বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পোকা-মাকড়, মশা-মাছি ও কীট-পতঙ্গের যন্ত্রণায় কমবেশি সবাই ভুগে থাকেন। বিশেষ করে শীতকাল এলে এ যন্ত্রণা বেড়ে যায় বহুগুণে। আবার বর্ষাকালেও ঘরবাড়ির আঙিনায় নানান রকম কীট পতঙ্গের উপস্থিতি অনেক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করে কীটপতঙ্গের হাত থেকে বাঁচা যায় ঠিকই, কিন্তু কীটনাশকের ব্যবহারে আবার আমাদের ক্ষতিও হয়। ক্যান্সারের মতন অসুখের কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা শনাক্ত করেছেন আমাদের চারপাশে কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারকে।
অথচ রোগ বিস্তারকারী এইসব কীট-পতঙ্গকে দূরে রাখার জন্য কিছু বিকল্প প্রাকৃতিক উপায় আছে। এমন কিছু সহজলভ্য গাছগাছালি আছে যা ঘরে থাকলে কিংবা বারান্দায় লাগালে বাড়িতে আর কীটপতঙ্গ ঢুকবে না। এসব গাছের প্রাকৃতিক গুণ আমাদের বাড়ির বাগান, আঙিনা বা বারান্দাকে পোকামাকড় থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে।
আসুন, জেনে নেই- এমন কিছু উদ্ভিদের নাম ও তাদের কার্যকারিতা-
সাইট্রোনেলা: সাইট্রোনেলা এক প্রকার ঘাস প্রজাতির উদ্ভিদ। মশা তাড়ানোর জন্য দুনিয়াজুড়ে সুনাম আছে এর। প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ফুট উচ্চতার হয়ে থাকে সাইট্রোনেলা। আর এই উদ্ভিদ খুবই বিখ্যাত এর সুগন্ধি পাতার জন্য। মূলত এই পাতার গন্ধের তীব্রতার জন্যই মশার মতন পতঙ্গ কিংবা উড়তে পারে এমন যেকোনো পোকা মাকড় ও কীট ধারে কাছে ঘেষে না। গাছটি টবে লাগানো যায়, খুব বেশি জায়গাও লাগে না। এমনকি এটি বারন্দায় কিংবা ছাদের বিভিন্ন কোণেও লাগাতে পারেন। উত্তর আমেরিকায় বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, সাইট্রোনেলা উদ্ভিদ থেকে উৎপন্ন তেল কার্যকরী কীটনাশক। তবে এটি প্রতি ঘণ্টা অন্তর অন্তর ব্যবহার করতে হবে। সাইট্রোনেলা প্রাকৃতিক সূর্যালোকে ভালো বৃদ্ধি পায় এবং সাধারণত নিষ্কাশনযোগ্য পাত্রেই এটি ভালো উৎপন্ন হয়।
গাঁদা ফুল: গাঁদা ফুল আমাদের অতি পরিচিত। বাংলাদেশে বহু মানুষের প্রিয় একটি ফুল। পহেলা ফাল্গুনে মেয়েদের খোপা কিংবা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে বাড়িঘর সাজানোর জন্য গাঁদা ফুলের কথা সবার আগে মনে পড়ে। যেটা বেশির ভাগ মানুষ জানেন না সেটা হলো গাঁদা ফুলের পাপড়ি এবং গাছের পাতার মাঝে লুকোনো আছে এ্যান্টিসেপ্টিক ওষুধ। শুধু তাই নয়, এ ফুলের একটি অনন্য গুণ হলো- এর পরাগ ও পাপড়ি থেকে আসা সুবাস মশা মাছি তাড়ায়। গাঁদা ফুলের কয়েকটি চারা আপনার বাড়ির বারান্দায় রেখে দিন। তাতে করে বাড়ির সৌন্দর্য তো বাড়াবেই, পাশাপাশি আপনাকে রক্ষা করবে মশা মাছির হাত থেকে। আর হাত বাড়ালেই তরতাজা ফুলের সুবাস তো পাচ্ছেনই।
বাসিল পাতা: বাসিলকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় ওসিমাম বেসিলিকম বলে। ইতালিয়ানরা খুব করে পিজা পাস্তার সাথে বাসিল পাতা খেতো। এখন অবশ্য সারা দুনিয়ার মানুষই খায়। মুখরোচক খাবারের সাথে শুকনো মসলা হিসেবে এর ব্যাবহার বেশি হলেও মূলত বাসিল একটি ওষুধি উদ্ভিদ। জমিতে শাক-সব্জির পাশাপাশি ঘরের আঙিনায়, বাগানে বা ছাদে অন্যান্য গাছপালার সাথে এটা লাগিয়ে রাখতে পারেন। আবার বারন্দায় টবেও লাগানো যায়। এর একটি তীব্র ভেজা গন্ধ পোকামাকড়কে ঘরবাড়ির আঙিনা আর বাগান থেকে দূরে রাখে। তাছাড়া বাসিল পাতার রস প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবেও ব্যবহার করা হয় সারা পৃথিবীতে। বাসিল পাতার রস প্রাকৃতিক কৃষি খামারিদের কাছে ‘বাগ স্প্রে’ নামেই অধিক পরিচিত।
মেন্থল: পেপারমিন্ট হচ্ছে- মেন্থল প্রজাতির একটি ওষুধী উদ্ভিদ। এর খাঁটি তাজা গন্ধ যেমন মুখে সুবাস ছড়ায় তেমনি এটা দিয়ে তাড়ানো যায় মশা। মেন্থলের পাতার রসে যে তীব্র ঘ্রাণ সেটাই মশা ও পোকামাকড়কে দূরে সরিয়ে রাখে। এটা বারান্দায় বা বাগানে আদ্র মাটি ও নিষ্কাশন উপযোগী একটি পাত্রে উৎপাদন করা সম্ভব। একে সরাসরি সূর্যালোক থেকে দূরে রাখা হয়।
এছাড়া কিছু অন্যান্য গাছপালাও রয়েছে যেগুলো মশা-মাছি কীটপতঙ্গ ভিড়তে দেয় না। একটু অচেনা হলেও এসব গাছের চারা যদি যোগাড় করে লাগাতে পারেন, তাহলে যেমন রোজমারি, মিন্ট ও সুগন্ধি জাতীয় আরো কিছু উদ্ভিদ।
কিছু বাড়তি সতর্কতা: পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশেই শুধু গাছের ভরসায় মশা খেদানোর বুদ্ধি শতভাগ কাজে লাগলেও আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো অতটা কার্যকর হবে না। বিশেষ করে শীতকালে মশার পরিমাণ যেভাবে বাড়ে তাতে সন্ধ্যা এলেই শুরু হয় দুর্দান্ত উপদ্রব। তাই এসব উদ্ভিদ তো লাগাবেনই, পাশাপাশি অবলম্বন করবেন বাড়তি কিছু সতর্কতা-
১) সন্ধ্যা হবার অপেক্ষা না করে বিকেল বেলাতেই আপনার ঘরের জানালা-দরজা বন্ধ করে দিন। শীতের দিনে দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা লাগার আগ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মশা ঘরে ঢোকে।
২) বাড়ির আশপাশে ময়লা ফেলবেন না। গাছের টবে কিংবা অন্য কোনো পাত্রে পানি জমতে দেবেন না।
৩) জানলার চারপাশে নেট লাগিয়ে দিতে পারেন। তাতে করে বাইরে থেকে মশা ঢোকার প্রবণতা একদম বন্ধ হয়ে যাবে।
৪) বিশেষ পরিস্থিতে শরীরে নিমের তেল কিংবা মশা প্রতিরোধক প্রাকৃতিক লোশন ব্যবহার করতে পারেন। তাতে করে মশা ঘরে ঢুকলেও আপনাকে কামড়ানোর সাহস করবে না।