বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বাঙালী মানেই উৎসবপ্রিয়। বিভিন্ন উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন প্রাণখুলে। ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখ, চৈত্র সংক্রান্তি, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ভাষা দিবস কিংবা ভালোবাসা দিবসে শুভেচ্ছা জানানোর রীতি রয়েছে সামাজিকভাবেই। উৎসবে প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানানোর কৌশল জানাচ্ছেন
কয়েক বছর আগেও প্রিয়জন বা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে বা কার্ড পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হতো। কিন্তু এখন সেটি দখল করে নিয়েছে ভার্চুয়াল শুভেচ্ছা। টেক্সট, অডিও বা ভিডিও আকারে শুভেচ্ছা বার্তা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাঠানো দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সেই প্রবণতা এখন শহর থেকে গ্রামেও পৌঁছেছে।
এতে একটি সমস্যাও তৈরি হয়েছে- একজনের আসা বার্তা কপি করে আরেকজনকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই বার্তা অন্যকেউ আবার সেই লোকের কাছে পাঠিয়ে থাকলে তৈরি হচ্ছে বিড়ম্বনা। সেই মানুষটি হয়তো ভাবতে পারে, আপনি বার্তাটি নিজের থেকে না লিখে কপি করেছেন। এতে মানুষটি আপনাকে ছোট ভাবতে পারে।
আরও পড়ুন-
এজন্য নিজের মতো করে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাতে হবে। কারণ শুভেচ্ছা বার্তা না পাঠালে বন্ধুমহলে আপনি অবহেলিত হতে পারেন। এমনকি মুখোমুখি শুভেচ্ছা বিনিময়ের পরও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুনরায় পাঠাতে পারেন। সে ক্ষেত্রে চেষ্টা করুন রুচিশীল কোনো বার্তা পাঠানোর। এতে আন্তরিকতার বিষয়টি আরও গাঢ় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে হিন্দুদের দীপাবলি উৎসব। যেকোন ধর্মের মানুষই বন্ধু-বান্ধবকে দীপাবলির শুভেচ্ছা পাঠাতে পারেন। দীপাবলি সনাতনধর্মীদের উৎসব হলেও শিখ এবং জৈন ধর্মাবলম্বীদেরও অনুষ্ঠান। আর এ অনুষ্ঠান সর্বজনীন। বাঙালী তো আজন্মই অসাম্প্রদায়িক।
বাংলাদেশে দীপাবলির দিনে কালীপূজা হয়; সে কারণে দীপাবলি আর কালীপূজা একসুতায় গাঁথা। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত, নেপাল, গুয়ানা, ত্রিনিদাদ-টোব্যাগো, মারিশাস, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ফিজি এবং সুরিনামে দীপাবলির দিন সরকারি ছুটি থাকে।
মন্দের বিরুদ্ধে ভালোর জয়কে উদযাপন করে প্রত্যেক সর্বজনীন আনন্দের উৎসব। অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলো জ্বালার দিন। নিজের ভেতর-বাহিরের সব অজ্ঞতাকে দীপশিখায় বিতাড়িত করার দিন। প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসার চিরন্তন শিখা প্রজ্জ্বলিত করার দিন।
আরও পড়ুন-
দেশ থেকে দেশে, অঞ্চল থেকে অঞ্চলে এ দিনের মাহাত্ম্য ভিন্ন ভিন্ন; তবু মূল কথা এক। আর আধ্যাত্মিকতার গভীর দর্শনে এ দিন- আত্মাকে প্রজ্জ্বলিত করে পরিশুদ্ধ করে সেই পরমব্রহ্মে লীন হওয়ার দিন। পশ্চিমবঙ্গেও দীপাবলিতে কালীপূজা হয়। অন্যান্য অঞ্চলে এ দিনে গণেশ পূজা এবং লক্ষ্মীপূজা হয়। সনাতনদের মাঝে কেউ কেউ দীপাবলিকে বিষ্ণুদেব এবং লক্ষ্মীদেবীর বিবাহবার্ষিকী হিসেবে পালন করেন।
দীপাবলি মূলত পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব। ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয় উৎসব। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে, মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য-নভেম্বরের মধ্যে দীপাবলি অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসেবে বৃহস্পতিবার থেকে দীপাবলি উৎসব শুরু হচ্ছে। কীভাবে স্বজনদের জানাবেন সেই শুভেচ্ছা? অবশ্যই নিজের মতো করে; তার পরেও জেনে নিন কিছু উপায়।
শুধু শুভ দীপাবলি না লিখে, একটু বড় করে বার্তা পাঠাতে পারেন। এতে মানুষটি ভাবতে বাধ্য হবে যে, আপনি তাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। সে ক্ষেত্রে যদি নিজে দু’লাইন লিখে বার্তা পাঠাতে পারেন তাহলে মন্দ হয় না।
আরও পড়ুন-
বিভিন্ন কবিতার চরণ থেকেও শুভেচ্ছা বার্তা তৈরি করতে পারেন। লিখতে পারেন, ‘অন্ধকার থেকে আলোর পথে শুরু হয়েছে এই যাত্রা; সবার জীবনে এই দীপাবলি আনুক নতুন মাত্রা। শুভ দীপাবলি।’ আবার কাউকে লিখতে পারেন, ‘তমসাবৃত মন থেকে তমসা হয়ে যাক আজ দূর; আনন্দে মন উঠুক ভরে, এই প্রাণেতে বাজুক সুর। মন-মন্দির সাজুক আলোতে, হৃদয়েতে দীপ জ্বালি। শুভ দীপাবলি।’ কিংবা এভাবেও লিখতে পারেন, ‘এই দীপাবলি হৃদয়েতে জ্বেলে যাক সম্প্রীতির আলো; মন থেকে মুছে যাক কুটিলতা, যত গ্লানি, যত কালো। শুভ দীপাবলি।