বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ এক সময় এখানে পাখিদের মিলনমেলা দেখা যেতো। কাকডাকা ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত, আবার বিকালের শুরু থেকে সন্ধ্যা নামার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দেখা যেতো পাখিদের উড়াউড়ি খেলা। কিন্তু দিন দিন পাখিদের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় পর্যটকরা হতাশায় ফিরে যাচ্ছেন। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের বাইক্কার বিলের মূল আকর্ষণ নানান ধরনের পাখি।
সরেজমিনে সন্ধ্যা অবধি পুরো বাইক্কার বিলে হাতেগোনা কিছু দেশীয় পরিচিত পাখি দেখা যায়। কিছু পাখি আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে। সন্ধ্যা হওয়ার পর পর বাইক্কার বিলের পাশের গাছগুলোতে অনেক পাখির দেখা মিলে। তবে এর সবই দেশি পাখি। পর্যটকদের জন্য এখানে বানানো ওয়াচ টাওয়ারে উঠে পর্যটকরা পাখি খুঁজে বেড়াচ্ছেন। বাইক্কা বিলের আশেপাশে ছবি তুলে ফিরে যাচ্ছেন।
এখানে বেড়াতে আসা পর্যটক মিঠুন পাল বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে পাখি দেখতে বাইক্কা বিলে গিয়েছিলাম। এখানে আসার উদ্দেশ্যই পাখি দেখা। এসে দেখি শুধু পানি, কোনো পাখি নেই। বছর তিনেক আগে এখানে এসে অনেক পাখি দেখেছিলাম। এবার এসে দেখলাম পাখির সংখ্যা একবারেই কম। পাখি দেখতে না পেরে অনেকটা হতাশ হয়েছি।
বাইক্কা বিলে ছবি তুলতে আসা ওয়ার্ল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার রণজিত জনি বলেন, পাখির ছবি তুলার জন্য বাইক্কা একটি ভালো জায়গা। এখানে প্রচুর পাখি পাওয়া যায়। রঙ বেরঙের পাখির ছবি তুলতে সারা দেশ থেকেই এখানে ফটোগ্রাফাররা আসেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় দিন দিন পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এতে করে পর্যটকরাও এখানে আসা কমিয়ে দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট মহল এর কারণ খুঁজে জরুরি পদক্ষেপ নেবে বলে মনে করছি।
বাইক্কা বিলে পাখি কমে যাওয়ার নানা সমস্যা তুলে ধরে শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব বলেন, হাওরের পানিতে শিকারীরা জাল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। হাওরে বাঁধ দিয়ে মেশিন লাগিয়ে বিল সেচা হয়। কারেন্ট জাল বিছিয়ে রাখা হয় পাখিদের ধরার জন্য। জালে একটি পাখি আটকা পড়লে অন্য পাখিরা ভয়ে পালিয়ে যায়। তাছাড়া বাইক্কা বিলে নৌকা নিয়ে প্রায়ই চলাচল করতে দেখা যায়। যা পাখির জন্য খুবই ভয়ানক বিষয়।
গত বছর বাইক্কা বিল চলতি শীত মৌসুমে ৩৮ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া গেছে। মোট পাখির দেখা মিলেছে ৫ হাজার ৪১৮টি। এরমধ্যে ‘পাতি তিলিহাঁস’ পাখির দেখা মিলেছে সবচেয়ে বেশি। পাখির সংখ্যায় পাতি তিলিহাঁস দেখা গেছে ১ হাজার ৫৮০টি। আর ২০১৭ সালে এই বিলে পাখি শুমারিতে ৪১ প্রজাতির ১০ হাজার ৭১৩টা পাখির দেখা মিলেছিল। ২০১৬ সালে দেখা পাওয়া গিয়েছিল ৩১ প্রজাতির ৮ হাজার ৮৩১টি পাখির।
সেইফ আওয়ার আনপ্রটেক্ট লাইফ (সউল) এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, বাইক্কা বিলে আসা পরিযায়ী পাখিরা একটি নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বাইক্কা বিলকে বেছে নেয়। বাইক্কা বিল অভায়শ্রমের কচুরিপানা, নলখাগড়া ইত্যাদি হচ্ছে পাখিদের খাবার ও আশ্রয়স্থল। পাখিরা এগুলো খায় এখানেই ঘুমায়। কিন্তু বছর কয়েক ধরে দেখা যাচ্ছে কিছুদিন পর পর বিল পরিষ্কারের নামে এগুলোকে অপসারণ করা হয়।
খাদ্য ও বাসস্থানের সংকটের কারণেই মূলত পাখিরা এখানে আসা কমিয়ে দিয়েছে। বাইক্কা বিলের দুই পাশে যেভাবে ফিশারি ও ঘরবাড়ি নির্মাণ হচ্ছে এতে করে পাখিরা ভীত হচ্ছে। আর এ কারণে দিন দিন এখানে পাখির আনাগোনা কমে যাচ্ছে।