ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মধুর বত্তৃদ্ধতায় ট্রাম্পকে বিঁধলেন মিশেল ♦ হিলারিকে জেতাতে হবে : স্যান্ডার্স ♦ ডেমোক্রেটিক পার্টির

রাজনীতির জটিল পথে মিশেল ওবামা প্রথম পা রাখেন ২০০৮ সালে। তাঁর স্বামী বারাক ওবামা সে বছর প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। এরপর ওবামার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুই মেয়াদে বুদ্ধিমত্তা, স্টাইল আর দুর্দান্ত কৌশলী আচরণে সবার সামনে নিজের স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব মেলে ধরেন তিনি। এরই এক অসাধারণ ঝলক দেখা গেল ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলন শুরুর আগের রাত সোমবারে। প্রত্যয়ী ব্যক্তিত্ব আর চওড়া হাসি মুখে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ফার্স্ট লেডি সমর্থন চাইলেন সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনের জন্য। পাশাপাশি রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি তীব্র ঘৃণা ঝরে পড়ল তাঁর কণ্ঠে।

আবেগ, দৃঢ়তা আর কথার শৈলীতে ভরা এ বত্তৃদ্ধতায় মিশেল বলেন, ‘টেলিভিশনে কোনো এক পরিচিত মুখ যে ঘৃণ্য ভাষা ব্যবহার করে কথা বলেন, তা এ দেশের প্রকৃত চেহারা নয়। তাদের পর্যায়ে নেমে যাওয়া যাবে না। আমাদের লক্ষ্য হলো, যখন তারা নিচে নামবে, আমার ওপরে উঠব।’ এর আগেই ফিলাডেলফিয়ায় চালমান ডেমোক্রেটিক পার্টির কনভেনশনে মঞ্চে ওঠেন ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। অল্প কিছুদিন আগেই দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা প্রত্যাশী ছিলেন তিনি। তবে সোমবার তাঁর কণ্ঠে ছিল ভিন্ন সুর। বললেন, হিলারিকে জেতাতে হবে। আর তাঁর সাধ্যের সবটুকু দিয়ে তিনি চেষ্টা করবেন ট্রাম্পকে পরাজিত করতে।

মিশেল তাঁর বত্তৃদ্ধতায় একবারও রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর নাম মুখে আনেননি। তবে তাঁর বত্তৃদ্ধতাটিকে দেখা হচ্ছে ট্রাম্পবিরোধী সবচেয়ে মোক্ষম প্রচার হিসেবে। মিশেল বলেন, তিনি চান এই কাজটি (প্রেসিডেন্ট পদ) যিনি জানেন, এর গুরুত্ব যিনি বোঝেন তিনিই যেন তাঁর স্বামীর স্থলাভিষিক্ত হন। ‘আমি আমার মেয়েদের বলি, তোমাদের বাবার নাগরিকত্ব বা বিশ্বাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে তাদের কথা কানে তুলো না। এই দেশ মহান নয়—এমন কথা কাউকে উচ্চারণও করতে দেবে না। এ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দেশ যুক্তরাষ্ট্র। ছিল, আছে।’ এ সময় তীব্র করতালিতে মিশেলের বক্তব্যকে স্বাগত জানান দর্শকরা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে এখন যোগ্য প্রার্থী একজনই। তিনি হলেন আমাদের বন্ধু হিলারি ক্লিনটন। জীবনে তিনি কোনো কিছুতেই হার মানেননি।’

হারভার্ডে পড়াশোনা করা এই আইনজীবী আবেগপূর্ণ কণ্ঠে বলেন, “রোজ সকালে আমার ঘুম ভাঙে এমন একটি বাড়িতে, যেটি ক্রীতদাসদের শ্রম-ঘামে তৈরি হয়েছে। আমি দেখি আমার মেয়েরা—দুটি বুদ্ধিমতী, কৃষ্ণাঙ্গ সুন্দরী কিশোরী হোয়াইট হাউসের লনে খেলে বেড়াচ্ছে। আর হিলারি ক্লিনটনের জন্যই আমার মেয়েরা, আমাদের ছেলেমেয়েরা ভাবতে পারছে যে একজন নারীর পক্ষেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব। তিনি সত্যিকার অর্থেই ‘পাবলিক সারভেন্ট’।” এ দেশের শিশুদের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। চাপের মুখে নতিস্বীকার করেন না।

মিশেলের ভাষণের পর টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ওবামা বলেন, ‘অসাধারণ এক নারীর অসাধারণ বক্তব্য। আমাদের দেশ তাঁর মতো একজন ফার্স্ট লেডি পেয়েছে—এর চেয়ে বেশি গর্বের আর কী থাকতে পারে। মিশেল, আমি তোমাকে ভালোবাসি।’

ডেমোক্রেটিক পার্টির এই সম্মেলন থেকেই আগামী বৃহস্পতিবার হিলারিকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হবে। সম্মেলনে হিলারি বত্তৃদ্ধতা দেবেন ওই দিনই। এর আগের দিন মঞ্চে উঠবেন প্রেসিডেন্ট ওবামা, ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও হিলারির রানিংমেট টিম কেইন। আর আজ বত্তৃদ্ধতা দেবেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন।

সূত্র : বিবিসি, নিউ ইয়র্ক টাইমস, এএফপি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

মধুর বত্তৃদ্ধতায় ট্রাম্পকে বিঁধলেন মিশেল ♦ হিলারিকে জেতাতে হবে : স্যান্ডার্স ♦ ডেমোক্রেটিক পার্টির

আপডেট টাইম : ০৪:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ জুলাই ২০১৬

রাজনীতির জটিল পথে মিশেল ওবামা প্রথম পা রাখেন ২০০৮ সালে। তাঁর স্বামী বারাক ওবামা সে বছর প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। এরপর ওবামার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুই মেয়াদে বুদ্ধিমত্তা, স্টাইল আর দুর্দান্ত কৌশলী আচরণে সবার সামনে নিজের স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব মেলে ধরেন তিনি। এরই এক অসাধারণ ঝলক দেখা গেল ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলন শুরুর আগের রাত সোমবারে। প্রত্যয়ী ব্যক্তিত্ব আর চওড়া হাসি মুখে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ফার্স্ট লেডি সমর্থন চাইলেন সাবেক ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনের জন্য। পাশাপাশি রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি তীব্র ঘৃণা ঝরে পড়ল তাঁর কণ্ঠে।

আবেগ, দৃঢ়তা আর কথার শৈলীতে ভরা এ বত্তৃদ্ধতায় মিশেল বলেন, ‘টেলিভিশনে কোনো এক পরিচিত মুখ যে ঘৃণ্য ভাষা ব্যবহার করে কথা বলেন, তা এ দেশের প্রকৃত চেহারা নয়। তাদের পর্যায়ে নেমে যাওয়া যাবে না। আমাদের লক্ষ্য হলো, যখন তারা নিচে নামবে, আমার ওপরে উঠব।’ এর আগেই ফিলাডেলফিয়ায় চালমান ডেমোক্রেটিক পার্টির কনভেনশনে মঞ্চে ওঠেন ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। অল্প কিছুদিন আগেই দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা প্রত্যাশী ছিলেন তিনি। তবে সোমবার তাঁর কণ্ঠে ছিল ভিন্ন সুর। বললেন, হিলারিকে জেতাতে হবে। আর তাঁর সাধ্যের সবটুকু দিয়ে তিনি চেষ্টা করবেন ট্রাম্পকে পরাজিত করতে।

মিশেল তাঁর বত্তৃদ্ধতায় একবারও রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর নাম মুখে আনেননি। তবে তাঁর বত্তৃদ্ধতাটিকে দেখা হচ্ছে ট্রাম্পবিরোধী সবচেয়ে মোক্ষম প্রচার হিসেবে। মিশেল বলেন, তিনি চান এই কাজটি (প্রেসিডেন্ট পদ) যিনি জানেন, এর গুরুত্ব যিনি বোঝেন তিনিই যেন তাঁর স্বামীর স্থলাভিষিক্ত হন। ‘আমি আমার মেয়েদের বলি, তোমাদের বাবার নাগরিকত্ব বা বিশ্বাস নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে তাদের কথা কানে তুলো না। এই দেশ মহান নয়—এমন কথা কাউকে উচ্চারণও করতে দেবে না। এ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দেশ যুক্তরাষ্ট্র। ছিল, আছে।’ এ সময় তীব্র করতালিতে মিশেলের বক্তব্যকে স্বাগত জানান দর্শকরা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে এখন যোগ্য প্রার্থী একজনই। তিনি হলেন আমাদের বন্ধু হিলারি ক্লিনটন। জীবনে তিনি কোনো কিছুতেই হার মানেননি।’

হারভার্ডে পড়াশোনা করা এই আইনজীবী আবেগপূর্ণ কণ্ঠে বলেন, “রোজ সকালে আমার ঘুম ভাঙে এমন একটি বাড়িতে, যেটি ক্রীতদাসদের শ্রম-ঘামে তৈরি হয়েছে। আমি দেখি আমার মেয়েরা—দুটি বুদ্ধিমতী, কৃষ্ণাঙ্গ সুন্দরী কিশোরী হোয়াইট হাউসের লনে খেলে বেড়াচ্ছে। আর হিলারি ক্লিনটনের জন্যই আমার মেয়েরা, আমাদের ছেলেমেয়েরা ভাবতে পারছে যে একজন নারীর পক্ষেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব। তিনি সত্যিকার অর্থেই ‘পাবলিক সারভেন্ট’।” এ দেশের শিশুদের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। চাপের মুখে নতিস্বীকার করেন না।

মিশেলের ভাষণের পর টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ওবামা বলেন, ‘অসাধারণ এক নারীর অসাধারণ বক্তব্য। আমাদের দেশ তাঁর মতো একজন ফার্স্ট লেডি পেয়েছে—এর চেয়ে বেশি গর্বের আর কী থাকতে পারে। মিশেল, আমি তোমাকে ভালোবাসি।’

ডেমোক্রেটিক পার্টির এই সম্মেলন থেকেই আগামী বৃহস্পতিবার হিলারিকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হবে। সম্মেলনে হিলারি বত্তৃদ্ধতা দেবেন ওই দিনই। এর আগের দিন মঞ্চে উঠবেন প্রেসিডেন্ট ওবামা, ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও হিলারির রানিংমেট টিম কেইন। আর আজ বত্তৃদ্ধতা দেবেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন।

সূত্র : বিবিসি, নিউ ইয়র্ক টাইমস, এএফপি।