ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পদ্মা নদীর চরে দেখা মিলেছে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির চামচঠুঁটি পাখি

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজশাহীর পদ্মা নদীর চরে দেখা মিলেছে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির চামচঠুঁটি পাখি। গত মৌসুমেও পদ্মার চরে একদিনের জন্য এ পাখির একটি ঝাঁক দেখা গিয়েছিল। পরে আর দেখা মেলেনি। এক বছর পর আবারও দেখা গেল এই পাখি।

চামচঠুঁটি পাখির দেখা পেয়ে পাখি গবেষক তারেক অনু তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘অবশেষে স্বপ্ন পাখি যা জীবনে প্রথম দেখলাম আজ, এবং তাও প্রিয়তমা পদ্মারই বুকে, রাজশাহীতেই। পাখির নাম ইউরেশীয়-চামচঠুঁটি Eurasian Spoonbill,, খুন্তে-বক নামেও চেনে অনেকে। কারণ এর চঞ্চুটি বড় একটি খুন্তের মতো দেখতে।’

তারেক অনু জানান, পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেছিলেন কাস্তেচরা আর বকের দলে ভালোমতো নজর রাখতে। কারণ এদের সঙ্গেই মাঝেমধ্যে মিশে থাকে বিরল এই পরিযায়ী চামচঠুঁটি।

আক্ষেপ করে তিনি লিখেছেন, এতবার উপকূলে যাওয়া হলো, নদীতে যাওয়া হলো; সেই বিশাল পাখি আর দেখা দেয় না। পদ্মার পাখিয়ালদের অনেককেই জানিয়েছিলাম বক আর কাস্তেচরার ঝাঁক দেখলেই ভালোমতো নজর রাখতে। কারণ তাদের মধ্যেই মিশে আছে এই খুন্তে চঞ্চুর পাখি।

তিনি আরও জানান, গত শীতে রাজশাহীর পদ্মার চরে চামচঠুঁটি ১৬টি পাখির একটি ঝাঁক দেখতে পেয়েছিলেন হাসনাত রনি ও জালাল আহমেদ। পরে আর দেখা যায়নি। এর পর চাঁপাইনবাবগঞ্জেও একটি চামচঠুঁটি পাখি দেখা গিয়েছিল।

তিনি বলেন, এই পাখিগুলো ভারতে রয়েছে। সম্ভবত ভারত থেকেই এরা উড়ে এসেছিল। মনের সুখে খুন্তে নাড়িয়ে চরে বেড়াচ্ছে দুই চামচঠুঁটি! বাংলাদেশে আর কোনো বিভাগীয় শহরের লাগোয়া স্থানে দেখা যায় না এত বিরল ও বিপন্ন পাখি। পাখির বসবাস নিশ্চিত করতে তিনি চর সংরক্ষণের নীতিমালা ও জায়গাটি সংরক্ষণের দাবি জানান।

পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক জানান, ‘চামচঠুঁটি বিশ্বব্যাপী বিপন্ন নয়। বিশ্বের অনেক দেশেই এ পাখি আছে। তবে বাংলাদেশে এর সংখ্যা খুবই কম, বিরল এবং অতি বিপন্ন। গত বছর রাজশাহীতে একদিন এবং গতকাল রোববার দেখা গেছে। আগে চামচঠুঁটি পাখি দেশে অনেক ছিল।’

তিনি জানান, ১৯৯৫ সালে ২০টির ওপরে চামচঠুঁটি পাখি উপকূলে দেখা গেছে। গত ৫ বছরে দুই-তিনটির বেশি দেখা যায়নি। এই পাখিটি বেশ বড়। ওজন সাড়ে তিন কেজির মতো। অনেক লম্বা। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় বকের চেয়েও অনেক বড় হয়। তাই দূর থেকেই দেখা যায়। আমাদের দেশের কোথাও এর বাসা দেখা যায়নি। শীতেই দু-একটি পাখি দেখা যায়। বর্ষাকালে এদের দেখা যায় না।

তিনি বলেন, কিছু এলাকায় এককালে চামচঠুঁটি পাখিকে খুন্তেবক বলত। কিন্তু এটা তো বক নয়। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবারের। চামচঠুঁটি আলাদা গোত্রের। আমাদের দেশে চামচঠুঁটি পাখির এই একটি জাতই দেখা যায়।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

পদ্মা নদীর চরে দেখা মিলেছে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির চামচঠুঁটি পাখি

আপডেট টাইম : ০৫:৫২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জানুয়ারী ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজশাহীর পদ্মা নদীর চরে দেখা মিলেছে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির চামচঠুঁটি পাখি। গত মৌসুমেও পদ্মার চরে একদিনের জন্য এ পাখির একটি ঝাঁক দেখা গিয়েছিল। পরে আর দেখা মেলেনি। এক বছর পর আবারও দেখা গেল এই পাখি।

চামচঠুঁটি পাখির দেখা পেয়ে পাখি গবেষক তারেক অনু তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘অবশেষে স্বপ্ন পাখি যা জীবনে প্রথম দেখলাম আজ, এবং তাও প্রিয়তমা পদ্মারই বুকে, রাজশাহীতেই। পাখির নাম ইউরেশীয়-চামচঠুঁটি Eurasian Spoonbill,, খুন্তে-বক নামেও চেনে অনেকে। কারণ এর চঞ্চুটি বড় একটি খুন্তের মতো দেখতে।’

তারেক অনু জানান, পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেছিলেন কাস্তেচরা আর বকের দলে ভালোমতো নজর রাখতে। কারণ এদের সঙ্গেই মাঝেমধ্যে মিশে থাকে বিরল এই পরিযায়ী চামচঠুঁটি।

আক্ষেপ করে তিনি লিখেছেন, এতবার উপকূলে যাওয়া হলো, নদীতে যাওয়া হলো; সেই বিশাল পাখি আর দেখা দেয় না। পদ্মার পাখিয়ালদের অনেককেই জানিয়েছিলাম বক আর কাস্তেচরার ঝাঁক দেখলেই ভালোমতো নজর রাখতে। কারণ তাদের মধ্যেই মিশে আছে এই খুন্তে চঞ্চুর পাখি।

তিনি আরও জানান, গত শীতে রাজশাহীর পদ্মার চরে চামচঠুঁটি ১৬টি পাখির একটি ঝাঁক দেখতে পেয়েছিলেন হাসনাত রনি ও জালাল আহমেদ। পরে আর দেখা যায়নি। এর পর চাঁপাইনবাবগঞ্জেও একটি চামচঠুঁটি পাখি দেখা গিয়েছিল।

তিনি বলেন, এই পাখিগুলো ভারতে রয়েছে। সম্ভবত ভারত থেকেই এরা উড়ে এসেছিল। মনের সুখে খুন্তে নাড়িয়ে চরে বেড়াচ্ছে দুই চামচঠুঁটি! বাংলাদেশে আর কোনো বিভাগীয় শহরের লাগোয়া স্থানে দেখা যায় না এত বিরল ও বিপন্ন পাখি। পাখির বসবাস নিশ্চিত করতে তিনি চর সংরক্ষণের নীতিমালা ও জায়গাটি সংরক্ষণের দাবি জানান।

পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক জানান, ‘চামচঠুঁটি বিশ্বব্যাপী বিপন্ন নয়। বিশ্বের অনেক দেশেই এ পাখি আছে। তবে বাংলাদেশে এর সংখ্যা খুবই কম, বিরল এবং অতি বিপন্ন। গত বছর রাজশাহীতে একদিন এবং গতকাল রোববার দেখা গেছে। আগে চামচঠুঁটি পাখি দেশে অনেক ছিল।’

তিনি জানান, ১৯৯৫ সালে ২০টির ওপরে চামচঠুঁটি পাখি উপকূলে দেখা গেছে। গত ৫ বছরে দুই-তিনটির বেশি দেখা যায়নি। এই পাখিটি বেশ বড়। ওজন সাড়ে তিন কেজির মতো। অনেক লম্বা। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় বকের চেয়েও অনেক বড় হয়। তাই দূর থেকেই দেখা যায়। আমাদের দেশের কোথাও এর বাসা দেখা যায়নি। শীতেই দু-একটি পাখি দেখা যায়। বর্ষাকালে এদের দেখা যায় না।

তিনি বলেন, কিছু এলাকায় এককালে চামচঠুঁটি পাখিকে খুন্তেবক বলত। কিন্তু এটা তো বক নয়। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবারের। চামচঠুঁটি আলাদা গোত্রের। আমাদের দেশে চামচঠুঁটি পাখির এই একটি জাতই দেখা যায়।