ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ নতুন আরেকটি পাখির

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ২০১৭ সালের ৫ মে ভোর সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেই বুঝতে পারি আজ আরও অন্ধকার থাকবে! মেঘের মতো মনের ভেতরও খারাপ লাগছে; যা হয় হবে ভেবে বাইকে স্টার্ট দেই। রাজশাহী শহর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে পৌঁছাতেই মনে হয় আলো একটু বেড়েছে। আলোর সঙ্গে আশাও বাড়তে থাকে। চারপাশে উল্লেখযোগ্য কোনো পাখির দেখা নেই।

মাঝে মাঝে শা-বুলবুলির ডাকে চোখ চলে যাচ্ছে, আবার দেখি হাওয়া! দুই তিনটা তিত ব্যস্ত হয়ে বড় একটা কড়ই গাছের বাকলের ফাঁকে ফাঁকে পোকা খুঁজে খাচ্ছে। খুড়–লে পেঁচার পরিবার জ্ঞানীর মতো ভাব নিয়ে আমার কাজকর্ম দেখছে।

মাঝে মধ্যে ডাকাডাকি করে ছানাপোনাদের সতর্ক করে দিচ্ছে। একটা কোকিলের বাচ্চা এ ডাল থেকে ও ডালে ইতস্তত ওড়াউড়ি করছে-বোঝাই যাচ্ছে ছানাটি এখনও ওড়াতে অনভিজ্ঞ। কেবলই ওড়া শিখছে।

আশপাশ থেকে ভেসে আসছে কালাপাখ কাবাসির ডাক। মেঘলা আকাশ আরও কালো হয়ে ওঠে। পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বড় কড়ই গাছটায় একটি বাতাবি কাঠকুড়ালি এসে বসে। পাখিটা বসতেই আরেকটি পাখি উড়ে যায়।

উড়ে যাওয়া পাখিটাকে অনুসরণ করতে করতে হঠাৎ সবুজ পাতার আড়ালে ওর দেখা পাই। গায়ের রং এমনই, গাছের ডালে থাকলে গাছের সঙ্গে মিশে যায়-চোখেই পড়ে না। খুবই ছোট একটি পাখি। ঠোঁট দিয়ে দ্রুত গাছের পোকা ঠোকরাচ্ছে। এ ডাল থেকে ও ডালে ছুটছে। চোখের পলক ফেললেই পরে খুঁজে পাওয়া ভীষণ কষ্টের। এমন কোনো পাখি আগে আমার চোখে পড়েনি।

বুঝতে পারছি পাখিটা কোনো সাধারণ পাখি নয়। ক্যামেরায় বেশকিছু ছবি নিলাম। এরই মধ্যে দিনের আলো আবার কমতে শুরু করেছে। সকাল ৯টার সময় মনে হচ্ছে সন্ধ্যা নামছে। নিতান্তই বাধ্য হয়ে ক্যামেরা-লেন্স গুটিয়ে বাড়ির পথ ধরি।

দুপুরের খাওয়া শেষে অচেনা পাখিটার একটা ছবি ফেসবুকের Birds Bangladesh এবং অংশ Id’s of Indian Birds গ্রুপে পোস্ট করি। বেশ ক’জন পাখি বিশেষজ্ঞ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, এটি ব্রাউন কেপ্ড পিগমি উডপেকার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মনটা চঞ্চল হয়ে ওঠে। তাই যদি হয়, তবে পাখিটি হবে বাংলাদেশের জন্য নতুন শনাক্তকৃত পাখি!

পাখিটিকে শ্রীলংকা, নেপাল ও ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে দেখা যায়। তবে বাংলাদেশে এর আগে কেউ কখনও দেখেনি। মন বেশ শিহরিত হল এই ভেবে, আমার দেখায় বাংলাদেশ নতুন আরেকটি পাখির খোঁজ পেল! যারা বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করেন বা এসব ব্যাপারে আগ্রহ আছে, তারা সবাই জানেন, একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে নতুন একটি পাখি খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার! আর সেটিই করেছি আমি।

একটু পরেই বাংলাদেশের পাখিবিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম মনিরুল খান এবং সায়েম চৌধুরী নিশ্চিত করলেন, এটিই সেই বিরল পাখি! ইনাম আল হক নিশ্চিত করেন, বাংলাদেশে এ পাখিটি কখনও কেউ দেখেনি বলে এর বাংলা কোনো নাম নেই।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব এ পাখির বাংলা নাম প্রস্তাব করেছে-‘খয়রা টুপি বাটকুড়ালি’। এর মাথার ওপরে এবং চোখের পেছনে খয়েরি রং রয়েছে। পাখিটির দৈর্ঘ্য ১৪ সেন্টিমিটার।

পাখি ও প্রকৃতির প্রতি টান আমার ছোটবেলা থেকেই। খুব মনে আছে, ছোটবেলায় আব্বা ছয়টি মুনিয়া পাখিসহ একটি খাঁচা কিনে এনেছিলেন। সরকারি স্কুল শিক্ষক আব্বা-আম্মা দুজনেই পেশাগত চাপের মধ্যেও পরম যত্নে পাখিগুলো পুষতেন।

একসময় সেগুলোর অনেক ছানাপোনাও হয়েছিল। কিন্তু মনে নেই ঠিক কী কারণে একদিন পাখিগুলোকে ছেড়ে দিয়েছিলেন আব্বা। আশ্চর্য হল, ছাড়া পাওয়ার পরেও পাখিগুলো চলে যায়নি। আমাদের গ্রামের বাড়ির বিশাল উঠোনে কাপড় শুকানোর তারে কিংবা লিচুগাছে বসে থাকত। তখন থেকেই পাখির প্রতি আমার অন্যরকম একটা টান অনুভব করি।

ছোটবেলায় মানুষকে ফাঁদ পেতে ধানি জমি থেকে ডাহুক বা কোড়া ধরতে দেখেছি। সুযোগ পেলেই শিকারিদের চোখের আড়ালে সঙ্গীদের নিয়ে আমি ফাঁদ ভেঙে দিয়েছি, ফাঁদ দিয়ে ধরা পাখিগুলো ছেড়ে দিয়েছি। এখনও মনে আছে, একবার এক শিকারিকে তাড়া করে গ্রাম ছাড়া করেছিলাম। ভয়ে সে আর কোনো দিন এ মুখো হয়নি।

কিশোর বয়স থেকেই দেখে আসছি পাখি শিকারিরা শীতকালে রাজশাহীর পদ্মার চর থেকে অসংখ্য পাখি ধরে কখনও গোপনে, কখনও প্রকাশ্যেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে। একশ্রেণীর মানুষ পাখিগুলো কিনে খায়।

আবার কেউ কেউ দলবেঁধে নদীতে গিয়ে বন্দুক দিয়ে পাখি শিকার করে আনে। এ বন্দুকওয়ালারা সাধারণত সমাজের প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন বা অন্য কেউ এদের কিছু বলার সাহস পায় না। আমি গাঁয়ের আর দশজন সাধারণ মানুষের মতোই। পাখি শিকারের উৎসব বন্ধ করার ইচ্ছে থাকলেও শক্তি নেই। কিন্তু মাথার ভেতর ঘুরপাক খায় কীভাবে পাখি শিকার বন্ধ করা যায়। বুদ্ধি খুঁজে পাই।

পাখি শিকারিদের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিলে তারা হেয়প্রতিপন্ন হবে; লজ্জা পাবে। সেই থেকে ক্যামেরা আর লেন্স নিয়ে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর পদ্মার চরে কখনও একা কখনও অনিক মাঝিকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে ছবি তুলেছি। শুরুটা ছিল ২০১২। তখন অনেকেই আমাকে পাগল মনে করত, টিটকারি-বিদ্রুপ করত।

কোনোকিছু গায়ে না মেখে আমি ছবি তুলে ফেসবুকসহ ইন্টারনেটে পোস্ট দিতে থাকি। এখন ক্যামেরাসহ আমাকে কেউ দেখলে পাখি শিকার ফেলে পালিয়ে যায়। পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে এটি এক ধরনের যুদ্ধ।

আর এ যুদ্ধে ক্যামেরাই আমার অস্ত্র। আমার দেখাদেখি রাজশাহীসহ দেশের পাখিপ্রেমীরা পদ্মার চরে ছবি তুলতে আসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে ফটোগ্রাফারের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ফলে পাখি শিকারিরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে।

বর্তমানে কমে এসেছে রাজশাহীতে পাখি শিকারির সংখ্যা। পাশাপাশি শীতকালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নামকরা ফটোগ্রাফাররা নিয়মিত রাজশাহীতে আসার কারণে পরিসরে ছোট হলেও ‘বার্ডিং ট্যুরিজম’ বিকশিত হচ্ছে।

পাখি আছে বলেই পৃথিবীটা আজও এত সুন্দর। এ কারণেই পাখিকে বলা হয় প্রকৃতির অলঙ্ককার। কোনো প্রতিদানের জন্য পাখি ভালোবাসিনি। বিশ্বাস করি, একটি পাখির জীবনরক্ষার চেয়ে বড় পুরস্কার আর কিছুই হতে পারে না।

পাখিসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সবাই উদ্যোগী হোক, সচেতনতা বৃদ্ধি পাক তৃণমূল পর্যায়ে। তবেই রক্ষা পাবে পাখি, সংরক্ষিত হবে জীববৈচিত্র্য।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

বাংলাদেশ নতুন আরেকটি পাখির

আপডেট টাইম : ১১:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ নভেম্বর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ ২০১৭ সালের ৫ মে ভোর সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠেই বুঝতে পারি আজ আরও অন্ধকার থাকবে! মেঘের মতো মনের ভেতরও খারাপ লাগছে; যা হয় হবে ভেবে বাইকে স্টার্ট দেই। রাজশাহী শহর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে পৌঁছাতেই মনে হয় আলো একটু বেড়েছে। আলোর সঙ্গে আশাও বাড়তে থাকে। চারপাশে উল্লেখযোগ্য কোনো পাখির দেখা নেই।

মাঝে মাঝে শা-বুলবুলির ডাকে চোখ চলে যাচ্ছে, আবার দেখি হাওয়া! দুই তিনটা তিত ব্যস্ত হয়ে বড় একটা কড়ই গাছের বাকলের ফাঁকে ফাঁকে পোকা খুঁজে খাচ্ছে। খুড়–লে পেঁচার পরিবার জ্ঞানীর মতো ভাব নিয়ে আমার কাজকর্ম দেখছে।

মাঝে মধ্যে ডাকাডাকি করে ছানাপোনাদের সতর্ক করে দিচ্ছে। একটা কোকিলের বাচ্চা এ ডাল থেকে ও ডালে ইতস্তত ওড়াউড়ি করছে-বোঝাই যাচ্ছে ছানাটি এখনও ওড়াতে অনভিজ্ঞ। কেবলই ওড়া শিখছে।

আশপাশ থেকে ভেসে আসছে কালাপাখ কাবাসির ডাক। মেঘলা আকাশ আরও কালো হয়ে ওঠে। পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বড় কড়ই গাছটায় একটি বাতাবি কাঠকুড়ালি এসে বসে। পাখিটা বসতেই আরেকটি পাখি উড়ে যায়।

উড়ে যাওয়া পাখিটাকে অনুসরণ করতে করতে হঠাৎ সবুজ পাতার আড়ালে ওর দেখা পাই। গায়ের রং এমনই, গাছের ডালে থাকলে গাছের সঙ্গে মিশে যায়-চোখেই পড়ে না। খুবই ছোট একটি পাখি। ঠোঁট দিয়ে দ্রুত গাছের পোকা ঠোকরাচ্ছে। এ ডাল থেকে ও ডালে ছুটছে। চোখের পলক ফেললেই পরে খুঁজে পাওয়া ভীষণ কষ্টের। এমন কোনো পাখি আগে আমার চোখে পড়েনি।

বুঝতে পারছি পাখিটা কোনো সাধারণ পাখি নয়। ক্যামেরায় বেশকিছু ছবি নিলাম। এরই মধ্যে দিনের আলো আবার কমতে শুরু করেছে। সকাল ৯টার সময় মনে হচ্ছে সন্ধ্যা নামছে। নিতান্তই বাধ্য হয়ে ক্যামেরা-লেন্স গুটিয়ে বাড়ির পথ ধরি।

দুপুরের খাওয়া শেষে অচেনা পাখিটার একটা ছবি ফেসবুকের Birds Bangladesh এবং অংশ Id’s of Indian Birds গ্রুপে পোস্ট করি। বেশ ক’জন পাখি বিশেষজ্ঞ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, এটি ব্রাউন কেপ্ড পিগমি উডপেকার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মনটা চঞ্চল হয়ে ওঠে। তাই যদি হয়, তবে পাখিটি হবে বাংলাদেশের জন্য নতুন শনাক্তকৃত পাখি!

পাখিটিকে শ্রীলংকা, নেপাল ও ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে দেখা যায়। তবে বাংলাদেশে এর আগে কেউ কখনও দেখেনি। মন বেশ শিহরিত হল এই ভেবে, আমার দেখায় বাংলাদেশ নতুন আরেকটি পাখির খোঁজ পেল! যারা বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করেন বা এসব ব্যাপারে আগ্রহ আছে, তারা সবাই জানেন, একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে নতুন একটি পাখি খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার! আর সেটিই করেছি আমি।

একটু পরেই বাংলাদেশের পাখিবিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম মনিরুল খান এবং সায়েম চৌধুরী নিশ্চিত করলেন, এটিই সেই বিরল পাখি! ইনাম আল হক নিশ্চিত করেন, বাংলাদেশে এ পাখিটি কখনও কেউ দেখেনি বলে এর বাংলা কোনো নাম নেই।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব এ পাখির বাংলা নাম প্রস্তাব করেছে-‘খয়রা টুপি বাটকুড়ালি’। এর মাথার ওপরে এবং চোখের পেছনে খয়েরি রং রয়েছে। পাখিটির দৈর্ঘ্য ১৪ সেন্টিমিটার।

পাখি ও প্রকৃতির প্রতি টান আমার ছোটবেলা থেকেই। খুব মনে আছে, ছোটবেলায় আব্বা ছয়টি মুনিয়া পাখিসহ একটি খাঁচা কিনে এনেছিলেন। সরকারি স্কুল শিক্ষক আব্বা-আম্মা দুজনেই পেশাগত চাপের মধ্যেও পরম যত্নে পাখিগুলো পুষতেন।

একসময় সেগুলোর অনেক ছানাপোনাও হয়েছিল। কিন্তু মনে নেই ঠিক কী কারণে একদিন পাখিগুলোকে ছেড়ে দিয়েছিলেন আব্বা। আশ্চর্য হল, ছাড়া পাওয়ার পরেও পাখিগুলো চলে যায়নি। আমাদের গ্রামের বাড়ির বিশাল উঠোনে কাপড় শুকানোর তারে কিংবা লিচুগাছে বসে থাকত। তখন থেকেই পাখির প্রতি আমার অন্যরকম একটা টান অনুভব করি।

ছোটবেলায় মানুষকে ফাঁদ পেতে ধানি জমি থেকে ডাহুক বা কোড়া ধরতে দেখেছি। সুযোগ পেলেই শিকারিদের চোখের আড়ালে সঙ্গীদের নিয়ে আমি ফাঁদ ভেঙে দিয়েছি, ফাঁদ দিয়ে ধরা পাখিগুলো ছেড়ে দিয়েছি। এখনও মনে আছে, একবার এক শিকারিকে তাড়া করে গ্রাম ছাড়া করেছিলাম। ভয়ে সে আর কোনো দিন এ মুখো হয়নি।

কিশোর বয়স থেকেই দেখে আসছি পাখি শিকারিরা শীতকালে রাজশাহীর পদ্মার চর থেকে অসংখ্য পাখি ধরে কখনও গোপনে, কখনও প্রকাশ্যেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে। একশ্রেণীর মানুষ পাখিগুলো কিনে খায়।

আবার কেউ কেউ দলবেঁধে নদীতে গিয়ে বন্দুক দিয়ে পাখি শিকার করে আনে। এ বন্দুকওয়ালারা সাধারণত সমাজের প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন বা অন্য কেউ এদের কিছু বলার সাহস পায় না। আমি গাঁয়ের আর দশজন সাধারণ মানুষের মতোই। পাখি শিকারের উৎসব বন্ধ করার ইচ্ছে থাকলেও শক্তি নেই। কিন্তু মাথার ভেতর ঘুরপাক খায় কীভাবে পাখি শিকার বন্ধ করা যায়। বুদ্ধি খুঁজে পাই।

পাখি শিকারিদের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিলে তারা হেয়প্রতিপন্ন হবে; লজ্জা পাবে। সেই থেকে ক্যামেরা আর লেন্স নিয়ে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর পদ্মার চরে কখনও একা কখনও অনিক মাঝিকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে ছবি তুলেছি। শুরুটা ছিল ২০১২। তখন অনেকেই আমাকে পাগল মনে করত, টিটকারি-বিদ্রুপ করত।

কোনোকিছু গায়ে না মেখে আমি ছবি তুলে ফেসবুকসহ ইন্টারনেটে পোস্ট দিতে থাকি। এখন ক্যামেরাসহ আমাকে কেউ দেখলে পাখি শিকার ফেলে পালিয়ে যায়। পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে এটি এক ধরনের যুদ্ধ।

আর এ যুদ্ধে ক্যামেরাই আমার অস্ত্র। আমার দেখাদেখি রাজশাহীসহ দেশের পাখিপ্রেমীরা পদ্মার চরে ছবি তুলতে আসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে ফটোগ্রাফারের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ফলে পাখি শিকারিরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে।

বর্তমানে কমে এসেছে রাজশাহীতে পাখি শিকারির সংখ্যা। পাশাপাশি শীতকালে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নামকরা ফটোগ্রাফাররা নিয়মিত রাজশাহীতে আসার কারণে পরিসরে ছোট হলেও ‘বার্ডিং ট্যুরিজম’ বিকশিত হচ্ছে।

পাখি আছে বলেই পৃথিবীটা আজও এত সুন্দর। এ কারণেই পাখিকে বলা হয় প্রকৃতির অলঙ্ককার। কোনো প্রতিদানের জন্য পাখি ভালোবাসিনি। বিশ্বাস করি, একটি পাখির জীবনরক্ষার চেয়ে বড় পুরস্কার আর কিছুই হতে পারে না।

পাখিসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সবাই উদ্যোগী হোক, সচেতনতা বৃদ্ধি পাক তৃণমূল পর্যায়ে। তবেই রক্ষা পাবে পাখি, সংরক্ষিত হবে জীববৈচিত্র্য।