ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শহরে কয়েলে কি শুধু মশাই মরে নাকি মানুষও

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ঢাকা শহরে থাকেন আর মশার কামড় খাননি এমন কথা যে বলে আর যে বিশ্বাস করে, দুজনেই আহম্মক। দেশজুড়ে নগর জীবনের সবচেয়ে পরিচিত উপদ্রবের নাম মশা। তাই শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, সারা দেশেই স্থানীয় প্রশাসনের বাজেটের বড় একটা অংশজুড়ে থাকে শুধু একটি জিনিস- মশক নিধন। দেশের সাধারন মানুষও মশার উপদ্রব থেকে পরিত্রাণ পেতে নানান রকম উপশম ব্যবহার করে। তার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত উপশমের নাম মশার কয়েল। সস্তা আর সহজলভ্য বলে কয়েলই এদেশের বহু পরিবারে মশক উপদ্রবের সবচেয়ে সহজ সমাধান। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না, এই কয়েলেই রয়েছে আপনাকে অসুস্থ করে ফেলার মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি।

কয়েলের মূল কাজ মশা তাড়ানো হলেও, আজকাল বাজারে কিছু কিছু কয়েল পাওয়া যাচ্ছে যেগুলো শুধু মশা তাড়ায়ই না মেরেও ফেলে। শুধু মশা মারলেও কোনো কথা ছিল না, এসব মশার কয়েলের ধোঁয়ায় তেলাপোকা, টিকটিকি এমনকি ইঁদুর পর্যন্ত মরে গেছে এমনটাও ঘটার প্রমাণ পাওয়া গেছে।  মশার কয়েল পাওয়া যাচ্ছে তা কেবল মশা তাড়াচ্ছে না, বরং মশা মারতে সক্ষম। শুধু মশা নয়, এসব কয়েল মশার পাশাপাশি তেলাপোকা এমনকি ইঁদুর মারতেও সক্ষম। তাই একই ঘরে বাস করা মানুষের ক্ষেত্রেও যে এর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না মোটেই। নিশ্চিত করে বলতে না পারার আরেকটা বড় কারণ হলো হালে গজিয়ে ওঠা এসব কয়েলের কোম্পানি বাজারজাতকরণের জন্য সরকারি অনুমোদনের ধার ধারে না। নেই বিএসটিআইয়ের কোনো সিল ছাপ্পড়ও। নিমপাতা, তুলসিপাতা, পাতা বাহার, বোমা, এস্ট্রো, জম, টার্গেট, টার্গেট পয়েন্ট নামে বাজারজাতকরণ করা হচ্ছে কয়েলগুলো। কিনছেন মূলত দরিদ্র বস্তিবাসী। এটা ঠিক যে মশা তাড়াতে কয়েলগুলোর কার্যকারিতা আছে, কিন্তু এটাও ঠিক যে এতে করে মানুষের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও অনেক।

বাহারি সব নামে প্যাকেটজাত করা হয়েছে এসব কয়েল বেশি বিক্রি হয় তুলনামূলক অনুন্নত এলাকাগুলোতে। বস্তিবাসী এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের ক্রেতারাই এসব কয়েল কোম্পানির প্রথম পছন্দ। তাই এধরনের মানুষ বেশি আছে এমন ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায়, সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মীদের আনাগোনা কম এমন জায়গার মুদি দোকানে গেলেই দেখা যাবে তাকে তাকে সাজানো রয়েছে এসব কয়েল। দোকানিরা বিক্রি হয় বলেই রাখে, আর ক্রেতারাও কেনে। অথচ কেউ এর ক্ষতিকর কোনো দিক রয়েছে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন করে না। এমনকি সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো রকম অনুমোদন না নিয়ৈই বাজারে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এসব কয়েল।

মশার উপদ্রব বেশি লক্ষ্য করা যায় রাজধানীর অনুন্নত ও উন্নয়নশীল এলাকায়গুলোতে। নোংরা পরিবেশে মশা জন্ম লাভ করে। আর এসব এলাকা ছেয়ে গেছে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর কয়েলে।

অবশ্য কয়েলের মারণাস্ত্র হয়ে উঠবার এক অদ্ভূত অভিযোগ প্রথম পাওয়া গেল কাঁটাবনের শৌখিন পোষা পাখির দোকানে। ‘সাগর একুরিয়াম অ্যান্ড পেট ফুট’ মালিক মো. নাহিদুল ইসলামের অভিযোগ, ‘ঢাকার প্রায় এলাকা থেকেই আমাদের কাছে কাস্টমার আসে, আর প্রায়ই শুনতে হয় তাদের শখের পাখিটি মারা গেছে। কেইজ বার্ড গুলোতো সবাই ঘরে রেখেই পালে। আর এসব বাড়িতে সবাই কমবেশি কয়েল ব্যবহার করে। রাতে ঘরের দরজা জানালা সব বন্ধ করে ঘুমাতে গেছে। সকালে দেখে খাচার ভেতর পাখি মরে পড়ে আছে। আসলে কয়েলের ধোঁয়ায় দম আটকে পাখিগুলো মারা যায়। এরকম ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।’

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কিছুদিন ধরেই সিটি করপোরেশনের তৎপরতা বাড়লেও কমেনি কয়েলের ক্রেতা। রাতে কয়েল হাতে বাড়ি ফেরাটা অনেকেরই দৈনন্দিন রুটিন হয়ে দ্বাড়িয়েছে। তবে, পাড়ার খুচরো দোকানে খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না বিএসটিআই কর্তৃক অনুমোদিত নামজাদা কোম্পানির কয়েল। ক্রেতার চাহিদার উপর ভিত্তি করেই বেনামি কোম্পানির কয়েল বিক্রি করতেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন দোকানিরা। এমন মন্তব্য প্রায় সব দোকানির।

কিন্তু যারা কেনেন তারা কেন না জেনে না শুনে কেনেন? একবারের জন্য হলেও মনের মধ্যে যে ক্ষতির ভাবনা উঁকি দেয় না ব্যাপারটা তা না। এসব কয়েলের নিয়মিত ক্রেতা ডিপিডিসি মোহাম্মাদপুর জাপান গার্ডেন কন্ট্রোলের কর্মচারী মো. রুবেল বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘জানি তো কয়েল ক্ষতি করে। কিন্তু কী করার আছে? মশার যন্ত্রণার চাইতে কয়েল ভালো।’

আর দোকানির জন্যতো আসলে ক্রেতাই সব। ক্রেতা চায় বলেই দোকানি রাখে। অন্তত এমনটাই বললেন হাজারীবাগ ঝাউচর এলাকার মুদি ব্যবসায়ী মো. সিদ্দিক। বাঙালী কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘দোকান করি ২০ বছর। আগে মরটিন-এসিআই বেচতাম। হুট কইরা কই থেকে এই সব আমপাতা-জামপাতা কয়েল আইলো, এখন কাস্টমার এগুলাই চায়, এগুলাই বেশি চলে। আগে দোকানে আমিই এসব কয়েল জালাইতাম। দেখি মশাতো মশা, তেলাপোকা, ইন্দুর সব মইরা যায়। পরে বুঝলাম এগুলা শুধু মশা না মানুষ মারারও কয়েল। ভয়ে এখন আর জালাইনা। খালি বেচি। ব্যবসা করি ভাই। কাস্টমার যেটা চায় সেইটাতো রাখা লাগবোই।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

শহরে কয়েলে কি শুধু মশাই মরে নাকি মানুষও

আপডেট টাইম : ০৬:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ঢাকা শহরে থাকেন আর মশার কামড় খাননি এমন কথা যে বলে আর যে বিশ্বাস করে, দুজনেই আহম্মক। দেশজুড়ে নগর জীবনের সবচেয়ে পরিচিত উপদ্রবের নাম মশা। তাই শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, সারা দেশেই স্থানীয় প্রশাসনের বাজেটের বড় একটা অংশজুড়ে থাকে শুধু একটি জিনিস- মশক নিধন। দেশের সাধারন মানুষও মশার উপদ্রব থেকে পরিত্রাণ পেতে নানান রকম উপশম ব্যবহার করে। তার মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত উপশমের নাম মশার কয়েল। সস্তা আর সহজলভ্য বলে কয়েলই এদেশের বহু পরিবারে মশক উপদ্রবের সবচেয়ে সহজ সমাধান। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না, এই কয়েলেই রয়েছে আপনাকে অসুস্থ করে ফেলার মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি।

কয়েলের মূল কাজ মশা তাড়ানো হলেও, আজকাল বাজারে কিছু কিছু কয়েল পাওয়া যাচ্ছে যেগুলো শুধু মশা তাড়ায়ই না মেরেও ফেলে। শুধু মশা মারলেও কোনো কথা ছিল না, এসব মশার কয়েলের ধোঁয়ায় তেলাপোকা, টিকটিকি এমনকি ইঁদুর পর্যন্ত মরে গেছে এমনটাও ঘটার প্রমাণ পাওয়া গেছে।  মশার কয়েল পাওয়া যাচ্ছে তা কেবল মশা তাড়াচ্ছে না, বরং মশা মারতে সক্ষম। শুধু মশা নয়, এসব কয়েল মশার পাশাপাশি তেলাপোকা এমনকি ইঁদুর মারতেও সক্ষম। তাই একই ঘরে বাস করা মানুষের ক্ষেত্রেও যে এর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না মোটেই। নিশ্চিত করে বলতে না পারার আরেকটা বড় কারণ হলো হালে গজিয়ে ওঠা এসব কয়েলের কোম্পানি বাজারজাতকরণের জন্য সরকারি অনুমোদনের ধার ধারে না। নেই বিএসটিআইয়ের কোনো সিল ছাপ্পড়ও। নিমপাতা, তুলসিপাতা, পাতা বাহার, বোমা, এস্ট্রো, জম, টার্গেট, টার্গেট পয়েন্ট নামে বাজারজাতকরণ করা হচ্ছে কয়েলগুলো। কিনছেন মূলত দরিদ্র বস্তিবাসী। এটা ঠিক যে মশা তাড়াতে কয়েলগুলোর কার্যকারিতা আছে, কিন্তু এটাও ঠিক যে এতে করে মানুষের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও অনেক।

বাহারি সব নামে প্যাকেটজাত করা হয়েছে এসব কয়েল বেশি বিক্রি হয় তুলনামূলক অনুন্নত এলাকাগুলোতে। বস্তিবাসী এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের ক্রেতারাই এসব কয়েল কোম্পানির প্রথম পছন্দ। তাই এধরনের মানুষ বেশি আছে এমন ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায়, সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মীদের আনাগোনা কম এমন জায়গার মুদি দোকানে গেলেই দেখা যাবে তাকে তাকে সাজানো রয়েছে এসব কয়েল। দোকানিরা বিক্রি হয় বলেই রাখে, আর ক্রেতারাও কেনে। অথচ কেউ এর ক্ষতিকর কোনো দিক রয়েছে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন করে না। এমনকি সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো রকম অনুমোদন না নিয়ৈই বাজারে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এসব কয়েল।

মশার উপদ্রব বেশি লক্ষ্য করা যায় রাজধানীর অনুন্নত ও উন্নয়নশীল এলাকায়গুলোতে। নোংরা পরিবেশে মশা জন্ম লাভ করে। আর এসব এলাকা ছেয়ে গেছে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর কয়েলে।

অবশ্য কয়েলের মারণাস্ত্র হয়ে উঠবার এক অদ্ভূত অভিযোগ প্রথম পাওয়া গেল কাঁটাবনের শৌখিন পোষা পাখির দোকানে। ‘সাগর একুরিয়াম অ্যান্ড পেট ফুট’ মালিক মো. নাহিদুল ইসলামের অভিযোগ, ‘ঢাকার প্রায় এলাকা থেকেই আমাদের কাছে কাস্টমার আসে, আর প্রায়ই শুনতে হয় তাদের শখের পাখিটি মারা গেছে। কেইজ বার্ড গুলোতো সবাই ঘরে রেখেই পালে। আর এসব বাড়িতে সবাই কমবেশি কয়েল ব্যবহার করে। রাতে ঘরের দরজা জানালা সব বন্ধ করে ঘুমাতে গেছে। সকালে দেখে খাচার ভেতর পাখি মরে পড়ে আছে। আসলে কয়েলের ধোঁয়ায় দম আটকে পাখিগুলো মারা যায়। এরকম ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।’

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কিছুদিন ধরেই সিটি করপোরেশনের তৎপরতা বাড়লেও কমেনি কয়েলের ক্রেতা। রাতে কয়েল হাতে বাড়ি ফেরাটা অনেকেরই দৈনন্দিন রুটিন হয়ে দ্বাড়িয়েছে। তবে, পাড়ার খুচরো দোকানে খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না বিএসটিআই কর্তৃক অনুমোদিত নামজাদা কোম্পানির কয়েল। ক্রেতার চাহিদার উপর ভিত্তি করেই বেনামি কোম্পানির কয়েল বিক্রি করতেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন দোকানিরা। এমন মন্তব্য প্রায় সব দোকানির।

কিন্তু যারা কেনেন তারা কেন না জেনে না শুনে কেনেন? একবারের জন্য হলেও মনের মধ্যে যে ক্ষতির ভাবনা উঁকি দেয় না ব্যাপারটা তা না। এসব কয়েলের নিয়মিত ক্রেতা ডিপিডিসি মোহাম্মাদপুর জাপান গার্ডেন কন্ট্রোলের কর্মচারী মো. রুবেল বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘জানি তো কয়েল ক্ষতি করে। কিন্তু কী করার আছে? মশার যন্ত্রণার চাইতে কয়েল ভালো।’

আর দোকানির জন্যতো আসলে ক্রেতাই সব। ক্রেতা চায় বলেই দোকানি রাখে। অন্তত এমনটাই বললেন হাজারীবাগ ঝাউচর এলাকার মুদি ব্যবসায়ী মো. সিদ্দিক। বাঙালী কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘দোকান করি ২০ বছর। আগে মরটিন-এসিআই বেচতাম। হুট কইরা কই থেকে এই সব আমপাতা-জামপাতা কয়েল আইলো, এখন কাস্টমার এগুলাই চায়, এগুলাই বেশি চলে। আগে দোকানে আমিই এসব কয়েল জালাইতাম। দেখি মশাতো মশা, তেলাপোকা, ইন্দুর সব মইরা যায়। পরে বুঝলাম এগুলা শুধু মশা না মানুষ মারারও কয়েল। ভয়ে এখন আর জালাইনা। খালি বেচি। ব্যবসা করি ভাই। কাস্টমার যেটা চায় সেইটাতো রাখা লাগবোই।