ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সখীপুরে পেঁপে চাষে বাদলের সাফল্য

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার প্রতিমা বংকী পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের শামছুল হকের ছেলে এক সফল পেঁপে ও লেবু চাষি আশিক ইকবাল বাদল (৩৫)। সে উপজেলার কালিদাশের খামার চালায় লেবু ও পেঁপে চাষ করে খুব অল্প সময়ে অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হয়ে এলাকার মানুষের অনুকরণীয় লেবু ও পেঁপে চাষীতে পরিণত হয়েছেন। লাল মাটির পাহাড়ি এলাকায় তিনি লেবু চাষ করে কৃষিজীবন শুরু করলেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন পেঁপে চাষ করে।

জানা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক অকৃতকার্য হয়ে জীবন বিভিন্ন পরাজয়ের গ্লানি পহাতে হয় আশিক বাদলকে। লজ্জা, গ্লানি ও পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য র্দীঘ দিন প্রবাসী জীবন কাটান। ইচ্ছে জাগে দেশেই কিছু করে খাবেন কিন্তুু কি করবেন এ প্রশ্নে সম্মুখে হন বারবার। পরিশেষে স্থানীয় সফল কৃষক মোসলেম উদ্দিনের সহযোগিতায় লেবু বাগান করেন। নিজ এলাকায় করটিয়ার কালাম তালুকদারের ৪ একর জমি লিজ নেন প্রতি একর বছরে ২৫ হাজার টাকা করে।

প্রথম বছরে তেমন কোন লাভবান না হলেও পরের বছর খরচ বাদে ২ লক্ষ টাকা লাভ হয়। এ লাভের টাকা দিয়ে একই মালিকের আরো ৫ একর জমি লিজ নিয়ে পেঁপে চাষ শুরু করেন। ২০১৬ সালে পরিক্ষা মূলক ১৫০০ পেঁপে চাষ করেন। ফলন ভাল হয় এরপর এ বছর ফেব্রুয়ারিতে ৫ একর জমিতে ৫ হাজার শাহী জাতের পেঁপে চারা লাগিয়েছেন। এ বছর পেঁপে ফলন ধরা হয়েছে ৫০ টন যা বাজার মূল্য প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা। স্থানীয় কৃষকদের কাছে আশিক ইকবাল বাদল এখন রোল মডেল। পেঁপে চাষ করে অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ায় অন্যান্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন সবজি জাতীয় এ ফলকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করতে।

কৃষক আশিক বাদল বলেন, জমি লিজ নিয়ে ৫ একর জমিতে পেঁপে ও ৪ একর জমিতে লেবু চাষ করেছি। জমি লিজ, চারা, সার, কীটনাশক, শ্রমিক সহ নানা খরচ বাবদ এপর্যন্ত আমার ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে আবহাওয়া ভাল থাকলে এ মাসেই ৫০ টন পেঁপে বিক্রি করবো যা বাজারে মূল্য প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা। অতি অল্প সময়ের মধ্যে শাহী জাতের পেঁপে ফলন ভাল হয়। খেতে মিষ্টি হওয়ায় বাজারে কাঁচা পেঁপের চেয়ে পাকা পেঁপের কদর বেশি।

বাগান থেকে পেঁপে উৎতোলন শুরু করেছি। আশা করছি ১০ লক্ষ টাকা লাভ হবে। আশা সরুপ ফলন হওয়ায় এ বছর আরো ১০ একর জমিতে পেঁপে চাষ করবো। আমার এলাকার অনেকেই এখন পেঁপে চাষে আগ্রহী। তাছাড়া পেঁপে চাষে তেমন কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। পেঁপে চাষে অর্থনৈতিকভাবে সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের অনেক বেকারের কর্মসংস্থান করা সম্ভব।

খামারচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফ সিদ্দিকী বলেন, এতো অল্প সময়ে পেঁপে এতো ভাল ফলন হয় জানা ছিলোনা। আশিক ইকবাল বাদলকে দেখে এলাকায় আরো বেকার যুবকদের পেঁপে চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

সখীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ভূইয়া ফাইজুল ইসলাম বলেন, এ জাতীয় ফলের কদর রয়েছে দেশজুড়ে। পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ এ ফলের চাহিদাও ব্যাপক। পেঁপে চাষে একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা মেটায় অন্যদিকে অর্থনৈতিক ভাবেও সাবলম্বী হওয়া যায়। ৬ মাসের মধ্যে এজাতের পেঁপে বাজার জাত করা যায়। একটি গাছে চার থেকে পাঁচ মণ পেঁপে আসে। তাই পেঁপে বাগান করে খুব অল্প সময়েই লাভবান হওয়া যায়। বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি ও পরামর্শ দিয়ে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করছি। এতে কৃষক লাভবান হচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে পেঁপে চাষের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ফলে কৃষকদের আগ্রহ আরোও বাড়ছে, আগামীতে পেঁপে চাষ আরোও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

সখীপুরে পেঁপে চাষে বাদলের সাফল্য

আপডেট টাইম : ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার প্রতিমা বংকী পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের শামছুল হকের ছেলে এক সফল পেঁপে ও লেবু চাষি আশিক ইকবাল বাদল (৩৫)। সে উপজেলার কালিদাশের খামার চালায় লেবু ও পেঁপে চাষ করে খুব অল্প সময়ে অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হয়ে এলাকার মানুষের অনুকরণীয় লেবু ও পেঁপে চাষীতে পরিণত হয়েছেন। লাল মাটির পাহাড়ি এলাকায় তিনি লেবু চাষ করে কৃষিজীবন শুরু করলেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেন পেঁপে চাষ করে।

জানা যায়, উচ্চ মাধ্যমিক অকৃতকার্য হয়ে জীবন বিভিন্ন পরাজয়ের গ্লানি পহাতে হয় আশিক বাদলকে। লজ্জা, গ্লানি ও পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য র্দীঘ দিন প্রবাসী জীবন কাটান। ইচ্ছে জাগে দেশেই কিছু করে খাবেন কিন্তুু কি করবেন এ প্রশ্নে সম্মুখে হন বারবার। পরিশেষে স্থানীয় সফল কৃষক মোসলেম উদ্দিনের সহযোগিতায় লেবু বাগান করেন। নিজ এলাকায় করটিয়ার কালাম তালুকদারের ৪ একর জমি লিজ নেন প্রতি একর বছরে ২৫ হাজার টাকা করে।

প্রথম বছরে তেমন কোন লাভবান না হলেও পরের বছর খরচ বাদে ২ লক্ষ টাকা লাভ হয়। এ লাভের টাকা দিয়ে একই মালিকের আরো ৫ একর জমি লিজ নিয়ে পেঁপে চাষ শুরু করেন। ২০১৬ সালে পরিক্ষা মূলক ১৫০০ পেঁপে চাষ করেন। ফলন ভাল হয় এরপর এ বছর ফেব্রুয়ারিতে ৫ একর জমিতে ৫ হাজার শাহী জাতের পেঁপে চারা লাগিয়েছেন। এ বছর পেঁপে ফলন ধরা হয়েছে ৫০ টন যা বাজার মূল্য প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা। স্থানীয় কৃষকদের কাছে আশিক ইকবাল বাদল এখন রোল মডেল। পেঁপে চাষ করে অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ায় অন্যান্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন সবজি জাতীয় এ ফলকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করতে।

কৃষক আশিক বাদল বলেন, জমি লিজ নিয়ে ৫ একর জমিতে পেঁপে ও ৪ একর জমিতে লেবু চাষ করেছি। জমি লিজ, চারা, সার, কীটনাশক, শ্রমিক সহ নানা খরচ বাবদ এপর্যন্ত আমার ১০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে আবহাওয়া ভাল থাকলে এ মাসেই ৫০ টন পেঁপে বিক্রি করবো যা বাজারে মূল্য প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা। অতি অল্প সময়ের মধ্যে শাহী জাতের পেঁপে ফলন ভাল হয়। খেতে মিষ্টি হওয়ায় বাজারে কাঁচা পেঁপের চেয়ে পাকা পেঁপের কদর বেশি।

বাগান থেকে পেঁপে উৎতোলন শুরু করেছি। আশা করছি ১০ লক্ষ টাকা লাভ হবে। আশা সরুপ ফলন হওয়ায় এ বছর আরো ১০ একর জমিতে পেঁপে চাষ করবো। আমার এলাকার অনেকেই এখন পেঁপে চাষে আগ্রহী। তাছাড়া পেঁপে চাষে তেমন কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। পেঁপে চাষে অর্থনৈতিকভাবে সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের অনেক বেকারের কর্মসংস্থান করা সম্ভব।

খামারচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফ সিদ্দিকী বলেন, এতো অল্প সময়ে পেঁপে এতো ভাল ফলন হয় জানা ছিলোনা। আশিক ইকবাল বাদলকে দেখে এলাকায় আরো বেকার যুবকদের পেঁপে চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

সখীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ভূইয়া ফাইজুল ইসলাম বলেন, এ জাতীয় ফলের কদর রয়েছে দেশজুড়ে। পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ এ ফলের চাহিদাও ব্যাপক। পেঁপে চাষে একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা মেটায় অন্যদিকে অর্থনৈতিক ভাবেও সাবলম্বী হওয়া যায়। ৬ মাসের মধ্যে এজাতের পেঁপে বাজার জাত করা যায়। একটি গাছে চার থেকে পাঁচ মণ পেঁপে আসে। তাই পেঁপে বাগান করে খুব অল্প সময়েই লাভবান হওয়া যায়। বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি ও পরামর্শ দিয়ে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করছি। এতে কৃষক লাভবান হচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে পেঁপে চাষের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ফলে কৃষকদের আগ্রহ আরোও বাড়ছে, আগামীতে পেঁপে চাষ আরোও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।