ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সাতশ বছরেরে ঐতিয্যবাহী ১২টি মসজিদ, দেখার কেউ নেই

ধ্বংস হচ্ছে সাতশ বছরের ১২টি মসজিদ। মসজিদগুলো সরকার নিছে ঠিকই কিন্তু এগুলোর যথাযথ তদারকি হয় না। দিনের পর দিন এসব ইতিহাস হারিয়ে যাচ্ছে।

সবচেয়ে কষ্টের কথা নতুন প্রজন্ম জানার আগেই দেশের এই সম্পদ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সাতশ বছরেরে ঐতিয্যবাহী ১২টি মসজিদ, দেখার কেউ নেই!
এমনই অভিযোগ করলেন এলাকাবাসী।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বারো আউলিয়ার বারোবাজার ঝিনাইদহ শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দক্ষিণে আর যশোর জেলা থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। বারো জন আউলিয়ার নামানুসারে এর নামকরণ হয়েছে বারোবাজার। ঐতিহাসিক এসব মসজিদের কারণে এ এলাকাকে বলা হয় মসজিদের পল্লী।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ১৯৯৩ সালে মাটি খুঁড়তেই প্রায় ৭০০ বছরের প্রাচীন নিদর্শনের সন্ধান মেলে। সন্ধান মেলে বেশকিছু মসজিদ আর মাটিতে চাপা পড়া ইতিহাসের। কিন্তু প্রথমদিকে মসজিদগুলো সংরক্ষণে কাজের গতি থাকলেও এখন তা  একেবারেই নেই। তাই এখানে গড়ে ওঠেনি কোনো পর্যটন কেন্দ্র। এমনকি পড়ে থাকতে থাকতে আবারো সেই ধ্বংসের পথেই এগুচ্ছে


কালের সাক্ষি এই মসজিদগুলো।

এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায় এসব আউলিয়ারা হলেন, এনায়েত খাঁ, আবদাল খাঁ, দৌলত খাঁ, রহমত খাঁ, শমসের খাঁ, মুরাদ খাঁ, হৈবত খাঁ, নিয়ামত খাঁ, সৈয়ধ খাঁ, বেলায়েত খাঁ ও শাহাদত খাঁ। এসব আউলিয়ার নামে শুধু বারোবাজার নয় পার্শ্ববর্তী অনেক গ্রামের নামও রাখা হয়েছে।

এই মসজিদগুলো সঠিক কত আগে নির্মিত তা স্থানীয় কেউই ঠিক মত বলতে পারেন না। মসজিদগুলো একসময় মাটির নিচে ছিল। অর্থাৎ এগুলো ছিল মাটির ঢিবি । এই সমস্ত ঢিবিতে বুনো গাছপালা বাঁশ-ঝাড় ও জঙ্গল ছিল। স্থানীয় লোকজন মাটি কাটার ফলে আস্তে-আস্তে জানাজানি হয় যে এর নিচে ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে।

এরপর প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এর খননকাজ চালিয়ে এবং পুনরায় সংস্কারের মাধ্যমে বর্তমানের এই চেহারায় ফিরিয়ে আনে। এই মসজিদগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। আর তা হচ্ছে প্রতিটি মসজিদের সঙ্গেই আছে একটি করে বড় পুকুর এবং মসজিদ থেকে সিড়ি নেমে পুকুরে গিয়ে মিশেছে। বারোবাজার অঞ্চলে এখনও ৮৪ একর পুকুর ও দিঘি বিদ্যমান রয়েছে।

এরকম ছোট-বড় অর্থাৎ এক গম্বুজ, চার গম্বুজ ও ছয় গম্বুজ বিশিষ্ট মোট ১২টি মসজিদ এখানে রয়েছে। মসজিদগুলোর কোনো ইতিহাস বা খনন কাজের সময় প্রাপ্ত ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণে এখানে কোনো ব্যবস্থা প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর করেনি। শুধু মসজিদগুলোর সামনে একটি ছোট সাইনবোর্ড টানিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে।

এখানে ঘুরতে আসা কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, বারবাজারের ঐতিহ্যবাহী এসব মসজিদ মাটি সরিয়ে আবিষ্কার করা হলেও তার ইতিহাস কিন্তু ‘মাটিচাপাই’ পড়ে থাকছে। ঝিনাইদহবাসী মনে করে বারোবাজারসহ আরো অনেক নির্দেশন রয়েছে যেগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে পর্যটন কেন্দ্র। তাদের প্রত্যাশা যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাববে।

কালীগঞ্জের বদলী হওয়া ইউএনও মানোয়ার হোসেন জানান, ইতোমধ্যে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদগুলোকে সংস্কারের কাজ করেছে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে এই বারোবাজারে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। এটি করা হলে দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে বারোবাজারের নাম।-জাগো নিউজ

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সাতশ বছরেরে ঐতিয্যবাহী ১২টি মসজিদ, দেখার কেউ নেই

আপডেট টাইম : ১২:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ধ্বংস হচ্ছে সাতশ বছরের ১২টি মসজিদ। মসজিদগুলো সরকার নিছে ঠিকই কিন্তু এগুলোর যথাযথ তদারকি হয় না। দিনের পর দিন এসব ইতিহাস হারিয়ে যাচ্ছে।

সবচেয়ে কষ্টের কথা নতুন প্রজন্ম জানার আগেই দেশের এই সম্পদ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সাতশ বছরেরে ঐতিয্যবাহী ১২টি মসজিদ, দেখার কেউ নেই!
এমনই অভিযোগ করলেন এলাকাবাসী।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বারো আউলিয়ার বারোবাজার ঝিনাইদহ শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দক্ষিণে আর যশোর জেলা থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। বারো জন আউলিয়ার নামানুসারে এর নামকরণ হয়েছে বারোবাজার। ঐতিহাসিক এসব মসজিদের কারণে এ এলাকাকে বলা হয় মসজিদের পল্লী।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ১৯৯৩ সালে মাটি খুঁড়তেই প্রায় ৭০০ বছরের প্রাচীন নিদর্শনের সন্ধান মেলে। সন্ধান মেলে বেশকিছু মসজিদ আর মাটিতে চাপা পড়া ইতিহাসের। কিন্তু প্রথমদিকে মসজিদগুলো সংরক্ষণে কাজের গতি থাকলেও এখন তা  একেবারেই নেই। তাই এখানে গড়ে ওঠেনি কোনো পর্যটন কেন্দ্র। এমনকি পড়ে থাকতে থাকতে আবারো সেই ধ্বংসের পথেই এগুচ্ছে


কালের সাক্ষি এই মসজিদগুলো।

এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায় এসব আউলিয়ারা হলেন, এনায়েত খাঁ, আবদাল খাঁ, দৌলত খাঁ, রহমত খাঁ, শমসের খাঁ, মুরাদ খাঁ, হৈবত খাঁ, নিয়ামত খাঁ, সৈয়ধ খাঁ, বেলায়েত খাঁ ও শাহাদত খাঁ। এসব আউলিয়ার নামে শুধু বারোবাজার নয় পার্শ্ববর্তী অনেক গ্রামের নামও রাখা হয়েছে।

এই মসজিদগুলো সঠিক কত আগে নির্মিত তা স্থানীয় কেউই ঠিক মত বলতে পারেন না। মসজিদগুলো একসময় মাটির নিচে ছিল। অর্থাৎ এগুলো ছিল মাটির ঢিবি । এই সমস্ত ঢিবিতে বুনো গাছপালা বাঁশ-ঝাড় ও জঙ্গল ছিল। স্থানীয় লোকজন মাটি কাটার ফলে আস্তে-আস্তে জানাজানি হয় যে এর নিচে ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে।

এরপর প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এর খননকাজ চালিয়ে এবং পুনরায় সংস্কারের মাধ্যমে বর্তমানের এই চেহারায় ফিরিয়ে আনে। এই মসজিদগুলোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। আর তা হচ্ছে প্রতিটি মসজিদের সঙ্গেই আছে একটি করে বড় পুকুর এবং মসজিদ থেকে সিড়ি নেমে পুকুরে গিয়ে মিশেছে। বারোবাজার অঞ্চলে এখনও ৮৪ একর পুকুর ও দিঘি বিদ্যমান রয়েছে।

এরকম ছোট-বড় অর্থাৎ এক গম্বুজ, চার গম্বুজ ও ছয় গম্বুজ বিশিষ্ট মোট ১২টি মসজিদ এখানে রয়েছে। মসজিদগুলোর কোনো ইতিহাস বা খনন কাজের সময় প্রাপ্ত ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণে এখানে কোনো ব্যবস্থা প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর করেনি। শুধু মসজিদগুলোর সামনে একটি ছোট সাইনবোর্ড টানিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে।

এখানে ঘুরতে আসা কয়েকজন দর্শনার্থী জানান, বারবাজারের ঐতিহ্যবাহী এসব মসজিদ মাটি সরিয়ে আবিষ্কার করা হলেও তার ইতিহাস কিন্তু ‘মাটিচাপাই’ পড়ে থাকছে। ঝিনাইদহবাসী মনে করে বারোবাজারসহ আরো অনেক নির্দেশন রয়েছে যেগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে পর্যটন কেন্দ্র। তাদের প্রত্যাশা যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাববে।

কালীগঞ্জের বদলী হওয়া ইউএনও মানোয়ার হোসেন জানান, ইতোমধ্যে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদগুলোকে সংস্কারের কাজ করেছে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে এই বারোবাজারে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। এটি করা হলে দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে বারোবাজারের নাম।-জাগো নিউজ