজনন হ্যাচারিতে জন্ম নিয়েছে।

 

নেকমের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম জানান, কক্সবাজার উপকূলের ১২টি স্থান থেকে গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে এপর্যন্ত ২৫ হাজার ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ডিমগুলো সোনাদিয়া দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, রামুর প্যাঁচার দ্বীপ, হিমছড়ি এলাকার হ্যাচারিতে সংরক্ষণ করা হয়। ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে বাচ্চা ফুটে উঠে। পরে এসব বাচ্চাগুলো নিরাপদে সমুদ্রে অবমুক্ত করা হয়। এই উদ্যোগ কাছিম প্রজনন ও পরিবেশ সংরক্ষণ এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে জানান তিনি।

শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজারের রামুর প্যাঁচার দ্বীপ সৈকতে কাছিমের ছানা অবমুক্ত করতে গিয়ে উপস্থিত কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুল হক বলেন, ‘বন রক্ষার পাশাপাশি পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণে কাজ করছে বন বিভাগ। কাছিমের ছানা অবমুক্ত করার ঘটনাটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’

 

প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব কক্সবাজারের উপদেষ্টা আ.ন.ম হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘কাছিম হচ্ছে সাগরের পরিবেশ রক্ষাকারী। এরা সাগরের ময়লা পরিষ্কার করে। এসব কাছিমের ছানা অবমুক্ত করার মাধ্যমে সমুদ্রের প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধারে সাহায্য করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশবাদী সংগঠন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যৌথ প্রচেষ্টায় এই ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক জীবনবৈচিত্র্য রক্ষা এবং সঠিক পরিচর্যা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।’

নেকমের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর বেশি ডিম পাওয়া গেছে। আগামী মাস পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করা যাবে বলেও জানান তিনি।

 

উল্লেখ্য, সমুদ্র উপকূলে মানুষের চলাচল সংরক্ষিত ও রাতে আলোর ব্যবহার না থাকলে সাগরের কাছিম গুলো ডিম পাড়তে আসে উপকূলে।

পরিবেশবিদ আহমদ গিয়াস বলেন, ‘বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, কাছিমের মতো কিছু প্রাণীর প্রজনন ও সংরক্ষণের জন্য নিয়ম-নীতি রয়েছে। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে, অবমুক্তি প্রক্রিয়া পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিকভাবে সম্পাদিত হয় এবং সংরক্ষিত প্রজাতির জন্য ক্ষতিকর কিছু না ঘটে। মূলত, কাছিমের ছানা অবমুক্ত করার মাধ্যমে তাদের প্রজনন হার বৃদ্ধি পায় এবং পরিবেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা সম্ভব হয়।’