বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ডাল ও কুমড়োর বড়ি বাঙালি একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। বিভিন্ন তরকারির সাথে এটি রান্না করে খাওয়ার প্রচলন বহু আগের। শীত মৌসুম এলেই গ্রাম বাংলায় কুমোড়ার বড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। গ্রামের অনেক গৃহবধূ নিজেদের খাওয়ার জন্য বাড়িতে এটা তৈরি করেন। আবার অনেকে এটাকে আয়ের উৎস হিসেবে নিয়েছেন। যশোরের মণিরামপুরের এমন কিছু পরিবার আছে, যারা সংসারে বাড়তি আয়ের জন্য শীতকালে বড়ি তৈরি করেন। অন্য সময়ে তারা ক্ষুদ্র ব্যবসাসহ নানা কাজ করে সংসার চালান। এটি পৌর এলাকার হাকোবা কুন্ডুপাড়া। শীত এলেই এই পাড়ার বাসিন্দারা বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বছরে কার্তিক থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত পাঁচ মাস চলে বড়ি তৈরির কাজ।
সরেজমিনে হাকোবা কুন্ডুপাড়ায় গেলে নারী পুরুষদের বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। বাড়ি থেকে বড়ি তৈরির উপাদান গোছগাছ করে এনে মাঠে বসে সকালের মিষ্টি রোদে বড়ি তৈরি করছেন তারা। পাড়ায় ঢুকতেই দেখা মেলে দম্পতি শ্যামল কুন্ডু ও নমিতা কুন্ডুর সাথে। তারা দুজনে বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত। এসময় কথা হয় শ্যামলের সাথে। তিনি মণিরামপুর বাজারের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, শীতের প্রথম থেকে বড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়। বড়ি তৈরিতে ডালের সাথে চালকুমড়া ব্যবহার করতে পারলে ভালো হয়। অনেক সময় ডালের সাথে কচু ও ফুলকপি ব্যবহার করি। প্রতি কেজি কুমোড়ার বড়ির খুচরা দাম ২০০ টাকা আর কচু বা ফুলকপির বড়ি কেজি প্রতি ১৫০ টাকা। এক কেজি বড়ি বিক্রি করতে পারলে পঞ্চাশ টাকা লাভ থাকে বলে জানান শ্যামল।
শ্যামলের স্ত্রী নমিতা বলেন, ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত দুজনে মিলে পাঁচ কেজি বড়ি তৈরি করা যায়। তিন দিন পর বড়ি শুকিয়ে খাওয়ার উপযোগী হয়।
একই মাঠে বড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত বলয় কুন্ডু ও তার স্ত্রী। বলয় বলেন, এ কাজ তো বেশি দিন করা যায় না। এক মাস আগে ধরে শুরু করেছি। সামনে আর হয়ত দুই মাস করা যাবে। অন্য ব্যবসার ফাঁকে এই কাজ করে বাড়তি আয় করেন তিনি। সকাল হলেই স্ত্রীর সাথে একজনকে ভাড়ায় নিয়ে হাজির হন বাড়ির পাশের মাঠে। প্রতিদিন ১০-১২ কেজি করে বড়ি বসান। বলয় বলেন, কুমোড়ার বড়ি তৈরি করে বাজারে নিয়ে ১২০ টাকা করে পাইকারি বিক্রি করি। তাতে কেজি প্রতি ১০-১৫ টাকা লাভ থাকে। বলয় কুন্ডুর পাশে বড়ি তৈরির উপাদান প্রস্তুত করতে ব্যস্ত গৃহবধূ জয়ন্তি কুন্ডু। তিনি বলেন, একাই দিনে ৮-১০ কেজি বড়ি বসানো যায়। ১৫ বছর ধরে এই কাজ করছি। এই কাজে তারা কোনো ঋণ পান না বলে জানান।
এক প্রশ্নে শ্যামল কুন্ডু বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ডালের বড়ি তৈরি আমাদের পুরোনো পেশা। পাড়ার প্রায় সব পরিবার বড়ি তৈরি করে বাড়তি আয় করেন। আগে ঢেঁকিতে ডাল কুটে বড়ি তৈরি করতে হতো। এখন ডাল কোটার মেশিন বের হওয়ায় অনেকে বাড়িতে বসে নিজেদের পরিবারের চাহিদামত বড়ি তৈরি করেন। ফলে বাজারের বড়ির চাহিদা কমেছে। আগে ব্যাপারিরা এসে বড়ি কিনে নিয়ে যেত। এখন ব্যাপারিরা আর আসে না। তবে পুরোন ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই পাড়ার প্রায় ২০ ঘর পরিবার এখনও বড়ি তৈরির কাজ করে চলেছেন বলে জানান শ্যামল কুন্ডু।