উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিএনপিতে। সাম্প্রতিক দুটি ঘটনা কী ভবিষ্যৎ রাজনীতি কেমন হবে তার বার্তা? এ নিয়ে তুমুল আলোচনা বিএনপির রাজনীতির অন্দর মহলে। নীতিনির্ধারকরা জানার চেষ্টা করছেন, কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজার রায়কে একটি অশনিসংকেত হিসেবেই বিবেচনা করছেন দলটির নেতারা। তাদের ধারণা, এটাই শেষ নয়। আরো রায় আসবে। খবর মানবজমিন’র।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার কার্যক্রমও এগিয়ে চলছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলা নিয়েও দলের ভেতরে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুই ডজনের বেশি মামলা থাকলেও দুটি মামলা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চলতি বছরই এসব মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি দলের ভেতরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের আগাম প্রস্তুতিও ভাবিয়ে তুলেছে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের। বিরোধী নেতাদের মামলা এবং আগাম নির্বাচন প্রস্তুতির মধ্যে যোগসূত্র আবিষ্কারের চেষ্টাও করছেন কেউ কেউ।
মামলা নিয়ে নতুন করে চাপে পড়লেও গত কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্যহীনভাবে বিএনপির রাজনীতি এগিয়ে চলছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। বিপর্যয় কাটাতে সম্প্রতি দলটির নেয়া কোনো পদক্ষেপই সফলতার মুখ দেখেনি। সর্বশেষ কাউন্সিলের পর চার মাস পেরিয়ে গেলেও কমিটির ঘোষণা এখনও মিলছে না। সাধারণত কাউন্সিল হয়ে গেলে পূর্ববর্তী কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। বিএনপির ক্ষেত্রে কী ঘটেছে তা পরিষ্কার নয়। যেমন পরিষ্কার নয়, বিএনপি-জামায়াত সম্পর্কের বিষয়টিও। জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেয়ার জন্য বিএনপির ওপর ঘরে-বাইরে চাপ ক্রমশ বাড়ছে। এখন পর্যন্ত দলটির নীতিনির্ধারকদের এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনই মনে হচ্ছে।
তবে এই মুহূর্তে বিএনপিতে প্রধান আলোচ্য বিষয় নেতাদের মামলা। অর্থপাচার মামলায় হাইকোর্টের রায়ে সাজা পাওয়ায় তারেক রহমানের আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, হাইকোর্টের রায় স্থগিত না হলে তারেক রহমান আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়ার মামলার দিকেও দৃষ্টি রাখছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। জিয়া অরফানেজ এবং চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় দ্রুতই রায় ঘোষণা হতে পারে। দুর্নীতির এসব মামলায় যদি খালেদা জিয়ার সাজা হয় তাহলে তার নির্বাচনে অংশ নেয়াও অনিশ্চিত হয়ে যাবে। তাছাড়া, তিনি যদি কারাগারে থাকেন সে অবস্থায় দল পরিচালনা নিয়েও সংকট তৈরি হবে। ওয়ান ইলেভেনের পর খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হলে বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। এতোদিনেও সে ধকল কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
যদিও সে সময় খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বিশ্বস্ততা ও সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু দলের একতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। এখন বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হচ্ছে, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান রাজনীতির মাঠে না থাকলে বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন কে? এক ধরনের যৌথ নেতৃত্বের ফর্মুলা আগে থেকেই দলের ভেতরে আলোচিত হচ্ছে। তবে গত এক দশকে বিএনপি নেতাদের যে পারফরম্যান্স তাতে দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বিকল্প কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিয়ে আশাবাদী নয়। তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনা নিয়ে কয়েক বছর আগে বিএনপির ভেতরে-বাইরে ব্যাপক আলোচনা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত পরিবার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এখন আর তার রাজনীতিতে আসার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রে জানা গেছে। এখন বরং আলোচনা চলছে, তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে। তবে আপাতত বিএনপি নেতারা চিন্তিত নির্বাচনী রাজনীতিতে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। বিএনপির অনেকেই মনে করেন, দলটির নেতাদের একটি বড় অংশের সাজা হয়ে গেলে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই আরেকটি নির্বাচন হতে পারে। দলের ভেতরে একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্বও দীর্ঘদিন থেকে আলোচনায় রয়েছে। যাতে বলা হয়, জিয়া পরিবারকে বাদ দিয়ে বিএনপির একটি অংশ ওই নির্বাচনে অংশ নিবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে ভাবনা কি জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি এতবড় একটি দল- এখানে নেতৃত্বের সমস্যা হয় না। আগেও এ ধরনের পরিস্থিতি হয়েছে, আমরা বহুবার ফেস করেছি। তিন বার, চার বার ফেস করেছি। বিএনপি ঠিকই গুছিয়ে ফেলে, ঠিকই দল চলে। নির্বাচন হলে জয়যুক্ত হয়।