ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

হাকালুকিতে হাওরে কমছে অতিথি পাখি

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সুদূর সাইবেরিয়া থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে প্রতিবছর যেখানে ৫০-৬০ প্রজাতির অতিথি পাখি আসতো দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে এবার ৩০-৩৫ প্রজাতির পাখি এসেছে। স্থানীয়দের ক্ষোভ, পাখি শিকারীদের বেপরোয়া তৎপরতার কারনে নিধন হচ্ছে অতিথি পাখি। এছাড়াও হাকালুকিতে মাত্রাতিরিক্ত মহিষ চড়ানোর কারনে বিনষ্ট হচ্ছে সোয়াম ফরেষ্ট (জলজ বন)। এতে জীব বৈচিত্র হারাচ্ছে এই হাওর।

এক সময় এই হাওর অতিথি পাখি নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র ছিল কিন্তু সাম্প্রতিক বছর গুলোতে হাওরটি অতিথি পাখির জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। বিষটোপ দিয়ে, বিভিন্ন ফাঁদ তৈরি করে পাখি শিকারের ফলে অতিথি পাখিরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এই অঞ্চল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে পাখির সংখ্যা। আশু পদক্ষেপ না নিলে হুমকিতে পড়বে জীববৈচিত্র।

জানা যায়, ২৩৮টি বিল, ১০টি নদী নিয়ে গঠিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার ৫ টি উপজেলায় অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি। শীতকাল শুরুর সাথে শীতপ্রধান দেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করে ৫০-৬০ প্রজাতির অতিথি পাখি। সুদূর সাইবেরিয়া ও হিমালয়ের পাদদেশ লাদাক থেকে অতিথি পাখি আসে হাকালুকি হাওরে। ঐসব দেশে যখন শীতের তীব্রতা দেখা দেয়, তখন এদেশের আতিথ্য গ্রহণ করতে লাখো অতিথি পাখি ছুটে আসে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। ভিনদেশী বিচিত্র রঙের এসব অতিথি পাখি হাকালুকি হাওরে আসা শত শত পর্যটকদের মধ্যে বিনোদনের অন্যতম খোরাক।

অতিথি পাখিরা হাকালুকি হাওরের চকিয়া, কাংলি, গোবরকুড়ি, গৌড়কুড়ি, জল্লা, হাওরখাল, পিংলা, কালাপানি, মালাম, বাইয়াগজুয়া, নাগুয়ালরীবাই, ফুটবিল ও কৈয়াকোনা বিলে আশ্রয় নেয়।

স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাকালুকিতে অনেক দুষ্প্রাপ্য মাছ ফিরে আসার পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু হাওরে মহিষ চরিয়ে জলজ বন (সোয়াম্প ফরেষ্ট) ধ্বংস এবং বিষটোপ দিয়ে পাখি শিকারের কারনে অতিথি পাখিরা আর আগের মত আসছে না। আগে ৫০-৬০ প্রজাতির পাখি আসলেও এবার বড়জোর ৩০-৩৫ প্রজাতির পাখি এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে হাওর একসময় পাখিশুন্য হয়ে পড়বে। অবিলম্বে হাওরের জলজ বনে মহিষ চরানো বন্ধ করা ও বিষটোপ দিয়ে পাখি শিকার বন্ধ করা না গেলে চরম হুমকিতে পড়বে হাওর জীববৈচিত্র।

গত ৯ ফেব্রুয়ারী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুছ আকন্দ এবং কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সুলতান মাহমুদ বিলুপ্ত প্রায় মাছের প্রাচুর্যতা সমীক্ষা করার জন্য হাকালুকিতে যান। এসময় বিভিন্ন স্থানে এলাপাতাড়ি পানি কিংবা ডাঙ্গায় অসংখ্য মৃত অতিথি দেখতে পান তাঁরা। ধারনা করা হচ্ছে ওগুলো বিষটোপে মারা গেছে।

এবিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সুলতান মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মৃত অতিথি পাখি দেখে আমি সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের আশু পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মত প্রকাশ করি। ইতিমধ্যে বন বিভাগ এবং পরিবেশ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেছেন। প্রয়োজনে যৌথ উদ্যোগে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে। তিনি পাখি শিকার চক্রকে ধরিয়ে দিতে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

হাকালুকিতে হাওরে কমছে অতিথি পাখি

আপডেট টাইম : ০৬:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সুদূর সাইবেরিয়া থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে প্রতিবছর যেখানে ৫০-৬০ প্রজাতির অতিথি পাখি আসতো দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে এবার ৩০-৩৫ প্রজাতির পাখি এসেছে। স্থানীয়দের ক্ষোভ, পাখি শিকারীদের বেপরোয়া তৎপরতার কারনে নিধন হচ্ছে অতিথি পাখি। এছাড়াও হাকালুকিতে মাত্রাতিরিক্ত মহিষ চড়ানোর কারনে বিনষ্ট হচ্ছে সোয়াম ফরেষ্ট (জলজ বন)। এতে জীব বৈচিত্র হারাচ্ছে এই হাওর।

এক সময় এই হাওর অতিথি পাখি নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র ছিল কিন্তু সাম্প্রতিক বছর গুলোতে হাওরটি অতিথি পাখির জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। বিষটোপ দিয়ে, বিভিন্ন ফাঁদ তৈরি করে পাখি শিকারের ফলে অতিথি পাখিরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এই অঞ্চল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে পাখির সংখ্যা। আশু পদক্ষেপ না নিলে হুমকিতে পড়বে জীববৈচিত্র।

জানা যায়, ২৩৮টি বিল, ১০টি নদী নিয়ে গঠিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলার ৫ টি উপজেলায় অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি। শীতকাল শুরুর সাথে শীতপ্রধান দেশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করে ৫০-৬০ প্রজাতির অতিথি পাখি। সুদূর সাইবেরিয়া ও হিমালয়ের পাদদেশ লাদাক থেকে অতিথি পাখি আসে হাকালুকি হাওরে। ঐসব দেশে যখন শীতের তীব্রতা দেখা দেয়, তখন এদেশের আতিথ্য গ্রহণ করতে লাখো অতিথি পাখি ছুটে আসে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। ভিনদেশী বিচিত্র রঙের এসব অতিথি পাখি হাকালুকি হাওরে আসা শত শত পর্যটকদের মধ্যে বিনোদনের অন্যতম খোরাক।

অতিথি পাখিরা হাকালুকি হাওরের চকিয়া, কাংলি, গোবরকুড়ি, গৌড়কুড়ি, জল্লা, হাওরখাল, পিংলা, কালাপানি, মালাম, বাইয়াগজুয়া, নাগুয়ালরীবাই, ফুটবিল ও কৈয়াকোনা বিলে আশ্রয় নেয়।

স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাকালুকিতে অনেক দুষ্প্রাপ্য মাছ ফিরে আসার পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু হাওরে মহিষ চরিয়ে জলজ বন (সোয়াম্প ফরেষ্ট) ধ্বংস এবং বিষটোপ দিয়ে পাখি শিকারের কারনে অতিথি পাখিরা আর আগের মত আসছে না। আগে ৫০-৬০ প্রজাতির পাখি আসলেও এবার বড়জোর ৩০-৩৫ প্রজাতির পাখি এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে হাওর একসময় পাখিশুন্য হয়ে পড়বে। অবিলম্বে হাওরের জলজ বনে মহিষ চরানো বন্ধ করা ও বিষটোপ দিয়ে পাখি শিকার বন্ধ করা না গেলে চরম হুমকিতে পড়বে হাওর জীববৈচিত্র।

গত ৯ ফেব্রুয়ারী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুছ আকন্দ এবং কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সুলতান মাহমুদ বিলুপ্ত প্রায় মাছের প্রাচুর্যতা সমীক্ষা করার জন্য হাকালুকিতে যান। এসময় বিভিন্ন স্থানে এলাপাতাড়ি পানি কিংবা ডাঙ্গায় অসংখ্য মৃত অতিথি দেখতে পান তাঁরা। ধারনা করা হচ্ছে ওগুলো বিষটোপে মারা গেছে।

এবিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সুলতান মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মৃত অতিথি পাখি দেখে আমি সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের আশু পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মত প্রকাশ করি। ইতিমধ্যে বন বিভাগ এবং পরিবেশ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেছেন। প্রয়োজনে যৌথ উদ্যোগে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে। তিনি পাখি শিকার চক্রকে ধরিয়ে দিতে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।