বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ কিশোরগঞ্জ উপজেলায় সরকারিভাবে বিতরণকৃত দরিদ্রদের সোলার প্যানেল দরিদ্রদের বদলে আলোকিত করেছে বিত্তশালীদের ঘর। পেয়েছেন একই পরিবারের দুই থেকে তিনজন। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দলীয় নেতাকর্মী এবং নিজেদের আশীর্বাদপুষ্ট লোকেদের মধ্যে এসব সোলার প্যানেল বিতরণ করে লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যার কারণে সরকারের মহতি উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে। ফলে আলোহীন অবস্থায় আছে উপজেলার হাজার হাজার অসহায় দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবার।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে ও সরজমিন গিয়ে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ এবং গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচির আওতায় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১৫১৪টি সোলার প্যানেল বিতরণ করা হয়।
এর মধ্যে নীলফামারী-৪ আসনের সংসদ সদস্য শওকত চৌধুরীর নামে ৭৮৮টি। মহিলা আসন ৩৪৬ সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য মেরিনা রহমানের নামে ১১৯টি ও মহিলা আসন ৩০৩ অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার নামে ১৩৯টি, ইউপি চেয়ারম্যান ও বিভাগীয় কমিশনারের নামে ৬৬৮টি। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এই সোলার প্যানেলগুলো বিদ্যুৎহীন ও হতদরিদ্র পরিবারগুলো পাওয়ার কথা। কিন্তু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোফাখখারুল ইসলাম ও এমপির প্রতিনিধিগণ অবস্থাসম্পন্ন ও বিত্তশালীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব সোলার প্যানেল বিতরণ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। যাদের ঘরে এসব সোলার প্যানেল বিতরণ করা হয়েছে তাদের ঘরে পূর্ব থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে।
কিশোরগঞ্জ শিশু নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভকেশনাল শাখার গণিত বিষয়ের শিক্ষক ও রংপুরের মিঠাপুকুর থানার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে সাইদুল ইসলাম তার পাকা বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকা সত্ত্বেও একটি ১০০ ওয়াটের সোলার প্যানেল স্থাপন করেছেন। আপনার বাড়ি রংপুরের মিটাপুকুরে হওয়া সত্বেও দরিদ্রদের সোলার আপনি কিভাবে পেলেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমার এক পরিচিত ব্যাক্তির মাধ্যমে এমপির প্রতিনিধি রেজাউল হক ফিলিপকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা দিয়ে আমি সোলার প্যানেলটি পেয়েছি। আমি কেন যারা টাকা দিয়েছে তারাইতো সোলার পেয়েছে।
মাগুড়া ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত তোফায়েল উদ্দিনের ছেলে রফিকুল ইসলাম পাকা বাড়ির মালিক ও বিত্তশালী ব্যক্তি তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও একশো ওয়াটের সোলার প্যানেল লাগানো হয়েছে। এসময় রফিকুল ইসলাম জানান, ৩৪৬ আসনের মহিলা সংসদ সদস্য মেরিনা রহমানের আস্থাভাজন এক ব্যক্তির মাধ্যমে আমি সোলারটি লাগিয়েছি। কত টাকা দিয়ে সোলারটি লাগিয়ে নিয়েছেন বললে তিনি এদিক সেদিক তাকিয়ে বলেন খরচ বাবদ কিছু দিয়েছি।
তালিকা অনুযায়ী গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বদরুল আলমের ছেলে বকুল হোসেনের নামে ও আবু তালেবের ছেলে রহমত আলির নামে দুটি ১০০ ওয়াটের সোলার প্যানেল বরাদ্দ থাকলেও ওই ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় তারা দুজনেই ওই গ্রামের বাসিন্দা নয়। খোঁজ নিয়ে দেখা যায় তারা গনেশের বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। বকুল হোসেন ও রহমত আলী অন্যের নাম দিয়ে তাদের দোকানে সোলার প্যানেল স্থাপন করেছেন। কত টাকা দিয়ে সোলার প্যানেল স্থাপন করেছেন প্রশ্ন করলে বকুল ও রহমত সাংবাদিকদের কোন কথা না বলে কেটে পড়েন। এছাড়াও ১০০ ওয়াটের সোলার প্যানেল পেয়েছেন গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের জাহিদুল ইসলাম, গোলজার রহমান ,জিল্লুর রহমান, সালমান মিয়া, মোতাহারা, জাহিদুল, মাগ্রড়া ইউনিয়নের চন্দন কুমার, শফিকুল ইসলাম, দিনেশ চন্দ্র সরকারসহ শত শত বিত্তশালী ব্যাক্তি।
এ ব্যাপারে এমপি প্রতিনিধি রেজাউল হক ফিলিপের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি কারো কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা গ্রহন করিনি। তবে শুনেছি সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্যা মেরিনা রহমানের লোকজন টাকা নিয়ে বিত্তশালীদের মাঝে সোলার প্যানেল দিয়েছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোফাখারুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এমপির প্রতিনিধিরা যাদের নামের তালিকা দিয়েছে তারাই সোলার প্যানেল পেয়েছে। ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার করে টাকা নেওয়ার বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেন টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমি কিছু জানিনা।