ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অফুরান বিস্ময় কোরআনের অলৌকিকতার

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কোরআনের সঙ্গে যেন মানুষের নাড়ির সম্পর্ক। এর আলোকোজ্জ্বল অলৌকিকতা ঐশী চুম্বকের মতো পৃথিবীবাসীকে কাছে টেনে আলোকিত করেছে। নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যে-ই কোরআন পড়েছে, শুনেছে, অনুধাবন করার চেষ্ট করেছে, সে-ই কোরআনের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে মুসলমান হয়েছে। কোরআনুল কারিমের মতো আর কোনো গ্রন্থ নেই পৃথিবীতে।

পৃথিবীর একমাত্র অপরিবর্তিত ও অবিকৃত গ্রন্থ হলো কোরআন। পবিত্র কোরআনুল কারিম অবতীর্ণ হওয়ার দেড় হাজার বছর পরও এর একটি অক্ষরেরও কোনো পরিবর্তন হয়নি। আজ পর্যন্ত কেউ কোরআনকে পরিবর্তন করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে সফল হতে পারেনি। হতে পারবেও না। আল্লাহ তায়ালা কোরআনু কারিমে এরশাদ করেন, ‘আমি স্বয়ং এ উপদেশগ্রন্থ (কোরআন) নাজিল করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।’ (সূরা হিজর : ৯)।
সপ্তম আব্বাসীয় খলিফা আবু জাফর আবদুুল্লাহ আল মামুন একদিন বাইতুল হিকমাহর সেমিনার কক্ষে সুন্দর পোশাকধারী, সুন্দর চেহারার এক ইহুদি জনগণের সামনে চমৎকার বক্তব্য দিতে দেখলেন। সেমিনার শেষে খলিফা মামুন লোকটিকে প্রশ্ন করলেন, আপনি কি ইহুদি? লোকটি বলল, হ্যাঁ। খলিফা মামুন তাকে বিভিন্ন পুরস্কারের প্রস্তাব করে তাকে ইসলাম গ্রহণের আমন্ত্রণ জানালেন। কিন্তু লোকটি তার বাপ-দাদার ধর্ম ছাড়তে রজি হলো না। এক বছর পর আবার সে সেমিনার কক্ষে লোকটিকে দেখা গেল ইসলামে সৌন্দর্য নিয়ে বক্তব্য দিতে। খলিফা তাকে ইসলাম গ্রহণের কারণ জিজ্ঞেস করলে লোকটি বলল, ‘আমি আপনার দরবার থেকে ফিরে গিয়ে ধর্মগুলোকে পরীক্ষা করার ইচ্ছা করলাম। তাওরাতের তিনটি পা-ুলিপি লিখলাম। আর তাতে আমার মনগড়া অনেক কথা ঢুকিয়ে দিলাম। এরপর সেগুলোকে একটি গির্জায় নিয়ে বিক্রি করে দিলাম। দেখলাম লোকরা আমার লেখা ভেজাল তাওরাত কিনে নিল।
তারপর ইঞ্জিল শরিফের প্রতি মনোনিবেশন করলাম। তাওরাতের মতো মনগড়া কথা ঢুকিয়ে দিয়ে ইঞ্জিলেরও তিনটি কপি লিখলাম। খ্রিস্টানদের উপাসনলায়ে নিয়ে গেলে সেগুলো নির্বিঘেœ বিক্রি করতে পারলাম। এরপর আমি পবিত্র কোরআনুল কারিমের অলৌকিকতা পরীক্ষা করার জন্য এরও তিনটি কপি লিখলাম আর সেগুলোর ফাঁকে ফাঁকে মনগড়া কথা ঢুকিয়ে দিলাম। সেগুলো মসজিদে মুসলমানদের মধ্যে বিতরণ করতে গিয়ে বারবার ধরা খেলাম। তারা একে গ্রহণের আগে যাচাই করে দেখে। মুসলমানরা সেগুলো নিল না। বারবার ব্যর্থ হওয়ার পর আমার মন বলে দিল যে ভেজাল তাওরাত, ইঞ্জিল বাজারে চললেও ভেজাল কোরআন চলে না। একমাত্র কোরআনকেই অপরিবর্তনশীল ঐশী গ্রন্থ পেলাম। তাই এর শুদ্ধতা যাচাই করে তাতে মুগ্ধ হয়ে আমি ইসলাম কবুল করেছি।’ (তাফসিরে কুরতুবি : সূরা হিজর : ৯)।
কোরআনের শুদ্ধতায় বিশ্বাস করার জন্য কোনো গবেষণার দরকার নেই। কোনো গবেষণা ছাড়াই আমরা বিশ্বাস করি যে, পবিত্র কোরআন আল্লাহ তায়ালার সংরক্ষিত কিতাব। এতে কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন হবে না। এ পর্যন্ত কৃত কোনো গবেষণায়ই কোরআনের বিকৃতির প্রমাণ করতে পারেনি। যারাই গবেষণা করেছে, তারাই এর অলৌকিকতায় মৃগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ২০১৫ সালে আলবা ফাদেলি নামক বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (যুক্তরাজ্য) এক পিএইচডি গবেষক তার গবেষণা করতে গিয়ে পুরনো বইপত্র খোঁজার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়ামে পবিত্র কোরআনের পুরনো পা-ুলিপি খুঁজে পান। চামড়ায় লিখিত পা-ুলিপিটি কত বছরের পুরনো, তা পরীক্ষা করার জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রেডিওকার্বন পরীক্ষাগারে পাঠান। পরীক্ষায় একেবারেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, এ পা-ুলিপিটি ১ হাজার ৩৭০ বছর আগে লিখিত। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বর্তমান কোরআনের সঙ্গে সেই কোরআনকে মিলিয়ে ঘোষণা করে যে, বর্তমান কোরআনের সঙ্গে ১ হাজার ৩৭০ বছর আগের চামড়ায় লিখিত কোরআনের কোনো ব্যবধান তারা খুঁজে পাননি। এমনকি আজও একটি অক্ষরেরও পরিবর্তন হয়নি কোরআনে। (দ্য নিউইয়র্ক টাইমস : ২৩-০৭-২০১৫)।
পবিত্র কোরআনুল কারিমের আরেকটি বিস্ময়কর দিক হলো এর মুখস্থকরণ। কোরআন শুধু সর্বাধিক পঠিতই নয়; বরং মুখস্থকরণের দিক থেকেও কোরআন শীর্ষে। কোরআনকে যত মানুষ মুখস্থ করেছে পৃথিবীর আর কোনো গ্রন্থের ক্ষেত্রে সে পরিমাণ মানুষ মুখস্থ করেনি। এমনকি ধারে কাছেও নেই অন্যান্য গ্রন্থের মুখস্থকারীর সংখ্যা। পৃথিবীতে প্রায় ৮০ লাখ হাফেজে কোরআন রয়েছেন। অল্প সময়ে মুখস্থকরণও কোরআনের একটি মোজেজা। সম্প্রতি কক্সবাজারের শিশু ইয়াসিন আরাফাত মাত্র ৮৬ দিনে মহাগ্রন্থ আল কোরআন মুখস্থ করেছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরাও যুক্ত হয়ে যাচ্ছেন হাফেজদের এ মোবারক মিছিলে। বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারে জন্ম নেয়া ৫ বছর বয়সী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশু হোসাইন মুহাম্মদ তাহের কোরআন মুখস্থ করে পৃথিবীকে চমকে দেয়। বাংলাদেশের জন্মান্ধ হাফেজ তানভির ২০১২ সালে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত ৭৩ দেশের প্রতিযোগীদের হারিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে লাল-সবুজের পতাকাকে পৃথিবীর বুকে উজ্জ্বল করেছিলেন। কোরআনের মুখস্থাকরণের মতো মুখস্থকারীও আরেক বিস্ময়। আল্লাহ তায়ালার রহমতে আচ্ছাদিত হয় তাদের ধন্য জীবন। মৃত্যুর পরও তাদের আত্মার পাশাপাশি দেহও যেন সম্মান পায়। কুমিল্লার হাফেজ মাসুদ ২০০৪ সালে ইন্তিকাল করলে তাকে কবরস্থ করা হয়েছিল। দাফনের ১৩ বছর পর ১৪ মে ২০১৭ পুকুরের পানিতে কবর ভেঙে গেলে বেরিয়ে আসে হাফেজ মাসুদের অক্ষত তরতাজা লাশ। (বাংলাদেশ প্রতিদিন : ১৬-০৫-২০১৭)।
পৃথিবীর অনেক অমুসলিমেরই ইসলাম গ্রহণের পেছনে মূল কারণ হলো কোরআনের তেলাওয়াত শ্রবণ। কোরআনের কাছে যে-ই নিজেকে নিবেদন করে তাকেই কোরআন আলোকিত করে দেয়। তার দেহ-মনকে দেয় এক বেহেশতি প্রশান্তির আভা।
মহান আল্লাহ তায়ালা মানবগোষ্ঠীকে কোরআনের তেলাওয়াত শুনতে নির্দেশ দিয়েছেন। এরশাদ হয়েছে, ‘যখন কোরআন পড়া হয়, তখন তোমরা তাতে কান লাগিয়ে শোনো এবং নিশ্চুপ থাক, যাতে তোমাদের ওপর রহমত (নাজিল) হয়।’ (সূরা আরাফ : ২০৪)। আল্লাহ তায়ালার রহমত নাজিল হলে নিশ্চয়ই বান্দারা প্রশান্তি লাভ করবে। সত্যি মানুষের আত্মা কোরআনের পরশ পেলে প্রশান্তি লাভে ধন্য হয়। যুক্তরাজ্যের সালফোর্ড ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক মানবদেহে কোরআনুল কারিমের তেলাওয়াতের বিস্ময়কর ইতিবাচক প্রভাব আবিষ্কার করেছেন। মনোবিজ্ঞানের ১৫ জন পুরুষ ও ১৫ জন মহিলা শিক্ষার্থীকে নিয়ে পরিচালিত এ গবেষণায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের আগে তাদের রক্তচাপ ও হৃৎকম্পন মাপেন। কিছুক্ষণ তাদের কোরআন তেলাওয়াত করানো বা তেলাওয়াত শোনানোর পর আবার তাদের রক্তচাপ ও হৃৎকম্পন মেপে দেখেন তাদের মধ্য থেকে যাদের উচ্চরক্তচাপ ও অনিয়ন্ত্রিত হৃৎকম্পন ছিল তাদের সবার রক্তচাপ ও হৃৎকম্পন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

অফুরান বিস্ময় কোরআনের অলৌকিকতার

আপডেট টাইম : ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কোরআনের সঙ্গে যেন মানুষের নাড়ির সম্পর্ক। এর আলোকোজ্জ্বল অলৌকিকতা ঐশী চুম্বকের মতো পৃথিবীবাসীকে কাছে টেনে আলোকিত করেছে। নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যে-ই কোরআন পড়েছে, শুনেছে, অনুধাবন করার চেষ্ট করেছে, সে-ই কোরআনের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে মুসলমান হয়েছে। কোরআনুল কারিমের মতো আর কোনো গ্রন্থ নেই পৃথিবীতে।

পৃথিবীর একমাত্র অপরিবর্তিত ও অবিকৃত গ্রন্থ হলো কোরআন। পবিত্র কোরআনুল কারিম অবতীর্ণ হওয়ার দেড় হাজার বছর পরও এর একটি অক্ষরেরও কোনো পরিবর্তন হয়নি। আজ পর্যন্ত কেউ কোরআনকে পরিবর্তন করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে সফল হতে পারেনি। হতে পারবেও না। আল্লাহ তায়ালা কোরআনু কারিমে এরশাদ করেন, ‘আমি স্বয়ং এ উপদেশগ্রন্থ (কোরআন) নাজিল করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।’ (সূরা হিজর : ৯)।
সপ্তম আব্বাসীয় খলিফা আবু জাফর আবদুুল্লাহ আল মামুন একদিন বাইতুল হিকমাহর সেমিনার কক্ষে সুন্দর পোশাকধারী, সুন্দর চেহারার এক ইহুদি জনগণের সামনে চমৎকার বক্তব্য দিতে দেখলেন। সেমিনার শেষে খলিফা মামুন লোকটিকে প্রশ্ন করলেন, আপনি কি ইহুদি? লোকটি বলল, হ্যাঁ। খলিফা মামুন তাকে বিভিন্ন পুরস্কারের প্রস্তাব করে তাকে ইসলাম গ্রহণের আমন্ত্রণ জানালেন। কিন্তু লোকটি তার বাপ-দাদার ধর্ম ছাড়তে রজি হলো না। এক বছর পর আবার সে সেমিনার কক্ষে লোকটিকে দেখা গেল ইসলামে সৌন্দর্য নিয়ে বক্তব্য দিতে। খলিফা তাকে ইসলাম গ্রহণের কারণ জিজ্ঞেস করলে লোকটি বলল, ‘আমি আপনার দরবার থেকে ফিরে গিয়ে ধর্মগুলোকে পরীক্ষা করার ইচ্ছা করলাম। তাওরাতের তিনটি পা-ুলিপি লিখলাম। আর তাতে আমার মনগড়া অনেক কথা ঢুকিয়ে দিলাম। এরপর সেগুলোকে একটি গির্জায় নিয়ে বিক্রি করে দিলাম। দেখলাম লোকরা আমার লেখা ভেজাল তাওরাত কিনে নিল।
তারপর ইঞ্জিল শরিফের প্রতি মনোনিবেশন করলাম। তাওরাতের মতো মনগড়া কথা ঢুকিয়ে দিয়ে ইঞ্জিলেরও তিনটি কপি লিখলাম। খ্রিস্টানদের উপাসনলায়ে নিয়ে গেলে সেগুলো নির্বিঘেœ বিক্রি করতে পারলাম। এরপর আমি পবিত্র কোরআনুল কারিমের অলৌকিকতা পরীক্ষা করার জন্য এরও তিনটি কপি লিখলাম আর সেগুলোর ফাঁকে ফাঁকে মনগড়া কথা ঢুকিয়ে দিলাম। সেগুলো মসজিদে মুসলমানদের মধ্যে বিতরণ করতে গিয়ে বারবার ধরা খেলাম। তারা একে গ্রহণের আগে যাচাই করে দেখে। মুসলমানরা সেগুলো নিল না। বারবার ব্যর্থ হওয়ার পর আমার মন বলে দিল যে ভেজাল তাওরাত, ইঞ্জিল বাজারে চললেও ভেজাল কোরআন চলে না। একমাত্র কোরআনকেই অপরিবর্তনশীল ঐশী গ্রন্থ পেলাম। তাই এর শুদ্ধতা যাচাই করে তাতে মুগ্ধ হয়ে আমি ইসলাম কবুল করেছি।’ (তাফসিরে কুরতুবি : সূরা হিজর : ৯)।
কোরআনের শুদ্ধতায় বিশ্বাস করার জন্য কোনো গবেষণার দরকার নেই। কোনো গবেষণা ছাড়াই আমরা বিশ্বাস করি যে, পবিত্র কোরআন আল্লাহ তায়ালার সংরক্ষিত কিতাব। এতে কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন হবে না। এ পর্যন্ত কৃত কোনো গবেষণায়ই কোরআনের বিকৃতির প্রমাণ করতে পারেনি। যারাই গবেষণা করেছে, তারাই এর অলৌকিকতায় মৃগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ২০১৫ সালে আলবা ফাদেলি নামক বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (যুক্তরাজ্য) এক পিএইচডি গবেষক তার গবেষণা করতে গিয়ে পুরনো বইপত্র খোঁজার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়ামে পবিত্র কোরআনের পুরনো পা-ুলিপি খুঁজে পান। চামড়ায় লিখিত পা-ুলিপিটি কত বছরের পুরনো, তা পরীক্ষা করার জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রেডিওকার্বন পরীক্ষাগারে পাঠান। পরীক্ষায় একেবারেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, এ পা-ুলিপিটি ১ হাজার ৩৭০ বছর আগে লিখিত। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বর্তমান কোরআনের সঙ্গে সেই কোরআনকে মিলিয়ে ঘোষণা করে যে, বর্তমান কোরআনের সঙ্গে ১ হাজার ৩৭০ বছর আগের চামড়ায় লিখিত কোরআনের কোনো ব্যবধান তারা খুঁজে পাননি। এমনকি আজও একটি অক্ষরেরও পরিবর্তন হয়নি কোরআনে। (দ্য নিউইয়র্ক টাইমস : ২৩-০৭-২০১৫)।
পবিত্র কোরআনুল কারিমের আরেকটি বিস্ময়কর দিক হলো এর মুখস্থকরণ। কোরআন শুধু সর্বাধিক পঠিতই নয়; বরং মুখস্থকরণের দিক থেকেও কোরআন শীর্ষে। কোরআনকে যত মানুষ মুখস্থ করেছে পৃথিবীর আর কোনো গ্রন্থের ক্ষেত্রে সে পরিমাণ মানুষ মুখস্থ করেনি। এমনকি ধারে কাছেও নেই অন্যান্য গ্রন্থের মুখস্থকারীর সংখ্যা। পৃথিবীতে প্রায় ৮০ লাখ হাফেজে কোরআন রয়েছেন। অল্প সময়ে মুখস্থকরণও কোরআনের একটি মোজেজা। সম্প্রতি কক্সবাজারের শিশু ইয়াসিন আরাফাত মাত্র ৮৬ দিনে মহাগ্রন্থ আল কোরআন মুখস্থ করেছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরাও যুক্ত হয়ে যাচ্ছেন হাফেজদের এ মোবারক মিছিলে। বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারে জন্ম নেয়া ৫ বছর বয়সী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশু হোসাইন মুহাম্মদ তাহের কোরআন মুখস্থ করে পৃথিবীকে চমকে দেয়। বাংলাদেশের জন্মান্ধ হাফেজ তানভির ২০১২ সালে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত ৭৩ দেশের প্রতিযোগীদের হারিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে লাল-সবুজের পতাকাকে পৃথিবীর বুকে উজ্জ্বল করেছিলেন। কোরআনের মুখস্থাকরণের মতো মুখস্থকারীও আরেক বিস্ময়। আল্লাহ তায়ালার রহমতে আচ্ছাদিত হয় তাদের ধন্য জীবন। মৃত্যুর পরও তাদের আত্মার পাশাপাশি দেহও যেন সম্মান পায়। কুমিল্লার হাফেজ মাসুদ ২০০৪ সালে ইন্তিকাল করলে তাকে কবরস্থ করা হয়েছিল। দাফনের ১৩ বছর পর ১৪ মে ২০১৭ পুকুরের পানিতে কবর ভেঙে গেলে বেরিয়ে আসে হাফেজ মাসুদের অক্ষত তরতাজা লাশ। (বাংলাদেশ প্রতিদিন : ১৬-০৫-২০১৭)।
পৃথিবীর অনেক অমুসলিমেরই ইসলাম গ্রহণের পেছনে মূল কারণ হলো কোরআনের তেলাওয়াত শ্রবণ। কোরআনের কাছে যে-ই নিজেকে নিবেদন করে তাকেই কোরআন আলোকিত করে দেয়। তার দেহ-মনকে দেয় এক বেহেশতি প্রশান্তির আভা।
মহান আল্লাহ তায়ালা মানবগোষ্ঠীকে কোরআনের তেলাওয়াত শুনতে নির্দেশ দিয়েছেন। এরশাদ হয়েছে, ‘যখন কোরআন পড়া হয়, তখন তোমরা তাতে কান লাগিয়ে শোনো এবং নিশ্চুপ থাক, যাতে তোমাদের ওপর রহমত (নাজিল) হয়।’ (সূরা আরাফ : ২০৪)। আল্লাহ তায়ালার রহমত নাজিল হলে নিশ্চয়ই বান্দারা প্রশান্তি লাভ করবে। সত্যি মানুষের আত্মা কোরআনের পরশ পেলে প্রশান্তি লাভে ধন্য হয়। যুক্তরাজ্যের সালফোর্ড ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক মানবদেহে কোরআনুল কারিমের তেলাওয়াতের বিস্ময়কর ইতিবাচক প্রভাব আবিষ্কার করেছেন। মনোবিজ্ঞানের ১৫ জন পুরুষ ও ১৫ জন মহিলা শিক্ষার্থীকে নিয়ে পরিচালিত এ গবেষণায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের আগে তাদের রক্তচাপ ও হৃৎকম্পন মাপেন। কিছুক্ষণ তাদের কোরআন তেলাওয়াত করানো বা তেলাওয়াত শোনানোর পর আবার তাদের রক্তচাপ ও হৃৎকম্পন মেপে দেখেন তাদের মধ্য থেকে যাদের উচ্চরক্তচাপ ও অনিয়ন্ত্রিত হৃৎকম্পন ছিল তাদের সবার রক্তচাপ ও হৃৎকম্পন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।