ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উন্নয়ন অভিযাত্রায় সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ উন্নয়নের প্রশ্নে বাংলাদেশের আর পেছনে ফেরার অবকাশ নেই। এখন শুধু সামনে চলা। এ এগিয়ে চলাকে টেকসই এবং চলমান রাখতে হবে জনগণকেই। সব মিলিয়ে এটা বলা যায়, বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রা এখন সমৃদ্ধির সোপানে। এ সমৃদ্ধিকে হাতের মুঠোয় এনে তার সুফল ভোগের দিন আসন্নপ্রায়

বাংলাদেশ যে সুন্দর আগামীর পথে ধাবমান, তা আরেকবার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন বিশ্বের একজন উল্লেখযোগ্য মানবাধিকারকর্মী ও শিক্ষাবিদ রিচার্ড ও ব্রায়ান। যুক্তরাষ্ট্রের এই নাগরিক বিশ্বের সেরা বর্তমানের ১৮ জন নারী নেতাকে নিয়ে মূল্যায়নধর্মী একটি বই লিখে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন।

‘উইমেন প্রেসিডেন্টস অ্যান্ড প্রাইম মিনিস্টারস’ অর্থাৎ ‘নারী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী’ শিরোনামের বিশ্ব সমাদৃত ওই বইটির প্রচ্ছদে সাত নারী নেতার ছবি স্থান পেয়েছে, যাদের একজন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বইয়ে উন্নয়ন অভিযাত্রায় সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংগ্রাম ও অর্জনকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। বইটিতে ১৮ নারী নেতার মধ্যে শেখ হাসিনা অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। গ্রন্থটিতে শেখ হাসিনার গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় একনিষ্ঠতা ও কঠোর পরিশ্রম, তার জীবননাশের চেষ্টা এবং বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার ঐতিহাসিক অর্জন ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করে তার জন্য তিন পৃষ্ঠা উৎসর্গ করেন লেখক, যা আমাদের জন্য গর্বের।

ওয়াশিংটন ডিসির উইমেন্স ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ক্লাবে জুনে এ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব হয়, যাতে সুধী সমাজের প্রতিনিধি, কূটনীতিক ও নারী ব্যক্তিত্বরা অংশ নেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাস।

রিচার্ড ও ব্রায়ান ‘বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত ও ক্ষুধামুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারলেই আমি গর্বিত হব’ শেখ হাসিনার এ উক্তিটি উদ্ধৃত করে বইটিতে বাংলাদেশকে অধিকতর স্থিতিশীল ও অধিকতর গণতান্ত্রিক এবং অপেক্ষাকৃত কম হিংসাত্মক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রয়াসের প্রশংসা করা হয়।

বইটিতে প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক পটভূমির উল্লেখ করে বলা হয়, তার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আধুনিক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি দেশটির প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন। লেখক ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ের বর্ণনা দিয়ে উল্লেখ করেন, ওই সময় শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান।

রিচার্ড ও ব্রায়ান ১৯৮১ সালে নির্বাসন থেকে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পরিচালনার নেতৃত্বের পদে নির্বাচিত হয়ে তিনি নির্বাচনী কারচুপি ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। সে সময় তাকে দমন ও নির্যাতনের শিকার হতে হয় এবং ৮০’র দশকে তিনি গৃহবন্দি হন।

এরশাদের শাসনামলের উল্লেখ করে লেখক ও ব্রায়ান বলেন, সরকারের নির্যাতন সত্ত্বেও শেখ হাসিনা এতই জনপ্রিয় ছিলেন যে, তার চাপে ১৯৯০ সালে একজন সামরিক জান্তাকে পদত্যাগ করতে হয়। বইটিতে লেখক বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা ও তার সরকার ১৯৯৭ সালে যুগান্তকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, স্থলমাইনের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ এবং ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে নারীকে সহায়তা ও নারী কল্যাণ, গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাসহ অনেক কর্মকা- বাস্তবায়ন করেছেন, যা তাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দিয়েছে।

রিচার্ড ও ব্রায়ান সারা বিশ্বের শত শত নারী নেত্রী এবং প্রায় অর্ধশত নারী প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে মাত্র ১৮ জন নারীকে বেছে নিয়েছেন। এ সংক্ষিপ্ত তালিকায় শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তি সহজ কথা নয় মোটেই। লেখক তার সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান দেয়ার জন্য নারী নেত্রীদের যেসব গুণাগুণ বিবেচনায় নিয়েছেন, তাতে শেখ হাসিনা ছিলেন সর্বাগ্রে।

বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে দেখছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ভৌগোলিক আয়তনে ছোট্ট হলেও লাল-সবুজের এ দেশটি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে উন্নতির পথে। দারিদ্র্য, কুসংস্কার, অজ্ঞতা, সম্পদের সীমাবদ্ধতা, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে দেশটি। দেশপ্রধানের দূরদর্শী নেতৃত্বে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও দেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের সারিতে। দেশের মানুষ এখন ক্ষুধা নিয়ে চিন্তিত নয়। মঙ্গা, খরা প্রভৃতি দুর্ভোগের শব্দ এখন বাংলাদেশে নেই। যোগ্য ও বিচক্ষণ নেতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জয়গাঁথা এখন বিশ্বনেতাদের মুখে মুখে।

বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপকার। তার মাত্র সাড়ে ৩ বছরের শাসনামলের পর পদ্মা, মেঘনা, যমুনা আর ব্রহ্মপুত্রে অনেক পানি গড়িয়েছে। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের পর আমরা লাল-সবুজের বিজয় পতাকা পেয়েছি ঠিকই; কিন্তু যুদ্ধের ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়ে, উন্নত দেশ গড়তে পর্যাপ্ত সময় পাইনি। পঁচাত্তরে আগস্টের কালরাত থমকে দেয় অগ্রসরমান বাংলাদেশকে। সে ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে বেশ ধকল পোহাতে হয় বাংলাদেশকে।

এখন বাংলাদেশ সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সমৃদ্ধির সোপানে। এ সফলতার অন্যতম নায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশকে নিয়ে যারা একসময় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করত, তারাই এখন দেশের উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত। কাজ চলছে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে উন্নত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার। এর আগে আন্তর্জাতিক নানা মহল থেকে তিনি তার বিচক্ষণ নেতৃত্বের স্বীকৃতি পেয়েছেন।

তার নেতৃত্বে উন্নয়নের পথে ধাবমান বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার সূচক প্রতিদিনই বাড়ছে। বাংলাদেশ এখন অগ্রগতির সড়কে। সরকারের সঙ্গে জনগণের আকাক্সক্ষার সম্পর্ক এখন নিবিড়। দূরদর্শী সরকারের গতিশীল নেতৃত্বে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে সব কার্যক্রম। সেজন্যই সম্ভব হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো একটি বিশাল পরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন। অন্য সবার কাছে যা অসম্ভব, প্রধানমন্ত্রীর কাছে তা অনায়াসসাধ্য এটাই শেখ হাসিনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও ব্যক্তিত্বের উজ্জ্বলতম দিক। প্রধানমন্ত্রীর সব ভাবনা দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়ন নিয়ে। দেশের শান্তিকামী মানুষের আর্থসামাজিক মুক্তিসাধন এবং ক্ষুধা-দারিদ্র্যের বেড়াজাল ছিন্ন করে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তেই বঙ্গবন্ধুকন্যার অবিরাম প্রচেষ্টা। সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। এখন সাহায্যের আশায় বাঙালি আর বসে থাকে না। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তারা আজ নিজেদের স্বাবলম্বী করতে শিখেছে। দেশের উন্নয়নে বিদেশি সাহায্যের দিকে তাকিয়ে থাকার দিন শেষ।

বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে অশান্ত ওই অঞ্চল তথা সমগ্র দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৯৯ সালে আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পায়। এর পেছনে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই অবদান। আর তাই উন্নয়ন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিনির্মাণ, যোগাযোগ ও যাতায়াতের অবকাঠামো নির্মাণে সাফল্য, হতদরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি সাধন, কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্যসহ গণতন্ত্রের উন্নয়নে অনন্য অবদানের জন্য তিনি পরিচিতি পান ‘ডটার অব ডেমোক্রেসি’ হিসেবে।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে দেশের উন্নয়ন কর্মকা- ত্বরান্বিত হয়। এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। আমাদের প্রত্যাশা, এসডিজি অর্জনেও বাংলাদেশ শীর্ষে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন, এমডিজির মতো এসডিজি বাস্তবায়নেও বাংলাদেশ সফলতা দেখাবে। এসডিজির সব সূচকে উন্নতি করতে পারলেই ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। এ স্বপ্ন পূরণের জন্যই প্রধানমন্ত্রী সর্বাগ্রে অগ্রাধিকার দিয়েছেন টেকসই উন্নয়নকে। প্রধানমন্ত্রীর এ অর্জন মানে বাংলাদেশের গৌরব। প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই বাংলাদেশ শিগগিরই উন্নত বিশ্বের তালিকায় স্থান করে নেবে তা শুধু সময়েরই অপেক্ষা।

শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এবং জনগণকে দেয়া কমিটমেন্ট অনুযায়ী শান্তি ও গণতন্ত্র বিকাশে নিরলস পরিশ্রম তথা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পেরেছেন বলেই একের পর এক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছেন। আর রিচার্ড ও ব্রায়ানের ‘উইমেন প্রেসিডেন্টস অ্যান্ড প্রাইম মিনিস্টারস’ গ্রন্থে শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তি সেই স্বীকৃতিরই একটি অংশ।

বাংলাদেশ আজ সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল হয়ে উঠেছে। প্রাত্যহিক লেনদেন থেকে শুরু করে সরকারি সব সেবা ঘরে বসেই পাওয়া যাচ্ছে। দেশের দুই-তৃতীয়াংশ লোক এখন মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। এ ডিভাইসটিকে সহজলভ্য করতে কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। মোবাইল ফোনের পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাংলাদেশে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। দিন যতই যাচ্ছে, ইন্টারনেটের একেকজন ব্যবহারকারী আরও দক্ষতা অর্জন করে আরও পেশাদার হয়ে উঠছেন। বাংলাদেশের জন্য এটা সৌভাগ্যের যে, দেশের তরুণ সমাজ ইন্টারনেট ব্যবহারে যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেছে। ফলে দেশে নীরবে একটি আইটি দক্ষতাসম্পন্ন জনগোষ্ঠী গড়ে উঠছে। এদের সম্মিলিত উৎপাদন জিডিপিতে যোগ হয়ে জিডিপির আকারকে স্ফীত করতে শুরু করেছে। এটি যোগ হতে থাকবে বছরের পর বছর, জেনারেশনের পর জেনারেশন। তাই এ ধরনের উৎপাদন হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সব শক্তি, মেধা ও প্রজ্ঞাকে সম্মিলিতভাবে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা থেকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য যেভাবে বিনিয়োগ করেছেন, তাতে বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বিস্ময়করভাবে এগিয়ে চলেছে। জাতিসংঘ এসডিজি বাস্তবায়নকারী দেশগুলোকে বলেছে, আগামীতে কীভাবে টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করা যায়, সেসব সূচক অর্জনে তারা যেন বাংলাদেশকে অনুকরণ করে। বাংলাদেশই দেখিয়েছে কীভাবে চরম দারিদ্র্যকে দূর করতে হয়, কীভাবে প্রাথমিক শিক্ষাকে সব শিশুর মাঝে ছড়িয়ে দেয়া যায়, নারী ও পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য কমানো যায় এবং শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন থেকে শুরু করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দক্ষিণ এশিয়ায় তো বটেই সমগ্র পৃথিবীতেই কীভাবে আইকনে পরিণত হওয়া যায়।

সাদা চোখে তাকালেও গ্রামেগঞ্জে, পাড়ায়-মহল্লায় যখন ইঞ্জিনচালিত রিকশা কিংবা ভ্যানের বহর দৃশ্যমান হয়, তখন দেশের অর্থনীতির গতি আঁচ করতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। বর্তমানে দেশের প্রায় ৭৬ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অর্জনের মধ্য দিয়ে দেশকে বিদ্যুৎ স্বাবলম্বী করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি শিগগিরই বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের একটি সফল উদাহরণ হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়েছেন কানেকটিভিটির দিকে। সড়ক, রেল ও নৌ যোগাযোগের বিস্তৃতি ঘটাচ্ছেন দ্রুততার সঙ্গে; পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি যোগাযোগের ক্ষেত্রকে মানুষের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাজির করছেন। ভুটান সফরে গিয়ে বিবিআইএন বাস্তবায়নে ভুটানকে জোর তাগিদ দিয়েছেন। ইন্টারনেট দুনিয়ায় নিয়মিত বিচরণ করে প্রায় ৭ কোটি মানুষ। ইন্টারনেট দুনিয়ায় পা রাখা মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। দেশজুড়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ১৮ হাজার ১৩০টি সরকারি অফিসে কানেকটিভিটি স্থাপন করা হয়েছে। একেবারে তৃণমূলের মানুষও এ কানেকটিভিটির সুফল পাচ্ছেন।

বাংলাদেশের দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন পদ্মা বহুমুখী সেতু এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। প্রমত্তা পদ্মাকে সেতুবন্ধনে আবদ্ধ করার মাধ্যমে একদিকে যেমন রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার কানেকটিভিটি সৃষ্টি হবে, অন্যদিকে তেমনি দেশের জিডিপি গ্রোথ বছরপ্রতি ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে বাড়াতে সাহায্য করবে। পদ্মা সেতুর মূল অংশ এখন প্রায় দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। বৃহৎ স্বপ্ন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণের প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

উন্নয়নের প্রশ্নে বাংলাদেশের আর পেছনে ফেরার অবকাশ নেই। এখন শুধু সামনে চলা। এ এগিয়ে চলাকে টেকসই এবং চলমান রাখতে হবে জনগণকেই। সব মিলিয়ে এটা বলা যায়, বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রা এখন সমৃদ্ধির সোপানে। এ সমৃদ্ধিকে হাতের মুঠোয় এনে তার সুফল ভোগের দিন আসন্নপ্রায়।

মো. শহীদ উল্লা খন্দকার

সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

উন্নয়ন অভিযাত্রায় সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ

আপডেট টাইম : ০৭:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ উন্নয়নের প্রশ্নে বাংলাদেশের আর পেছনে ফেরার অবকাশ নেই। এখন শুধু সামনে চলা। এ এগিয়ে চলাকে টেকসই এবং চলমান রাখতে হবে জনগণকেই। সব মিলিয়ে এটা বলা যায়, বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রা এখন সমৃদ্ধির সোপানে। এ সমৃদ্ধিকে হাতের মুঠোয় এনে তার সুফল ভোগের দিন আসন্নপ্রায়

বাংলাদেশ যে সুন্দর আগামীর পথে ধাবমান, তা আরেকবার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন বিশ্বের একজন উল্লেখযোগ্য মানবাধিকারকর্মী ও শিক্ষাবিদ রিচার্ড ও ব্রায়ান। যুক্তরাষ্ট্রের এই নাগরিক বিশ্বের সেরা বর্তমানের ১৮ জন নারী নেতাকে নিয়ে মূল্যায়নধর্মী একটি বই লিখে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন।

‘উইমেন প্রেসিডেন্টস অ্যান্ড প্রাইম মিনিস্টারস’ অর্থাৎ ‘নারী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী’ শিরোনামের বিশ্ব সমাদৃত ওই বইটির প্রচ্ছদে সাত নারী নেতার ছবি স্থান পেয়েছে, যাদের একজন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বইয়ে উন্নয়ন অভিযাত্রায় সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংগ্রাম ও অর্জনকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। বইটিতে ১৮ নারী নেতার মধ্যে শেখ হাসিনা অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। গ্রন্থটিতে শেখ হাসিনার গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় একনিষ্ঠতা ও কঠোর পরিশ্রম, তার জীবননাশের চেষ্টা এবং বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার ঐতিহাসিক অর্জন ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করে তার জন্য তিন পৃষ্ঠা উৎসর্গ করেন লেখক, যা আমাদের জন্য গর্বের।

ওয়াশিংটন ডিসির উইমেন্স ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ক্লাবে জুনে এ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব হয়, যাতে সুধী সমাজের প্রতিনিধি, কূটনীতিক ও নারী ব্যক্তিত্বরা অংশ নেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাস।

রিচার্ড ও ব্রায়ান ‘বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত ও ক্ষুধামুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারলেই আমি গর্বিত হব’ শেখ হাসিনার এ উক্তিটি উদ্ধৃত করে বইটিতে বাংলাদেশকে অধিকতর স্থিতিশীল ও অধিকতর গণতান্ত্রিক এবং অপেক্ষাকৃত কম হিংসাত্মক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রয়াসের প্রশংসা করা হয়।

বইটিতে প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক পটভূমির উল্লেখ করে বলা হয়, তার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আধুনিক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি দেশটির প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন। লেখক ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ের বর্ণনা দিয়ে উল্লেখ করেন, ওই সময় শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান।

রিচার্ড ও ব্রায়ান ১৯৮১ সালে নির্বাসন থেকে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পরিচালনার নেতৃত্বের পদে নির্বাচিত হয়ে তিনি নির্বাচনী কারচুপি ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। সে সময় তাকে দমন ও নির্যাতনের শিকার হতে হয় এবং ৮০’র দশকে তিনি গৃহবন্দি হন।

এরশাদের শাসনামলের উল্লেখ করে লেখক ও ব্রায়ান বলেন, সরকারের নির্যাতন সত্ত্বেও শেখ হাসিনা এতই জনপ্রিয় ছিলেন যে, তার চাপে ১৯৯০ সালে একজন সামরিক জান্তাকে পদত্যাগ করতে হয়। বইটিতে লেখক বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা ও তার সরকার ১৯৯৭ সালে যুগান্তকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, স্থলমাইনের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ এবং ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে নারীকে সহায়তা ও নারী কল্যাণ, গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাসহ অনেক কর্মকা- বাস্তবায়ন করেছেন, যা তাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দিয়েছে।

রিচার্ড ও ব্রায়ান সারা বিশ্বের শত শত নারী নেত্রী এবং প্রায় অর্ধশত নারী প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে মাত্র ১৮ জন নারীকে বেছে নিয়েছেন। এ সংক্ষিপ্ত তালিকায় শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তি সহজ কথা নয় মোটেই। লেখক তার সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান দেয়ার জন্য নারী নেত্রীদের যেসব গুণাগুণ বিবেচনায় নিয়েছেন, তাতে শেখ হাসিনা ছিলেন সর্বাগ্রে।

বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে দেখছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ভৌগোলিক আয়তনে ছোট্ট হলেও লাল-সবুজের এ দেশটি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে উন্নতির পথে। দারিদ্র্য, কুসংস্কার, অজ্ঞতা, সম্পদের সীমাবদ্ধতা, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে দেশটি। দেশপ্রধানের দূরদর্শী নেতৃত্বে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও দেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের সারিতে। দেশের মানুষ এখন ক্ষুধা নিয়ে চিন্তিত নয়। মঙ্গা, খরা প্রভৃতি দুর্ভোগের শব্দ এখন বাংলাদেশে নেই। যোগ্য ও বিচক্ষণ নেতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জয়গাঁথা এখন বিশ্বনেতাদের মুখে মুখে।

বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপকার। তার মাত্র সাড়ে ৩ বছরের শাসনামলের পর পদ্মা, মেঘনা, যমুনা আর ব্রহ্মপুত্রে অনেক পানি গড়িয়েছে। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের পর আমরা লাল-সবুজের বিজয় পতাকা পেয়েছি ঠিকই; কিন্তু যুদ্ধের ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়ে, উন্নত দেশ গড়তে পর্যাপ্ত সময় পাইনি। পঁচাত্তরে আগস্টের কালরাত থমকে দেয় অগ্রসরমান বাংলাদেশকে। সে ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে বেশ ধকল পোহাতে হয় বাংলাদেশকে।

এখন বাংলাদেশ সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সমৃদ্ধির সোপানে। এ সফলতার অন্যতম নায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশকে নিয়ে যারা একসময় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করত, তারাই এখন দেশের উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত। কাজ চলছে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে উন্নত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার। এর আগে আন্তর্জাতিক নানা মহল থেকে তিনি তার বিচক্ষণ নেতৃত্বের স্বীকৃতি পেয়েছেন।

তার নেতৃত্বে উন্নয়নের পথে ধাবমান বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার সূচক প্রতিদিনই বাড়ছে। বাংলাদেশ এখন অগ্রগতির সড়কে। সরকারের সঙ্গে জনগণের আকাক্সক্ষার সম্পর্ক এখন নিবিড়। দূরদর্শী সরকারের গতিশীল নেতৃত্বে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে সব কার্যক্রম। সেজন্যই সম্ভব হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো একটি বিশাল পরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন। অন্য সবার কাছে যা অসম্ভব, প্রধানমন্ত্রীর কাছে তা অনায়াসসাধ্য এটাই শেখ হাসিনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও ব্যক্তিত্বের উজ্জ্বলতম দিক। প্রধানমন্ত্রীর সব ভাবনা দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়ন নিয়ে। দেশের শান্তিকামী মানুষের আর্থসামাজিক মুক্তিসাধন এবং ক্ষুধা-দারিদ্র্যের বেড়াজাল ছিন্ন করে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তেই বঙ্গবন্ধুকন্যার অবিরাম প্রচেষ্টা। সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। এখন সাহায্যের আশায় বাঙালি আর বসে থাকে না। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তারা আজ নিজেদের স্বাবলম্বী করতে শিখেছে। দেশের উন্নয়নে বিদেশি সাহায্যের দিকে তাকিয়ে থাকার দিন শেষ।

বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে অশান্ত ওই অঞ্চল তথা সমগ্র দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৯৯ সালে আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পায়। এর পেছনে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই অবদান। আর তাই উন্নয়ন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিনির্মাণ, যোগাযোগ ও যাতায়াতের অবকাঠামো নির্মাণে সাফল্য, হতদরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি সাধন, কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্যসহ গণতন্ত্রের উন্নয়নে অনন্য অবদানের জন্য তিনি পরিচিতি পান ‘ডটার অব ডেমোক্রেসি’ হিসেবে।

২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে দেশের উন্নয়ন কর্মকা- ত্বরান্বিত হয়। এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। আমাদের প্রত্যাশা, এসডিজি অর্জনেও বাংলাদেশ শীর্ষে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন, এমডিজির মতো এসডিজি বাস্তবায়নেও বাংলাদেশ সফলতা দেখাবে। এসডিজির সব সূচকে উন্নতি করতে পারলেই ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। এ স্বপ্ন পূরণের জন্যই প্রধানমন্ত্রী সর্বাগ্রে অগ্রাধিকার দিয়েছেন টেকসই উন্নয়নকে। প্রধানমন্ত্রীর এ অর্জন মানে বাংলাদেশের গৌরব। প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই বাংলাদেশ শিগগিরই উন্নত বিশ্বের তালিকায় স্থান করে নেবে তা শুধু সময়েরই অপেক্ষা।

শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এবং জনগণকে দেয়া কমিটমেন্ট অনুযায়ী শান্তি ও গণতন্ত্র বিকাশে নিরলস পরিশ্রম তথা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পেরেছেন বলেই একের পর এক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছেন। আর রিচার্ড ও ব্রায়ানের ‘উইমেন প্রেসিডেন্টস অ্যান্ড প্রাইম মিনিস্টারস’ গ্রন্থে শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তি সেই স্বীকৃতিরই একটি অংশ।

বাংলাদেশ আজ সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল হয়ে উঠেছে। প্রাত্যহিক লেনদেন থেকে শুরু করে সরকারি সব সেবা ঘরে বসেই পাওয়া যাচ্ছে। দেশের দুই-তৃতীয়াংশ লোক এখন মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। এ ডিভাইসটিকে সহজলভ্য করতে কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। মোবাইল ফোনের পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাংলাদেশে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। দিন যতই যাচ্ছে, ইন্টারনেটের একেকজন ব্যবহারকারী আরও দক্ষতা অর্জন করে আরও পেশাদার হয়ে উঠছেন। বাংলাদেশের জন্য এটা সৌভাগ্যের যে, দেশের তরুণ সমাজ ইন্টারনেট ব্যবহারে যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেছে। ফলে দেশে নীরবে একটি আইটি দক্ষতাসম্পন্ন জনগোষ্ঠী গড়ে উঠছে। এদের সম্মিলিত উৎপাদন জিডিপিতে যোগ হয়ে জিডিপির আকারকে স্ফীত করতে শুরু করেছে। এটি যোগ হতে থাকবে বছরের পর বছর, জেনারেশনের পর জেনারেশন। তাই এ ধরনের উৎপাদন হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সব শক্তি, মেধা ও প্রজ্ঞাকে সম্মিলিতভাবে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা থেকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য যেভাবে বিনিয়োগ করেছেন, তাতে বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বিস্ময়করভাবে এগিয়ে চলেছে। জাতিসংঘ এসডিজি বাস্তবায়নকারী দেশগুলোকে বলেছে, আগামীতে কীভাবে টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করা যায়, সেসব সূচক অর্জনে তারা যেন বাংলাদেশকে অনুকরণ করে। বাংলাদেশই দেখিয়েছে কীভাবে চরম দারিদ্র্যকে দূর করতে হয়, কীভাবে প্রাথমিক শিক্ষাকে সব শিশুর মাঝে ছড়িয়ে দেয়া যায়, নারী ও পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য কমানো যায় এবং শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন থেকে শুরু করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দক্ষিণ এশিয়ায় তো বটেই সমগ্র পৃথিবীতেই কীভাবে আইকনে পরিণত হওয়া যায়।

সাদা চোখে তাকালেও গ্রামেগঞ্জে, পাড়ায়-মহল্লায় যখন ইঞ্জিনচালিত রিকশা কিংবা ভ্যানের বহর দৃশ্যমান হয়, তখন দেশের অর্থনীতির গতি আঁচ করতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। বর্তমানে দেশের প্রায় ৭৬ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অর্জনের মধ্য দিয়ে দেশকে বিদ্যুৎ স্বাবলম্বী করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি শিগগিরই বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের একটি সফল উদাহরণ হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়েছেন কানেকটিভিটির দিকে। সড়ক, রেল ও নৌ যোগাযোগের বিস্তৃতি ঘটাচ্ছেন দ্রুততার সঙ্গে; পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি যোগাযোগের ক্ষেত্রকে মানুষের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাজির করছেন। ভুটান সফরে গিয়ে বিবিআইএন বাস্তবায়নে ভুটানকে জোর তাগিদ দিয়েছেন। ইন্টারনেট দুনিয়ায় নিয়মিত বিচরণ করে প্রায় ৭ কোটি মানুষ। ইন্টারনেট দুনিয়ায় পা রাখা মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। দেশজুড়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ১৮ হাজার ১৩০টি সরকারি অফিসে কানেকটিভিটি স্থাপন করা হয়েছে। একেবারে তৃণমূলের মানুষও এ কানেকটিভিটির সুফল পাচ্ছেন।

বাংলাদেশের দীর্ঘ লালিত স্বপ্ন পদ্মা বহুমুখী সেতু এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। প্রমত্তা পদ্মাকে সেতুবন্ধনে আবদ্ধ করার মাধ্যমে একদিকে যেমন রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার কানেকটিভিটি সৃষ্টি হবে, অন্যদিকে তেমনি দেশের জিডিপি গ্রোথ বছরপ্রতি ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে বাড়াতে সাহায্য করবে। পদ্মা সেতুর মূল অংশ এখন প্রায় দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। বৃহৎ স্বপ্ন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণের প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

উন্নয়নের প্রশ্নে বাংলাদেশের আর পেছনে ফেরার অবকাশ নেই। এখন শুধু সামনে চলা। এ এগিয়ে চলাকে টেকসই এবং চলমান রাখতে হবে জনগণকেই। সব মিলিয়ে এটা বলা যায়, বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রা এখন সমৃদ্ধির সোপানে। এ সমৃদ্ধিকে হাতের মুঠোয় এনে তার সুফল ভোগের দিন আসন্নপ্রায়।

মো. শহীদ উল্লা খন্দকার

সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার